সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

অতীতে গ্রাম বাংলায় কুসংস্কার

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

অতীতে গ্রাম বাংলায় কুসংস্কার

স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে ভেবেছিলায় গ্রামে জীবনযাপনের কিছু কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস নিয়ে লিখব। তবে প্রায় আশির কোঠায় এসে অনেক ঘটনা ঝাপসা হয়ে গেছে। আবছা, উজ্জ্বল এ দুয়ের টানাপোড়নে তেমন নির্ভরশীল নয় এমন সুত্র থেকে তত্ত্ব, উপাত্ত সামনাসামনি আলোচনার মাধ্যমে সংগ্রহ বা আমার জানা তথ্যের সাথে যথার্থ কিনা তা মিলিয়ে দেখতে হয়েছে। আমার দু বছরের ছোট বোন সবুতারা (আদরের চিনি) যে আমার সাথেই থাকে এ ক্ষেত্রে প্রচুর সহায়তা করছে। তার পরেও শতভাগ নির্ভুল হওয়া সম্ভব হয়নি। ভুত, পেত্নি, দাগী বৃক্ষ, নদী, জলাশয়- এসব নিয়ে অসংখ্য লোক কাহিনী, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, যেখানে কিচ্ছা কাহিনী, পুথি পাঠ, কবিগান, লোকজ কাহিনীভিত্তিক যাত্রা, ঘেঁটু গান চিত্ত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এবং সেগুলো থেকে শাখা প্রশাখা মেলে এগুলো প্রসারিত হতো।

চাঁদনী রাতে চাঁদর বা পাটির উপর বসে কিংবা কাঠের তৈরি ছোট আসনে (খাটে ) বসে শুনতাম। বড় ভাই চাকুরি স্থলে অবস্থান করলেই এমন সুযোগ নিতে পারতাম। আমার প্রিয় এবং দুর্দান্ত সাহসী, ডাকসাইটে বড় বোন খেলাবুকে সাথে থাকতেই হবে- এটাই মায়ের এক মাত্র শর্ত থাকতো। আসরে কবিয়াল, বাউলা গানের গায়ক কথায়, গানে,নাচের মুদ্রায় অঙ্গিভঙ্গি করে অনের কিছুর মধ্যে বিভিন্ন কাহিনী বয়ানের মধ্য দিয়ে দিবা-রাত্রির কোন প্রহর গুলো মানুষের জন্য অশুভ তার বর্ণনা দিতেন।

ভর নিশা বা রাত নিশীথ, পূর্ব আকাশে সূর্য উদয় হওয়ার কিছুক্ষন পূর্বে দিগন্ত রেখা লালাভ রঙ ধারনের পূর্ব পর্যন্ত (ফজরের নামাজের শেষ থেকে সূর্য উদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ) সময়, ভর দুপুর, এবং সূর্য অস্ত যায় যায় সময় ঘরের বাইরে থাকা সমীচীন নয়। এ সময়গুলোতে ভুত-প্রেত , দৈত্য-দান, শয়তান, দুষ্ট জীন বিভিন্ন রূপ ধারন করে মানুষের ক্ষতি সাধনে সচেষ্ট থাকে। কিছু বৃক্ষ, কবরস্থান, শ্মশান, জন্তু-জানোয়ার আ রকম নির্জন সময়ে এড়িয়ে চলতে ময়-মুরুব্বিরা উপদেশ দিতেন। সেওরা, তেতুল, হিজল আবং আরও বেশকিছু বৃক্ষ এ নিষেধের আওতাভুক্ত ছিল। তবে, মজার ব্যাপার ছিল যা বুঝতে সময় লেগেছে তাহলো কিছু অতি বিচক্ষণ সুযোগ সন্ধানী নারী পুরুষ যারা অসম বা অবৈধ সম্পর্ক কিংবা পরকীয়ায় লিপ্ত তারা এ নিষেধাজ্ঞা জুতসইভাবে কাজে লাগাত।

সন্ধ্যে হবে হবে সময়ে আমরা খেলা সেরে বাড়ির দিকে ছুটতাম। দেরি হলে ঠিকই দেখতাম নিকটের শাঁওড়া গাছের ডাল বেশ জোরে দুলসে অন্য গাছের তুলনায়। সাদা কাপড়ে কেও যেন দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভূত মনে করে ভোঁ দৌড় দিতাম। নোয়াপারার গরুর হাট যেখানটায় সেখানে মাসব্যাপী হেমন্ত মেলা বসত। মেলা থেকে দেরি হলে মাদারগরার বসনিরমার তেঁতুল বাগ পার হতে হতো। সে এক মহাআতঙ্কের ব্যাপার ছিল। চোখ মুখ বুজে এক দমে দৌড়ে পার হতাম। পেছন ফিরে তাকানোর কথা চিন্তাও করতাম না। মুরুব্বিদের কড়া নিষেধ ছিল। আর একটি অভিজ্ঞতা বয়ান করে এ পর্ব শেষ করার আশা রাখি। নয়াবাড়ি পার হয়ে আমাদের বাড়ি যাওয়ার একটি সরু রাস্তা আছে। পারিবারিক কবরস্থান, বাঁশ জাড়ের সারি, বাবার পাতা বাঘ ধরার কোয়াড় পার হয়ে খুবই সরু দু বাঁশের সাঁকো অতিক্রম করে যেতে হতো। কেন জানি একবার সন্ধ্যে বেলা বাড়ী ফিরছিলাম এ রাস্তা দিয়ে।

আমার সামনে হুড়মুড় করে একটি গরু পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি ভয়ে লাফ দিয়ে সাঁকো পার হতে গিয়ে পরে যাই। জোঁক ভর্তি ডোবায় পরে চিৎকার করি প্রাণপনে। স্বর বেরিয়েছিল কিনা মনে নেই তবে বাড়ীর মুনি ( কাজের লোক সাধারণত গরিব আত্মীয় বা প্রতিবেশী হতেন) লোক্কা (বাঁশ দিয়ে তৈরি মশাল ) হাতে ত্বরায় হাজির। প্রথমের কালো বাছুরটিকে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। পরে আমাকে টেনে তোলেন এবং বলতে থাকেন বাছুরটি সবসময় আমাকে পছন্দ করে পাহারা দিয়ে লুকিয়ে পিছু পিছু হাটে। এতে খুব মজা পায়। তোমাকে ঠিক চিনতে পেরে বাঁশ ঝাড়ের আড়াল থেকে বের হয়েছে। আমি তো আক্ষেল গুড়ুম! কি মনে করেছিলাম আর কি দেখলাম! আসলেই বাছুরটি আমার খুব প্রিয় ছিল। আমাকে দেখলেই গাঁ ঘেসে দাঁড়াত। এ ঘটনার পর থেকে আমার ভুতের ভয় কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে, ময় মুরুব্বিদের ভয় দেখানো গল্প, কল্পকাহিনী গানে, গল্পে, পুথি পাঠ থেকে শুনেশুনে মনে যে ভীতি জন্মেছিল তা আজ অব্দি কাটেনি পুরোপুরি।

গ্রাম বাংলায় কুসন্সকার, আধিভৌতিক বিষয় অধিকাংশই হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে প্রায় একই ভাবে পালন করত। কলেরা, গুটি বসন্ত ইত্তোকার মহাব্যাধি যাতে গ্রামে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য পুজা পার্বণ, শিরনি বিতরন, মন্ত্র পরা জল, পানিপরা , ঝাড়পুক, এ সবে কিছুতা সার্বজনীনতা থাকলেওও ধর্মীয় কুসংস্কারের কারনে ভিন্নতাও ছিল।

সম্প্রীতি আমাদের ছোট বেলায়ন(১৯৫০ সময়কালে) প্রাণ ভরে উপভোগ করেছি। হিন্দু বাড়ীতে ওলা, বসন্ত পুজার মন্ডা , কদমা এসবে ভাগ বসাতাম ঠিকই। হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা কলা পাতা নিয়ে বসে যেত গাওয়ালের শিন্নির ভাগ নিতে। ধর্ম মত নির্বিশেষে প্রকৃতির সাথে সম্পকৃত কিছু বিষয়ে সমভাবে কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ ছিল দু ধর্মাবলম্বী লোকজন।

Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8704 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1636 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1401 বার পঠিত)

আত্মঅহমিকা
আত্মঅহমিকা

(1135 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.