| বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জীবন ও জীবিকার অন্বেষায় মানুষ ছুটে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুদ্ধ বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুযোর্গ এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নিপীড়ন নির্যাতনের কারণেও অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটিতে। দেশান্তরী প্রক্রিয়ায় অমসৃন এ পথ পেরিয়ে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেও থামেনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের মাত্রা। অভিবাসীদের মাঝে একটি শ্রেনী আছেন যারা বৈধ বা নিয়মান্ত্রিকভাবে পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। এদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠিই বংশানুক্রমে অভিবাসন প্রাপ্ত। অপর একটি অংশ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা বা এমনিতেই থেকে গেছেন।
আবার অনেকে বৈধতা পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও হয়েছেন ব্যর্থ। অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান এমন সংখ্যা এক কোটির অধিক। অবশ্য কিছু সংখ্যক আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পক্ষেই আছেন ।কারণ যে সীমান্ত দিয়ে একবার তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, সেই একই সীমান্ত পথে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে সাহসী হন না। তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন তখন তারা ছিলেন তরুণ এবং তারা উদ্যমী ছিলেন, এখন তাদের দেহে বয়সের ভার, তারা পরিণত বয়স্ক এবং তারুণ্যের সাহস ও উদ্যম অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজে নিজেদের শ্রম নিয়োগ করতে পারবেন।
দেশে ফিরে তারা কি করবেন, সেই অনিশ্চয়তা তাদের পিছনে আটকে রাখে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধড়পাকড় বৃদ্ধি এবং তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া ও ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখার মত উদ্যোগে তারা সার্বক্ষণিক ভীতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেছে এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এদেশে আর নয়, এখন দেশে ফেরার সময় হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র এ্যামেনেষ্টি বা ঢালাওভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে অনেক অবৈধ অভিবাসীকে। কালক্রমে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবস্থান শক্ত করে মিশে গেছেন মূল স্রোতধারার সাথে। সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়তই বাড়ছে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকার এসব অভিবাসীকে এ্যামনেস্টি বা বৈধতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বারবার তা থেমে গেছে নানা কারণে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ইউএস কংগ্রেসে বয়ে গেছে বিতর্কের ঝড়। কিন্তু ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানি কোন সরকারের আমলেই আলোর মুখ দেখেনি সমস্যাটি। অনেক সময় সংস্কারের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও কার্যকর হয়নি। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের আমলে সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সকল রেকর্ড। অবৈধ অভিবাসীদের চাপে নিউইয়র্ক সহ ইমিগ্র্যান্টবান্ধব রাজ্যগুলোকে বহন করতে হচ্ছে প্রচন্ড চাপ।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বাইডেন প্রশাসন। ক্রমেই বাড়ছে এই সমস্যা। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী সহ অন্যান্য ইমিগ্র্যান্টদের ক্ষেত্রে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। এসব অভিবাসীদের অনেকেই এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নিজেদের ভাগ্য নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধতা পাওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে এদের অনেকেই ফিরে যেতে শুরু করেছেন নিজ দেশে। বিশেষ কওে মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকা থেকে আগত অভিবাসীরা রয়েছেন এই তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে এসব অবৈধ অভিবাসীদের অনেকেই ব্যবসায় বাণিজ্য ও কাজ করে মালিক হয়েছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির। তারা যুক্তরাষ্ট্রে যে আয় করেছেন, তা দিয়ে একটি ছোট বাড়ি তৈরি করেছেন এবং ব্যবসায়েও কিছু অর্থ ব্যয় করেছেন, যাতে তাদের অর্জিত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।
তাদের অনেকের সন্তান যারা জন্মগতভাবে আমেরিকান নাগরিক তাদেরকে ফেলেই বাবা-মা বাব দাদা-দাদীকে ছাড়তে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের সবাই গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কর্মে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা তাদের জন্মের দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেই ভালোবাসতে শিখেছে। বিষয়টি হৃদয়বিদারক হলেও তা কঠিন বাস্তবতার অংশমাত্র। মানবিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের উচিত এসব অবৈধ অভিবাসীকে আইনি প্রক্রিয়ায় বৈধতার সুযোগ প্রদান করা। কেননা যুক্তরাষ্ট্রে উন্নয়নে এসব অভিবাসীর শ্রম প্রতিটি পলে পলে সম্পৃক্ত। তাদের এ দাবিতে অবশ্যই নায্যতার বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষ। আমরা মনে করি অভিবাসন নীতিতে সংস্কার আনয়ন অত্যন্ত জরুরী।
Posted ৩:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh