ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে উদার হস্তে সহায়তা করতে গিয়ে কমালা হ্যারিস তথা ডেমোক্রেট দলকে দারুণ বিপাকে ফেলেছেন। সম্প্রতি আক্ষেপের সুরে বলেছেন যে তার মত এর ইসরায়েলকে এমন দেদারসে সামরিক সরঞ্জামাদি, অর্থ সাহায্য এবং শর্তহীন সমর্থন ইতিপূর্বে কেউ দেয়নি। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধের প্রতি সম্মান, সম্মতি না দেখিয়ে সামান্যতম তোয়াক্কা না করে বৈরুতে লাগাতার বোমা বর্ষণ করছেন। একবছর পূর্বে হামাস ইসরায়েলের ১২০০ বাসিন্দাকে অতর্কিত হামলা করে হত্যা করেছিল। প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স গাজা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। ৪২,০০০ গাজাবাসিকে হত্যা করা হয়েছে।
গাজার উত্তর অংশে ৪০০,০০০ মানুষ আটকা পড়েছে , এদের কোথাও যাওয়ার স্থান নেই। এতেই ইসরায়েল ক্ষ্যান্ত হয়নি, লেবাননের রাজধানী প্র্যাচ্যের অন্যতম সুন্দর নগরী বৈরুতের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকাসমূহে বোমা ফেলে এবং হিসবুল্লা নেতাদের টার্গেট করে নিখুঁত লক্ষ্যবস্তুতে রকেট হামলা করে। এহেন বৈরুতে হামলায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১.২ মিলিয়ন আশ্রয়চ্যুত হয়েছে। গাজায় নিহত হয়েছে বিয়াল্লিশ হাজারেরও বেশী। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কড়া সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, লেবাননের অধিবাসীরা হেজবুল্লাহ বাহিনীকে বিতাড়িত না করলে দেশ্যটির পরিণতি হবে গাজার মত। ধ্বংসপ্রাপ্ত এক ভুতুড়ে নগরীতে পর্যবসিত হবে ভুমধ্যসাগার ঘেঁষা ঐতিহাসিক এ জনপদ। লেবাননের জনসাধারণ নিরুপায়। ইসরায়েল ১৯৮২ সালে লেবানন আক্রমণ করেছিল যার ফলশ্রুতিতে ইরান এবং সিরিয়ার সমর্থন পুষ্ট হিজবুল্লাহ দেশটির দক্ষিণ এলাকায় চলে যায়।
উল্লেখ্য যে লেবাননে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত গৃহ যুদ্ধ চলেছিল। লেখক ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সময়ে লেবাননে থাকার সময় অনেক লেনানিজদের বলতে শুনেছেন যে, ইসরায়েল যখন এতোই শক্তিধর, তারা ইরান এবং সিরিয়া আক্রমন করলেই পারে কারণ এদের জন্যই নিকট অতীতের মত বর্তমানেও লেবাননের যত দূর্গতি।
মূলত শিয়া, সুন্নি , মেরনাইট ক্রিস্টিয়ান অধ্যুষিত এ দেশটির ৫ মিলিয়নের ও বেশী জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমান ৫৪.৫৮% , ক্রিস্টিয়ান ৪০%, দ্রুজ ৫.৭৪% এবং অন্যান্যরা ২.৩৪%। পাঠকদের মনে থাকতে পারে, ষাটের দশকে জর্ডানের বাদশাহ তার পাকিস্তানি প্যালেস গার্ডদের ব্যবহার করে শিবিরে বসবাসকারী বহিষ্কৃত প্যালেস্টাইনি শরণার্থীদের কচু কাটা করেছিলেন। অনেকে পালিয়ে লেবাননে চলে যায়। সে সময় থেকে আজ অব্দি লেবাননে প্যালেস্তাইনি উদ্বাস্তু সংখ্যা ৪৪৯,৯৫৭তে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে এত বিরাট সংখ্যক প্যালেস্তিনি ছাড়াও ১ লক্ষ ইরাকী , ১,১০০,০০০ সিরিয়ান এবং ৪০০০ সুদানী রিফুজি বাস করছে।
লেবানন দীর্ঘদিন যাবত দুর্ভাগ্য প্রপীড়িত একটি দেশ। লেবানন ফ্রেঞ্চ কলোনিয়ান স্ট্যাটাস থেকে মুক্তি পায় ১৭ এপ্রিল, ১৯৪৬ সালে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত কার্যত প্যালেস্তানিয়ান লিবারেশন অরগানাইজেশন দেশটি শাসন করেছে। ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সময়ে ইসরায়েল সাউথ লেবানন দখল করে নেয় যদিও ২০০০ সালের ২৪সে মে তারিখে ইসরায়েলি সেনারা বৈরুত ত্যাগ করে। তারা দেশটিকে সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল করে দেয়। সিরিয়ান সৈন্য বাহিনী লেবানন ত্যাগ করে ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখে।
২০১৯ সালের এক সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকায় ২,০৯৭,৬৪২ সংখ্যক (যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ০.৬৩৯%) আরব আমেরিকান বসবাস করে। এদের মধ্যে মুসলমান ২৪%। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে ও ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি, এবং মিসিগান ষ্টেটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব আমেরিকান বাস করে। সাধারণত ডেমোক্রেটদের বেশীর ভাগ ভোট দিলে ও অক্টোবর ৩০, ২০২৩ তারিখের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের প্রতি যে সমথন ছিল তা ৫৯% থেকে কমে বর্তমানে ১৭% তে নেমে এসেছে।
ইস্রায়েল-হামাস যুদ্ধে বাইডেনের ভূমিকা অপছন্দ হওয়ার কারণেই এমন হয়েছে অনুমান কড়া হয়। মিসিগানের মত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে কমালা হ্যারিসের জন্য জেতা খুবই জরুরী। উল্লেখ্ করা যায় যে ট্র্যাম্প ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই জেরুজালেমে ইসরায়েলের রাজধানী স্থানান্তরকে শুধু সমর্থনই করেন নি, মোটেও বিলম্ব না করে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বেসি সেখানে সরিয়ে আনেন। তাছাড়া, বেশ কয়টি আরব-আফ্রিকান মুসলিম দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিয়ায় ভিসা দেয়া রহিত করেন। তা সত্ত্বেও ২০২৪ নির্বাচনের প্রাক্বালে মনে হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব-আমেরিকান মূল দু দলের প্রার্থীদের ভোট না দিয়ে আবার তৃতীয় কোন দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং কমালা হ্যারিস। ইহুদিদের ভোট ও ভাগাভাগি হলে কমালা হ্যারিস বড়ো ধরনের বিপর্যয়ে পরবেন।
Posted ১২:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh