ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
(২) : এ শিরোনামে গতবছর (২০২৩) মে মাসে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ আমার একটি লেখা প্রকাশ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে তাঁকে কেন্দ্র করে আবার লিখছি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জো বাইডেন-ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে শারীরিকভাবে দুর্বল অশীতিপর বাইডেন আক্রমণাত্মক যুক্তি দিয়ে ট্রাম্পকে নাস্তানাবুদ করতে পারেননি যে কারণে অনেকে তাঁকে নাকচ করে বিকল্প প্রার্থী দিতে বলছেন। এ পরিস্থিতিতে বাইডেন পরিবার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস তাঁর প্রার্থিতার পক্ষে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। এ প্রসঙ্গেই কামালা হ্যারিস ভূমিকার অবতারণা ।
রিপাবলিকান দলে অনেক হোমড়া-চোমড়াই নিকট অতীতে বলেছিলেন যে, অনূর্ধ ষাট কামালা হ্যারিসকে ভোটে জেতানো মানে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার রাস্তা সুগম করে দেওয়া। জো বাইডেন বেশী দিন বাঁচবেন এমন আশা করা বাতুলতা মাত্র, এমন একটি ধারনা ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা এখন আরও জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিকি হ্যালি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছিলেন, I think we can be all clear and say, with a matter of fact, that if you vote for Joe Biden, you are really counting on a President Harris. খোদার উপর খোদকারী করার মত সূর্যে নিকি হ্যালি আরও বলেন, জো বাইডেন ৮৬ বছরে পদার্পণের পূর্বেই লোকান্তরিত হবেন। রিপাবলিকান পার্টির আরেক শীর্ষ নেতা সিনেটর টেড ক্রুজ ও একই মত প্রকাশ করেছেন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, প্রাজ্ঞ, রাজনীতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং কুশলী ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস প্রয়োজনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে আইনানুগভাবে উপযুক্ত এ কথা তারা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না ।
জুন ২৭, ২০২৪ তারিখটি ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর অগণিত সমর্থকদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার মত একটি দিন। অত্যন্ত দুর্বল কণ্ঠে, সারিকভাবে বিধ্বস্ত একজন পরীক্ষিত বিতার্কিক শোচনীয়ভাবে ট্রাম্পের মিথ্যাচারের সামনে কেমন যেন মিইয়ে গিয়েছিলেন। ট্রাম্পকে অতীতে তিনি বেশ ফলপ্রসূ ভাবে কাবু করেছেন, আবার ও বক্তব্যের জন্য পয়েন্টগুলো যথাযথ ছিল। কিন্তু আক্রমণাত্মক কায়দা, কাবু করার মত বাচনভঙ্গির অনুপস্থিতিতে জো বাইডেন ট্রাম্পের মিথ্যার বেসাতি এবং উগ্র আক্রমণের সামনে মোটেও সুবিধে করতে পারেননি বাইডেন। এর ফলশ্রুতিতে যারা বরাবর মুক্তহস্তে তহবিল সংস্থান দান করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির সবসময়ের সমর্থক, তারা বাইডেনের পক্ষে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত প্রার্থী ট্রাম্পকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ, সংশয়ে ভুগছেন। বিতর্কের দিন কয়েক আগেও ও জনমত বাছাইয়ে প্রায় সমান সমান পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও বাইডেন পিছিয়ে পরবেন দ্রুত এমন সম্ভাবনার কথা অনেকেই বলছেন । ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশন মাসের মত বাকি থাকতে ভোটার, নীতি নির্ধারক , নেতা এদের অনেকের মনে প্রশ্নর উদয় হয়েছে সঙ্গতভাবেই বাইডেনের বিকল্প হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া যায়; এহেন পদক্ষেপ সঙ্গত হবে কিনা, বিকল্প প্রার্থী দিয়ে ট্রাম্পকে পরাস্ত করা যাবে কিনা ইত্যাদি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ বিলম্বিত প্রহরে যাদের নাম নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মিশিগানের গভর্নর গ্রেটচেন হুইটম্যান (Gretchen Whitman), পেনসালভানিয়ার গভর্নর জস সেপিরু (Josh Shapiro) এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিওসম (Gavin Newsom)।
মিশেল ওবামা’র নাম ও ইদানিং শোনা যাচ্ছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির কেউ কেউ চান জো বাইডেন জোট তাড়াতাড়ি তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন দলের জন্য তত মঙ্গল। ভাইস প্রেসিডেন্ট জনমত জরিপে ট্রাম্পকে ছুঁইছুঁই করছেন। বিকল্প হিসেবে অন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের কেউই তাঁর ধারে কাছে ও নেই। মিশেল অবামা প্রার্থী হলে ভিন্ন কথা। রয়টার্স বলছে, ৫৯ বছর বয়স্ক হ্যারিসকে একনামে সবাই চেনেন; বাগ্মী হিসেবে দারুণ তুখোড়, সরকার পরিচালনায় অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কুশলতার সাথে দৃঢ় প্রত্যয়ে তিনি ক্রিতিকাল ইস্যুগুলো পরিষ্কার , সহজ সরলভাবে জনসমক্ষে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরতে পারবেন। বাইডেনের ক্যাম্পেইন স্টাফ, অবকাঠামো এবং ফান্ড বৈধ ভাবেই তাঁর হবে। দলের ভেতরকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দেওয়া তাঁর পক্ষে তেমন সমস্যাসঙ্কুল হবে বলে মনে হয় না। কামালা হ্যারিসের সমালোচকরা বলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট, যা অনেক আমেরিকানের ধাঁতে সয় না। তাছাড়া তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রগতিশীল কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে লালিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বংশগতভাবে তাঁর রেসিয়াল শেকড় কৃষ্ণাঙ্গ এবং ভারতীয়দের মধ্যে প্রোথিত। নানা গুণে এই সুশিক্ষিত, অভিজ্ঞ মহিলা গুণান্বিত হলেও কামালা হ্যারিস সকল শ্রেণীর ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন, তা এ সময়ে বলা মুশকিল ।
Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh