মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করায় গত সোমবার মিশিগানের রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেসম্যান পল মিশেল পক্ষ ত্যাগ করেন। তিনি এখন নিজেকে স্বতন্ত্র কংগ্রেসম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প এখন পর্যন্ত তার অনড় অবস্থানেই রয়েছেন। ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধিদের ভোটে হেরে যাওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতি স্বীকার করেননি। গত সোমবার মিশিগানের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান পল মিশেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজের পরাজয় মেনে না নেয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, আমি এখন আর রিপাবলিকান নই। এখন থেকে আমি স্বতন্ত্র কংগ্রেসম্যান। তিনি সিএনএন এর সাথে আলোচনাকালে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেয়ার যে চেষ্টা করছেন তাতে আমি হতভম্ব হয়েছি। ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানদের এ অগণতান্ত্রিক ও আমলাতান্ত্রিক নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে দলত্যাগ করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না। তিনি বলেন, আমি এ সম্পর্কে হাউজ ক্লার্ককে অবহিত করেছি যে এখন থেকে আমাকে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের পরিবর্তে যাতে একজন স্বতন্ত্র কংগ্রেসম্যান হিসেবে লেখা হয়। মিশেল আরও বলেন আমি রিপাবলিকান পার্টি এসোসিয়েশন, জাতীয় ও ষ্টেট পর্যায়ের সকলকে জানিয়ে দিয়েছি যে এখন থেকে আমি একজন স্বতন্ত্র কংগ্রেসম্যান। সিএনএনকে তিনি বলেন, প্রথমে একটি দলকে আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে হবে, সংবিধানের পক্ষে কথা বলতে হবে। কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পক্ষে নয়।
এদিকে গত সোমবার ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট দিয়ে জো বাইডেনকে সাংবিধানিকভাবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার পরও অনেক রিপাবলিকান সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি। এমনকি সিনেট মেজরিটি লিডার মিটচ ম্যাককনেল মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন জো বাইডেনকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দান করতে। সর্বপ্রথম গত সোমবার দ্বিতীয় প্রভাবশালী রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত সিনেট মেজরিটি গ্রুপ হুইপ সাউথ ডাকোটার সিনেটর জন থিউন বলেন, আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি যে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে জনগণের মনোভাব কি! কিন্তু অনেক কিছুর পরও এক পর্যায়ে আমাদেরকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে এবং আমি মনে করি ইলেকটোরাল কলেজ যখন সমস্যার সমাধান করেছে তখন আমাদের উচিত হবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। মন্টানার রিপাবলিকান সিনেটর রয় ব্লান্ট বলেছেন, এখন এটি পরিস্কার যে জো বাইডেনই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। চতুর্থ প্রভাবশালী রিপাবলিকান ওহায়োর সিনেটর রাব পোটম্যান বলেন, ইলেকটোরাল কলেজের রায় চূড়ান্ত। জে বাইডেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান সিনেটর স্যালি মুর ক্যাপিটিও বলেন, এখন সময় হচ্ছে পৃষ্ঠা উল্টে ফেলে একটি নতুন প্রশাসনের কাজ শুরু করা। সাউথ ডাকোটার রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস বলেন, কোন সন্দেহ নেই যে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনার পর জো বাইডেনই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সবচেয়ে প্রভাবশালী রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত সিনেট মেজরিটি লিডার মিটচ ম্যাককনেল একজন কট্ট ট্রাম্প সমর্থক। তিনি তার সুর নরম করেছেন ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের একদিন পর গত মঙ্গলবার। এতদিন তিনি ট্রাম্পের সুরের সাথে সুর মিলিয়ে বলেছেন যে নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত তাকে সিনেট ফ্লোরে বলতে হয়েছে, সোমবার আমাদের দেশ অফিসিয়ালী একজন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেয়েছে।” তিনি বলেন, “ইলেকটোরাল কলেজ বার্তা দিয়ে গেছে। আজ আমি নিবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে চাই। সিনেটর ম্যাককনেল বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পররাষ্ট্র নীতি, বিচারপতিদের নিয়োগে যে সাহসিকতা প্রদর্শন করেছেন সেজন্য তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ধন্যবাদ পেতে পারেন। একই সাথে তিনি নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমি আমাদের সহকর্মী ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কামালা হারিসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সামনে হয়ত আমাদের মাঝে মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু সকল আমেরিকান গর্ব করতে পারে যে আজ আমাদের জাতি প্রথমবারের মত একজন নবনির্বাচিত নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেয়েছে।
মিটচ ম্যাককনেল আরও বলেন, বহু লক্ষ মানুষ নির্বাচনে ভিন্ন ফলাফল আশা করেছিল। কিন্তু আমাদের প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করে বলেছে যে আগামী ২০ জানুয়ারী কে শপথ গ্রহণ করবেন। ইলেকটোরাল কলেজ বার্তা দিয়ে গেছে। সোমবার ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের ভোটের একদিন পর জো বাইডেনকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি। কিন্তু এরপরও কিছু কিছু রিপাবলিকান বলছে যে তারা এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে চান। রিপাবলিকান হাউজের একটি ক্ষুদ্র অংশ বলেন, ৬ জানুয়ারী হাউজ ফ্লোরে যখন ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধিদের ভোট গণনা করা হবে তখন তারা ট্রাম্পের পক্ষ থেকে একটি ঝুঁকি গ্রহণ করবেন। এছাড়া কিছু সংখ্যক রিপাবলিকান সিনেটর সোমবার বাইডেনকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, আইনি লড়াইয়ের বাদবাকি অংশটুকু নিয়ে আমরা কতদূর যেতে পারি। তবে পথ খুই সরু। টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন কর্নিন তার সহকর্মী সিনেটরদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা অসাংবিধানিক হবে। কারণ জো বাইডেন এখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হবেন। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিটচ ম্যাককনেল নির্বাচনের পর প্রথমবার জো বাইডেনকে টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানান।
ইলেক্টোরাল ভোটেও নিশ্চিত হলো বাইডেনের জয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটেও জয়ের পর জো বাইডেন বলেছেন ‘জনগণের ইচ্ছের জয় হয়েছে’। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ফলও গ্রহণ করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৩২ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের বিপরীতে মিস্টার বাইডেন ৩০৬ ভোটে জয় নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুযায়ী ভোটাররা আসলে ব্যালটে ভোট দিয়ে ‘ইলেক্টরস’ নির্বাচিত করে যারা নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকেন। সাধারণত ইলেক্টররা খুব বেশি আলোচনায় আসেন না কিন্তু এবার যেহেতু নির্বাচনের ফল নিয়ে মিস্টার ট্রাম্প ক্রমাগত প্রশ্ন তোলা ও আইনি পদক্ষেপসহ নানাভাবে ফল পাল্টানোর চেষ্টা করেছেন মামলা করার মাধ্যমে, সেহেতু প্রতি রাজ্যের ভোটের দিকেই নজর ছিলো সবার। গত ১৪ ডিসেম্বর মূলত ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৫ জন ইলেক্টরস এর মাধ্যমেই বাইডেনের ২৭০ ভোট নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো। মিশিগান ও জর্জিয়াসহ কয়েকটি রাজ্যে কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ আয়োজন করা হয়েছিলো। মিশিগানে সহিংসতার আশংকায় আইনসভার অফিসগুলো বন্ধ ছিলো।
পরবর্তী পদক্ষেপে যা হবে : ভোটের ফল ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হবে এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে আগামী ৬ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক গণনা হবে। ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এটাই আগামী বিশে জানুয়ারি মিস্টার বাইডেনের শপথ নেয়ার পথ তৈরি করবে। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন যে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে মিস্টার বাইডেন জয়ী হলে তিনি জানুয়ারিতে অফিস ছেড়ে যাবেন। যদিও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তিনি ক্রমাগতভাবে করেই যাচ্ছেন, কিন্তু তার কোন প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি।
ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট : ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ‘ইলেকটরস’ বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়, এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন। কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেটের ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সেনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। সবচেয়ে বড় ছয়টি স্টেট হলো ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), টেক্সাস (৩৮), নিউইয়র্ক (২৯), ফ্লোরিডা (২৯), ইলিনয় (২০) এবং পেনসিলভেনিয়া (২০)।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh