সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আল্লাহকে জানার বিভিন্ন নিদর্শন

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

আল্লাহকে জানার বিভিন্ন নিদর্শন

আল্লাহকে জানার জন্য নিদর্শনসমুহকে আপাতত: আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি এক, আমাদের চোখের সামনে বিশাল আকাশ-পৃথিবী এবং এ দু’য়ের মাঝে নানা সৃষ্টি। দুই, মানুষের নিজের অস্তিত্ব।

যার মধ্যে অসংখ্য নিদর্শন বিরাজ করছে। প্রথমত: পৃথিবীর অস্তিত্ব এবং আকার-আকৃতি সূর্য থেকে তাকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং বিশেষ কোণে স্থাপন, তার ওপর উষ্ণতা ও আলোর ব্যবস্থা করা, সেখানে বিভিন্ন মওসুম ঋতুর আগমন, প্রস্থান, তার ওপর বাতাস ও পানি সরবরাহ করা, তার অভ্যন্তরে ভাগে নানা রকমের অগণিত সম্পদের ভাণ্ডার সরবরাহ করা, তার উপরিভাগ একটি উর্বর আবরণ দিয়ে মুড়ে দেয়া এবং তার পৃষ্ঠদেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমের অসংখ্য ও অগণিত উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন করে দেয়া, তাতে স্থল, জল ও বায়ুতে বিচরণকারী জীবজন্তু ও কীট-পতঙ্গের অসংখ্য প্রজাতির বংশধারা চালু করা,প্রত্যেক প্রজাতির জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা সেখানে মানুষকে অস্তিত্ব দানের পুর্বে এমন সব উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করা যা ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে কেবল তার দৈনন্দিন প্রয়োজনই পূরণ নয় বরং তার তাহযীব তমুদ্দনের ক্রমবিবর্তনের ক্ষেত্রে সহযোগীতাও করতে থাকবে। এ সব এবং ধরনের অগণিত নিদর্শনাদি আছে যে চক্ষুস্মান ব্যক্তি পৃথিবী ও এর পরিমণ্ডলে যে দিকেই দৃষ্টিপাত করে তা তার মনকে আকৃষ্ট থাকে।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশ দেখছে না কিভাবে তাকে উঠানো হয়েছে? পাহাড়গুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে শক্তভাবে বসানো হয়েছে? আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে।”(সুরা গাশিয়া:১৭-২০) নিজেদের চারপাশের জগতের প্রতি একবার দৃষ্টি বুলিয়ে যদি মানুষ চিন্তা করে বৈচিত্রময় আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে কত শত নিদর্শন দেখতে পাবে। উট কেমন করে সৃষ্টি করা হলো।

এই উট আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। মরুভূমির তপ্ত বালিকায় এরা ৫৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং মাইনাস ডিগ্রি সহ্য করতে পারে। মাসের পর মাস পানি ছাড়া জীবন ধারণ করে। মরুভূমির শুস্ক রসহীন অত্যন্ত সূচালো ও শক্ত কাঁটাযুক্ত গাছ এরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। বিশাল আকাশ কোন প্রকার খুঁটি ছাড়াই আমাদের মাথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও এতটুকু ভেঙ্গে পড়ছে না। যার শূন্য পেট শ্বাস নেবার জন্য বাতাসে ভরা। যার মেঘমালা বৃষ্টিবহন করে আনেযার সুর্য দিনে আলো ও তাপ দেয়। যার চাঁদ ও তারকারা আকাশে আলো ছড়ায়। পৃথিবীর বিস্তির্ণ ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ বসবাস করে যেখানে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল তাদের খাদ্য প্রয়োজন পূর্ণ করে, যার নদী ও কূপের পানির ওপর তাদেও জীবন নির্ভরশীল। রং বেরঙের মাটি ও পাথর এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ নিয়ে এ পাহাড়গুলো পৃথিবীর বুকে কিভাবে গজিয়ে উঠেছে। এসব কিছুই কি একজন মহাশক্তিশালী ও বিজ্ঞ স্রষ্টার সৃষ্টি কৌশল ছাড়া এমনিই তৈরি হয়ে গেছে।

এতো গেলো বাহিরের নিদর্শন। এ সমস্ত বাহ্যিক নিদর্শন ছাড়াও মানুষ তার নিজের মধ্যে দেখলেও এ সত্য প্রমাণকারী অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাবে। কিভাবে একটি অণুবীক্ষণিক কীট এবং অনুরূপ একটি অণুবীক্ষণিক ডিম্বকে মিলিয়ে একত্রিত করে মাতৃদেহের একটি নির্ভত কোণে মানুষের সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে। অন্ধকার সে নিভৃত কোণে কিভাবে লালন পালন করে মানব সন্তানকে ক্রমান্বয়ে বড় করা হয়েছে। কিভাবে তাদেরকে অনুপম আকৃতি ও কাঠামোর দেহ এবং বিস্ময়কর কর্মশক্তি সম্পন্ন প্রাণ শক্তি দেয়া হয়েছে। কিভাবে তাদের দেহাবয়বের পূর্ণতা প্রাপ্তি মাত্রই তাকে মাতৃগর্ভের সংকীর্ণ ও অন্ধকার জগত থেকে বের করে এ বিশাল ও বিস্তৃত জগতে এমন সময় আনা হয়েছে যখন তাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে।

এ যন্ত্র তাদের জন্ম থেকে যৌবন ও ব্যার্ধক্য পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করা, খাদ্য পরিপাক করা, রক্ত তৈরী করা শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করা, মল নিগর্মন করা, দেহের ক্ষয়িত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশসমূহ আবার নির্মাণ করা ভিতর থেকে উদ্ভুত কিংবা বাইরে থেকে আগমনকারী বিপদাপদসমূহের প্রতিরোধ করা, ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা এমনকি পরিশ্রান্ত হওয়ার পর আরামের জন্য শুইয়ে দেয়ার কাজ পর্যন্ত আপনা থেকেই সম্পন্ন করে যাচ্ছে। জীবনের এ মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণের জন্য তাদের মনোযোগ ও চেষ্টা-সাধনার সামান্যতম অংশও ব্যয়িত হয় না। তাদের মাথার খুলির মধ্যে একটা বিস্ময়কর মস্তিস্ক বসিয়ে দেয়া হয়েছে যার জটিল ভাঁজে ভাঁজে জ্ঞান-বুদ্ধি, চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, উপলব্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, ইচ্ছা স্মৃতিশক্তি, আকাংখা, অনুভূতি, আবেগ, ঝোঁক ও প্রবণতা এবং আরো অনেক শক্তির এক বিশাল ভাণ্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। প্রবল পরাক্রান্ত এক মহাশক্তিধর ইঞ্জিনিয়ার আল্লাহ তা’আলা বিশাল এক প্রোগ্রাম এই মস্তিস্কে স্থাপন করে দিয়েছেন। মানুষের জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যম দেয়া হয়েছে যা চোখ, নাক, কান এবং গোটা দেহের স্নায়ুতন্ত্রীর সাহায্যে তাদেরকে সব রকমের সংবাদ পৌঁছিয়ে থাকে। তাদেরকে ভাষা এবং বাকশক্তি দেয়া হয়েছে যার সাহায্যে তারা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।

সর্বোপরি তাদের সত্তার এ গাটা সাম্রাজ্যের ওপর তাদের আমিত্ব বা অহংকে নেতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে সবগুলো শক্তি কাজে লাগিয়ে মতামত গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যে, কোন পথে তাদের সময়,শ্রম ও চষ্টা-সাধনা ব্যয় করতে হবে, কোনটি বর্জন করতে হবে এবং কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোন বস্তুকে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ বানাতে হবে এবং কোনটিকে নয়। একটু লক্ষ করা হলে দেখা যায় যে, এরূপ একটি সত্তা বানিয়ে তাদেরকে যখন পৃথিবীতে আনা হলো তখনই তাদের সত্তার লালন-পালন,প্রবৃদ্ধি উন্নতি ও পূর্ণতা সাধনের জন্য কত সাজসরঞ্জাম এখানে প্রস্তুত পেয়েছে। এসব সাজ-সরঞ্জামের বদৌলতে জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছে তারা নিজেদেও ক্ষমতা ইখতিয়ার কাজে লাগানোর উপযুক্ত হয়েছে।

এসব ক্ষমতা ইখতিয়ার কাজে লাগানোর জন্য পৃথিবীতে তাদেরকে নানা উপায়-উপকরণ দেয়া হয়েছে, সুযোগ দেয়া হয়েছে, বহু জিনিসের ওপর তাদের কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বহু ম্নাুষের সাথে তারা নানা ধরণের আচরণ করছে। তাদের সামনে কুফরী ও ঈমান, পাপাচার ও আনুগত্য, জুলুম ও ইনসাফ, নেকী ও কুকর্ম এবং হক ও বাতিলের সমস্ত পথই খোলা আছে। এসব পথের প্রত্যেকটি দিকে আহবানকারী এবং প্রত্যেকটির দিকে নিয়ে যাওয়ার মত কার্যকারণসমূহ বিদ্যমান আছে। তাদের মধ্যে যে-ই যে পথ বেছে নিয়েছে নিজের দায়িত্বেই বেছে নিয়েছে। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাছাই করার ক্ষমতা তার মধ্যে পূর্ব থেকেই দেয়া হয়েছিল।

প্রত্যেকের নিজের পছন্দ অনুসারে তার নিয়ত ও ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপায়িত করার যে সুযোগ সে লাভ করেছে তা কাজে লাগিয়ে কেউ সৎকর্মশীল হয়েছে এবং কেউ দুস্কর্মমীল হয়েছে। কেউ কুফরী, শিরক ও নাস্তিকতার পথ গ্রহণ করেছে। কেউ তার প্রবৃত্তিকে অবৈধ আকাংখা চরিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছে আর কেউ প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে গিয়ে সবকিছু কওে বসেছে। কেউ জুলুম করেছে আর কেউ জুলুম সহ্য করেছে। কেউ অধিকার দিয়েছে আর কেউ অধিকার নস্যাত করেছ্ েকেউ মৃত্যু পর্যন্ত পৃথিবীতে কল্যাণের কাজ করেছে আবার কেউ শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কুকর্ম করেছে। কেউ ন্যায়কে সমুন্নত করার জন্য জীবনপাত করেছে। আবার কেউ বাতিলকে সমুন্নত করার জন্য ন্যায়ের অনুসারীদেও ওপর জুলুম চালিয়ে গেছে।

যে ব্যক্তি তার বিবেক-বুদ্ধির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, কোনক্রমেই বিশ্বাস করতে চায় না, তার কথা ভিন্ন। সে এই সব নিদর্শনের মধ্যে সবকিছুই দেখতে পাবে। কিন্তু দেখবে না শুধু সত্যের প্রতি ্ইংগিত প্রদানকারী কোন নিদর্শন। তবে যার হৃদয়-মন সংকির্ণতা ও পক্ষপাতমুক্ত এবং সত্যের জন্য অবারিত ও উন্মুক্ত সে এসব জিনিস দেখে কখনো এ ধারণা পোষণ করবে না যে, এসবই কয়েকশ’ কোটি বছর পূর্বে বিশ্ব-জাহানের সংঘটিত একটি আকস্মিক মহা বিস্ফোরণের ফল। বরং এসব দেখে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, এ চরম উন্নত মানের এ বৈজ্ঞানিক কীর্তি মহা শক্তিমান ও মহাজ্ঞানী এক আল্লাহরই সৃষ্টি। যে আল্লাহ এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি মৃত্যুর পরে পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করতে পারবেন। তিনি পৃথিবীতে বুদ্ধি-বিবেক ও উপলব্ধির অধিকারী একটি সৃষ্টিকে স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দিয়ে লাগামহীন বলদের মতো ছেড়ে দেননি।

স্বাধীনতা ও ইখতিয়ারের অধিকারী হওয়ার স্বতস্ফুর্ত ও অনিবার্য দাবী হলো জবাবদিহি। জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে স্বাধীনতা ও এখতিয়ার যুক্তি ও ইনসাফের পরিপন্থী হবে। আর অসীম শক্তির বিদ্যমানতা স্বভাবতই একথা প্রমাণ করে যে, পৃথিবীতে মানবজাতির কাজ শেষ হওয়ার পর সে যেখানেই মরে পড়ে থাকুক না কেন যখন ইচ্ছা তার মহাশক্তিধর স্রষ্টা জবাবদিহির জন্য সমস্ত মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোণ থেকে পুনরুজ্জীবিত করে আনতে সক্ষম।

Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(842 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.