শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমেরিকান রাজনৈতিক সততা

ড. মাহবুব হাসান   |   বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

আমেরিকান রাজনৈতিক সততা

গত ১৭ নভেম্বর, নিউ ইয়র্কের গভর্নর আনড্রে কুমো বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইরাস ছড়িয়ে চলেছেন। সেটা নির্বাচনের ফলাফল নিয়েই কেবল নয়, তার যাবতীয় কর্মকান্ডেই তার প্রকাশ ঘটেছে। তার ওই ধরনের অন্যায় ও মানবতা বিরোধী কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিলো ২০১৬-এর নির্বাচনী প্রচারণার কাল থেকেই। গত চার বছরেও তিনি সেই কাজটি পরিকল্পিতভাবে করেছেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসের আগে আমরা যে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে মানসিক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি, সেটা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।

নিউ ইয়র্কের গভর্নর কুমো বলেছেন, আমরা আজ বর্ণবাদ ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা ঘৃণা (হেইট) ভাইরাসে আক্রান্ত, আমরা সেক্স ভাইরাসে আক্রান্ত। আর এ-সবের প্রধান নিয়ামক হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ধর্মকে মর্মে ধারণ না করে তাকে হাতিয়ার করে তুলেছেন। শাদা আর কালোর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাকে তিনি ব্যবহার করেছেন এইভাবে, ‘শাদা চামড়ার মানুষেরা শ্রেষ্ঠ ও কালো চামড়া বা বাদামি ও পীতাভ লোকেরা নিকৃষ্ট। না, তিনি এভাবে বলেননি, তবে তার মর্ম এটাই দাড়ায়, যখন তিনি গড়ে তোলেন ‘হোয়াইট সুপ্রিম’ বলে বর্ণবাদী গ্রুপ।
আমি জানি, এখন এই নির্বাচনী ট্রানজিমনের কালে এ-গুলো আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু এই বারের ানর্বাচনেরও প্রধান রাজনৈতিক উপাত্ত হিসেবে জারি ছিলো এই ট্রাম্পীয় বর্ণবাদ। ট্রাম্পের ধারণা ছিলো তিনি যেহেতু বর্ণবাদের আদি ইতরতাকে উসকে দিতে পেরেছেন, তাই তা এবারও কিছুটা হলেও কাজ দেবে। তিনি একেবারে যে ভুল করেছেন, এটা বলা যাবে না। অতীতের তুলনায় এবং ২০১৬-এর নির্বাচনে তিনি যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিলেন এবার কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। সে দিক থেকে তার বর্ণবাদ অনেকটাই কাজ করছে। এবারও তিনি জিততে পারতেন যদি ভোটারদের ভোট দেয়া তেকে বিরত রাকতে পারতেন। তিনি চেষ্টার ত্রুটি করেননি। সশস্ত্র সুপ্রিম হোয়াইট চেতনার বালক ও যুবকদের সংগঠিত করে পাঠিয়েছিলেন নির্বাচনী এলাকায়। কিন্তু তাদের তৎপরতা তেমন কাজে লাগেনি। এর মূলে ছিলো আগাম ভোট প্রদান ব্যবস্থা। আর মেইলে ভোট প্রদানের ব্যবস্থাটি শতবর্ষের প্রাচীন। সেই ধারাবাহিকতায় সাধারন ভোটাররা বুঝতে পেরেছিলেন যে কোভিডের কারণে ভোট প্রদান খুব দেরি হবে, স্লো হবে । ফলে তাদের ভোট প্রদান না হতে পারে। এ-কারণে এরা মেইলে ভোট দিয়েছেন এবং আগাম ভোট দিয়ে প্রার্থীকে এগিয়ে রেখেছেন। ট্রাম্প ধারণা করতে পারেননি যে শাদা৬৭% নাগরিকের মধ্যে যারা ভোটার তাদের তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশই ডেমোক্র্যাটদের ভোটার। বাদবাকি ইমিগ্র্যান্টদের মধ্যে কিচু লোক ট্রাম্পের পক্ষে এবারও কাজ করেছে এবং তারা ভোট দিয়েছে। এরা মূলত মুসলিম বিরোধী, অভিবাসী বিরোধী, মানবতা বিরোধীও বটে। মেইল ভোট আর আগাম ভোটের কারণেই ট্রাম্প হেরেছেন, এতে কোনো ভুল নেই। ভোট দেবার সুযোগটি তিনি রহিত করতে পারলে তিনি জিতে যেতেন।

আসলে কিন্তু ট্রাম্প জিতে আছেন আমেরিকান হোয়াইট জনগোষ্ঠীর মননে-মানসে। ওই হোয়াইট জনগোষ্ঠীর মনের ভেতরে যে বর্ণবাদি ভাইরাসটি ঢুকিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতেই এই ইমিগ্র্যান্ট অধ্যুষিত আধুনিক আমেরিকাকে এক অন্ধকার অধ্যায়ের নিগড়ে ফেলেছেন তিনি। করেছেন আমেরিকাকে দুইভাগে বিভক্ত। একভাগে আছেন বর্ণবাদপুষ্ট আমেরিকান, অন্য অংশে আছেন বর্ণহীন নিরেট মানবতাবাদী মানুষ। আজকে মোটাদাগে রাজনৈতিক কারণে রিপাবলিকানদের বর্ণবাদের অংশীদার করা যায়, তবে তা যথার্থ হবে না। তার একাধিক নমুনা দেয়া যেতে পারে। তবে আমি একজনের কথাই তুলে ধরবো। তিনি জর্জিয়া রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট। ওই রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্ব তারই ওপর ন্যাস্ত। ওই রাজটি ১৯৯২ সালের পর ডেমোক্র্যাটরা হারিয়েছিলেন। ২৮ বছর পর তা পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আগামিকাল বুধবার ১১/১৯/২০২০, জর্জিয়ার ভোট পুনরায় গণনা শেষ হতে যাচ্ছে।হাতে গোনার পরও জো বাইডেন এগিয়ে আছে আগে গণনার মতোই ভোটে। ধরে নেয়া যায় এ-রাজ্যে বাইডেন জিতে গেছেন।

কিন্তু প্রশ্নটি জেতা নিয়ে নয়। মানসিকতা নিয়ে। রাজ্যটির গভর্নর রিপাবলিকান। দুজন সিনেটরও রিপাবলিকান। এবং সেক্রেটারি অব স্টেটও রিপাবলিকান। ওপরওয়ালা রিপাবলিকানরা সেক্রেটারির ওপর চাপি দিচ্ছেন এমন কিচু করতে যাতে বাইডেনকে পরাভূত করা যায়। গভর্নর, সিনেটরদ্বয় প্রকাশ্যে সে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তিনি রিপাবলিকান হওয়া সত্তেও সত্যের বািইরে যেতে নারাজ। তিনি বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয়েছে। এখানে কোনো রকম অবৈধ ভোট হয়নি। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ও গণনার ক্ষেত্রেও কোনারকম জালিয়াতি হয়নি। প্রত্যেকটি বৈধ ভোট গণনা করা হয়েছিলো এবং এখনো হচ্ছে।েএকজন রিপাবলিকান যকন ন্রায়কেই প্রাধান্য দেন, সেটাই গণতান্ত্রিক চেতনার সারাৎসারও, তাহলে নির্বাচনের ত্রুটিগুলো সারাই করা সহজ হয়। রাজনীতিকদের উচিত সৎ ও সততার সাথে কাজ করা। তারা নিবেদিত দেশের জনগণের প্রতি, তাদের কল্যাণের জন্য। কিন্তু নিজেদের লাভ, মানে দলীয় লাভ দেখতে গেলে যে অন্যায় ওঅৈবৈধকে কোল পেতে দিতে হবে, সেটা বা তাদের কেউ কেউ বোঝার চেষ্টা করেন না। তারই একটা উদাহরণ দিই।

প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন নিম্ন আয়ের মানুষের দুচিন্তা ও মানবেতন অবস্থা বিবেচনা করে বলেছেন গত পরশু সোমবার ১৬ নভেম্বরে, যে হাউজ থেকে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের যে বিলটি পাশ করা হয়েছিলো সেটা যদি মিটস ম্যাককনেল ও তার রাজনৈতিক সতীর্থ সিনেটরগণ (রিপাবলিক্যানরা) পাশ করে দেন তাহলে জনগণের ভালো হয়। কিন্তু ম্যাককনেল বলেছেন তারা ছোটো আকারের বিল এনে আপাতত স্টিমুলাস দিতে চান। আগামি এক/দুই সপ্তাহের মধ্যে তা করা হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরেছিলেন নির্বাচনের পর দ্বিতীয় স্টিমুলাস দেবেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ তিনি আছেন নিজের স্বার্থ নিয়ে মহাব্যস্ত। জনগণের দিকে তার মন নেই। তিনি জনগণ নিয়ে ভাবিত এমনটা কখনোই মনে হয়নি। করোনা ভেইরাসে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে তখনও তার মধ্যে কোনোরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি। বরং তিনি আনন্দে গল্ফ খেলতে গেছেন। কতোটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর চেতনার মানুষ হলে এমনটা করা যেতে পারে।

আমেরিকার দুর্ভাগ্য যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন তুখোড় নেতিবাচক মানুষ প্রেসিডেন্সি পেয়েছিলো। অবারিতভাবে একজন প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলতে পারেন, যা জার্মানির হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়বসকেও হার মানিয়েছে।

তার হাতে পড়ে আমেরিকান রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক চেহারা ও চরিত্র ধুলিময় হয়েছে। সেই দুলি তেকে আমেরিকানদের টেনে তুলতে হবে। আর সে-কাজে কেবল ডেমোক্র্যাটদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না, কাজটি সম্মিলিতভাবে করতে রিপাবলিকানদের সহযোগ দরকার। কারণ তারাও রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংবিদানিকভাবে অংশীদার এর। তাদেরও দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে দলীয় রাজনীতিক অন্ধকূপ থেকে বাইরে এসে, দিনের মতো জ্ঞানের আলোকে, জনমানুষের কথা বিবেচনায় রেখে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি তো সেটাই যেখানে জনগণের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতি রয়েছে।

Posted ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(7415 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1442 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1231 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.