ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
নারীবিদ্বেষকারী দেশ ও সমাজ হিসেবে আফগানিস্তান বিশ্বে একটি ক্লাসিক উদাহরণ। তবে, দেশটিতে যখনি মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তখনি তারা প্রশংসনীয়ভাবে প্রমাণ করেছে যে মেধায়, কর্মদক্ষতায় , সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নেত্বত্ব প্রদানে তারা পুরুষদের চেয়ে কম পারঙ্গম নয়।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৯২০ সালে বাদশাহ আমানউল্লাহ দেশটিতে আধুধিনকতার ছোঁয়া দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। পাশ্চ্যাতের ধাঁচে নারী শিক্ষাদানে ব্রতী হলে নারী জাগরণের সুবাতাস বইতে শুরু করে। তবে, তা ম্রিয়মান হতে বেশী সময় লাগেনি। এ করুণ পরিনতির জন্য ১৯২৮ সালে কোহিস্তান কেন্দ্রিক একটি চরম ধর্মান্ধ গোষ্ঠি হাবিবুল্লাহ খালখানির নেতৃত্বে কাবুল আক্রমণ দায়ী। চরম মনোকষ্ট নিয়ে বাদশাহ স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। সেইসাথে নারী শিক্ষা ও জাগরণের একটি অত্যুজ্জল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।
রাশিয়ার মদদে কমুনিস্ট শাসন নারী শিক্ষায় তেমন অবদান রাখতে পারেনি। মুজাহেদীন বাহিনী দশ বছর যুদ্ধ করে রাশিয়ান আগ্রাসন রোধ করতে সক্ষম হলেও নিজেদের মধ্যে চিরাচরিত মানসিকতায় বিরোধে জডিয়ে পরলে আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নমূলক কোন কাজে হাত দিতে পারেনি। তালিবানরা দেশটির বেশীর ভাগ অংশ দখল করে নেয়। এ সময়টি ছিলো নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে তমসাবৃত অধ্যায়। তাদের প্রথম দফার(১৯৯৬ -২০০১) শেষ এবং দ্বিতীয় দফার(১৫আগষ্ট ২০২১) শুরুর মধ্যবর্তী সময়টি ছিল আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা এবং প্রগতির স্বর্ণময় দুই দশক।
ঐ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভর্তির সংখ্যা, উপস্হিতির হার ছেলেদের সংখ্যাকে ছাডিয়ে যায়। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের ফলশ্রুতিতে নারীদের অতীতের মত গৃহ অভ্যন্তরে আবদ্ধ করে ফেলা হয়। মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষা এবং বড়জোর দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পারবে এমন ব্যবস্হা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করে দেয়া হয়। ক্ষমতায় আসার প্রাক্ষালে তালিবান শাসকগোষ্ঠি কথা দিয়েছিলো যে নারীশিক্ষা উন্মুক্ত করে দেয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
নারী বিদ্বেষের চরম প্রকাশ সম্প্রতি ঘটেছে দিল্লীর আফগান দূতাবাসে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমীর খান মোত্তাকির এক প্রেস কনফারেন্সে। কোন মহিলা সাংবাদিক সেখানে আমন্ত্রিত হননি। নারী সাংবাদিক , নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা, বিরোধী দলের নেতাসকল, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদমুখর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম সম্মেলনের আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাধ্য হন।
নিরাপত্তার খাতিরে আফগানিস্তানের দূতাবাসে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন যে তাড়াহুড়োর জন্য প্রথম সম্মেলনে সীমিত সংখ্যক সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দায়সারাগোছের ক্ষমা প্রার্থনা ও করা হয় যাতে সফরে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ভারত তালিবান সরকারকে সরাসরি স্বীকৃতি না দিলেও রাশিয়ার মধ্যস্হতায় ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। আমীর খান মোত্তাকির রাশিয়া সফরের এক পর্য্যায়ে সেখান থেকে পরামর্শ নিয়েই ভারত সফরে আসেন। এসেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জয়শঙ্করের সাথে মোলাকাত করেন এবং প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন যে কাপলে বন্ধ করে দেয়া ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় খোলে দেয়া হবে। মানবিক সহায়তা চালু রাখার প্রতিশ্রুতিও আদায় করে নেন। প্রতিদানে ভারত তালিবান সরকারকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিবে এবং সিকিউরিটি ও কৌশলগত সুবিধে প্রদানে বাধ্য থাকবে।
মহিলা সাংবাদিকদের ১ম সম্মেলনে ঢুকতে না দেয়ায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী কঠোর ভাষায় প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেন। ভারতের এডিটরস্ গিল্ড, মহিলা প্রেস গোষ্ঠি, এবং নেটওয়ার্ক অব উইমেন ইন মিডিয়া যাচ্ছেতাই ভাবে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং তার দেশে বিরাজমান নারীবিদ্বেষ পরিস্থিতির নিন্দা করে।
Posted ১:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh