বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আল কুরআনকে সস্থানে ফিরিয়ে আনুন

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

আল কুরআনকে সস্থানে ফিরিয়ে আনুন

আল কুরআনকে তার সস্থানে ফিরিয়ে এনে পুন:ুপ্রতিষ্ঠিত করুন, তার বাস্তুভিটা তাকে ফিরিয়ে দিন, তার মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করুন। অন্তত: আমি একা হলেও হলফ করে বলতে পারি কুরআন আবার এমন এক শান্তি ও সমৃদ্ধির সমাজ উপহার দিবে, যা আপনার কল্পনাতীত। সেখানে থাকবে না লাঞ্জনা, বঞ্চনা, গঞ্জনা ও অধিকারহারা মানুষের ক্রন্দনরোল। ফুলে ফলে সমাজটা ভরে ্উঠবে। চারদিকে পাখিরা গাইবে নতুন গান। হাঁ, আল কুরআন পৃথিবীতে এসেছিল মানুষের সমাজকে ফুলে ফলে সাজিয়ে দিতে। সেই কুরআন সমাজের সর্বস্তরে এক সময় প্রতিষ্ঠিত ছিল বা কুরআন অনুযায়ী সেইজীবন পরিচালিত হতো।

আমরা সেই সমস্ত স্থান থেকে কুরআনকে উচ্ছেদ করে দিয়েছি। আবার শান্তির সমাজ পেতে হলে সেই সকল স্থানে কুরআনকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যদি আমরা এই কাজ না করি তাহলে সকলকেই রাসুলুল্লাহ সা: কর্তৃক আল্লাহর দরবারে দায়েরকৃত মামলার বিবাদী বা চার্জশীটভুক্ত আসামী হয়ে যাবো। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর রাসুল বলবে,“হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কুরআনকে বাস্তুচুত্য করেছিল।”(সুরা ফুরকান:৩০)

রাসুলুল্লাহ সা:-এর ২৩ বৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষের ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলস্তরে আল কুরআনকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আল কুরআন অনুযায়ী তিনি এমন এক সোনার সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিনির্মান করেছিলেন যেখানে মানুষ কুরআন অনুযায়ী কথা বলতো এবং কুরআন অনুযায়ী কথা পরিহার করতো।

আইন আদালত ও রাষ্ট্রের সকল অবকাঠামো পরিচালিত হতো কুরআন অনুযায়ী। স্কুল-কলেজের শিক্ষার প্রধান ও মূল পাঠ্য বিষয় ছিল আল কুরআন। রাসুলুল্লাহ সা: এই কুরআন দিয়েই পৃথিবী বিখ্যাত সোনার মানুষ তৈয়ার করেছিলেন। এইসোনার মানুষেরা ছিলেন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রা:। আল কুরআন জাহেলিয়াতের ক্ষিপ্রগতির প্রধান ব্যক্তিটিকে ইসলামের উচ্চতর ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন। আল কুরআন তাঁকে জিরো থেকে হিরোতে পরিণত করে। অর্ধেকটা পৃথিবীর শাসনভার তাঁর হাতে তুলে দেয়। কুরআন অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সা: এ ধরণের লক্ষ লক্ষ মানুষ তৈয়ার করেছিলেন। এই কুরআন অনুযায়ী তিনি এমন এক নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ করেছিলেন যে, সেই রাষ্ট্রের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে সুন্দরী, মূল্যবান সব অলংকার সজ্জিত নারী রাতে কি দিনে একাকী পথ চলেছেন, কেউ তার উপর হামলে পড়বে তো দুরের কথা, কেউ তার দিকে মুখ তুলেও থাকাননি।

আল কুরআন অনুযায়ী তিনি এমন এক অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে, যাকাত গ্রহণ করার মতো কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যেতো না।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক সত্য হলো, আমরা কুরআনকে সে সমস্ত জায়গা থেকে উচ্ছেদ করেছি। কুরআনকে তার নিজস্ব স্থান থেকে বাস্তচুত্য করেছি এবং সে সমস্ত স্থানে অবৈধ স্থাপনা তথা মানব রচিত মতবাদ স্থাপন করেছি। কুরআনকে হাসি ঠাট্রার বস্তুতে পরিণত করেছি। ফলে আমাদের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা।

বিষয়টি এখানেই থেমে থাকলে হয়তো ভালো হতো, কিন্তু দুনিয়ার জীবনে অপমান, অপদস্ত ও লাঞ্চনার পরেও পরকালে কঠিণ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।আল কুরআনেই সংকীর্ণ জীবনের ধমকি প্রদান করা হয়েছে। সংকীর্ণ জীবন মানে এই নয় যে, দুনিয়ায় অভাব অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে। বরং মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হয়েও মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সাত মহাদেশের মহাপরাক্রমশালী সম্রাট হয়েও মানসিক অস্থিরতা ও অতৃপ্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে না। তার চারপাশের সমগ্র সামাজিক পবিবেশের প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতর দ্বন্ধ লেগেই থাকবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি আমার “যিকর”(আল কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।

সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুস্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন? আল্লাহ বললেন, হাঁ, এভাবেই তো আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে। এভাবেই আমি সীমালংঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং আখিরাতের আযাব বেশী কঠিন এবং বেশীক্ষণ স্থায়ী।”(সুরা তাহা:১২৪-১২৭)

শুরুতেই বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা: তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে কুরআনকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেই কুরআনকে যারা সমাজের সর্বস্তর থেকে বাস্তচুত্য করেছে বা উচ্ছেদ করেছে বা ঘরছাড়া করেছে, তাদের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সা: কিয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে মামলা ঠুকে দিবেন। যেমন উপরে সুরা ফুরকানের ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা: এর এই মামলা থেকে তারাই রেহাই পেতে পারে বা মামলার চার্জশিট থেকে নিজের নামটি বাদ যেতে পারে, যদি কেউ সেই কুরআনকে পুনরায় তার সস্থানে ফিরিয়ে এনে পূন:প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন অংশ গ্রহণকরেন।

অন্যথায় মামলার চার্জশিটে নিজের নামটি নথিভূক্ত হয়ে যেতে পারে। আল কুরআনকে যারা বাস্তচুত্য করেছে বা আল কুরআনকে তার স্বস্থান থেকে উচ্ছেদ করেছে,তারা রাসুলুল্লাহ সা: এর দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী তো হবেই কিন্তু কুরআনের হক জানার পরও যারা কুরআনের হক ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে উদাসীন তারাও রাসুলুল্লাহ সা: এর মামলার বিশেষ আসামী নথিভুক্ত হবেন।

কারণ তিনি জুলুম হতে দেখেও চুপ ছিলেন। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য একমাত্র উপায় হলো, কুরআনের হক আদায় করার জন্য এবং কুরআনকে তার সস্থানে পুন:প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

কুরআন এসেছে মানুষকে আলোর পথ দেখাতে। শয়তান প্ররোচনার মাধ্যমে আলোর পথকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করার জন্য এবং মানুষকে বিপদ সংকুলে নিক্ষেপ করার জন্য এই মানুষ দিয়েই কুরআনকে উচ্ছেদ করেছে এবং সেই সব স্থানে শয়তানের পরামর্শেই মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত আইন-কানুন প্রতিষ্ঠিত করেছে।এ সকল আইন ও কানুন মানুষের উপকারের পরিবর্তে হাজারো সমস্যা সৃষ্টি করেছে, সমাজ ও সভ্যতাকে অস্থির করে তুলেছে।

কোথাও শান্তি নেই। একটু শান্তির প্রত্যাশায় আল্লাহর দেয়া বিধানকে বাদ দিয়ে সেখানে মানুষের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি দূরের কথা বরং আরো জঠিল সমস্যার অক্টোপাসে জড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া এ সমস্ত আইন কানুন প্রকৃত বিরোধী বলে প্রকৃতিও মানুষকে একটার পর একটা চপেটাঘাত করেই চলেছে। কারণ প্রকৃতির আইন ও কুরআনের আইন-কানুন রচয়িতা এক আল্লাহ তা’আলা। ফলে প্রকৃতি আইন এবং আল কুরআনের আইনের কোন বৈপরিত্য নেই। আজকের পৃথিবী অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। কোথাও শান্তি নাই-শান্তি নাই।

শান্তির পিপাসায় মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন মতবাদের দ্বারস্থ হয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বার বার ফিরে আসছে। মনে করুন বিশাল সমুদ্র, যার পানি মিষ্টি, এর পাশে দাঁড়িয়ে কোন ব্যক্তি যদি তৃষ্ণার্থ হয়ে মরতে থাকে, তবে তার চেয়ে বড় বোকা আর কে হতে পারে? সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি পানি পান করলেই তো তার তৃষ্ণা মিটে যায়। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ শান্তির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। এ পিপাসা নিবারণের জন্য তারা চলে যাচ্ছে ড্রেনের পঁচা ও পূঁতি গন্ধময় পানির কাছে। তা পান করে রোগ-বালাই ও ব্যধি ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময়। ড্রেনের পঁচা পানি হলো, মানুষের মনগড়া মতবাদ, যা মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত। অথচ লোকটি আগে দেখল না তার ঘরে পানি আছে কিনা। তার ঘরে যে পানি আছে তার নাম ‘আবে হায়াত’ তথা ‘আল-কুরআন’।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠী আল কুরআনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমাদের অনেকে হয়ত কুরআনকে পড়তে পারি না অথবা যারা আমরা পড়তে পারি, তারা এর অর্থ জানি না, অথবা অর্থ জানলেও এর গভীরে প্রবেশ করে তার আবেদনে সাড়া দেই না। সারা বিশ্বের মুসলমানদের দুরাবস্থার মুল কারণ এখানেই।

আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমানদের কথা আর কি বলবো? জাতির বিবেক বলে যাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি, যাদের দায়িত্ব ছিল আল-কুরআনের সামগ্রীক ও প্রকৃত শিক্ষাকে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে স্তরে পৌঁঁছে দেয়া, সেই আলেম সমাজই আজ দ্ধিধাবিভক্ত,আত্মকলহে জর্জরিত। দুভার্গ্য বলতে হবে সে সমস্ত আলেমদের যাদের কাছে কুরআন নামক অমূল্য সম্পদ থাকার পরও বিভিন্ন মতবাদে লিপ্ত হয়ে ইসলামকে নাস্তানাবুদ করে চলেছেন। নিজেদের জেদ, শ্রেষ্টত্ব ও হেয়ালীপনার বশবর্তি হয়ে বিভেদের বিষ বৃক্ষ রোপণ করে চলেছেন। ফলে তা থেকে না উপকৃত হচ্ছেন নিজেরা, না উপকৃত হচ্ছন দেশবাসী।
আর আমরা সাধারণ মুসলমানগণ, তাদের বিরাট অংশ এই ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছি, তা হলোঃ ‘কুরআন বুঝা আমাদের কাজ নয়, এটি আলেম ওলামাদের কাজ।’

অথচ আল কুরআনের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন,“হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট হতে এসেছে উপদেশ,তোমাদের অন্তরে যে (রোগ) আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত।”(সুরা ইউনুসঃ৫৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন “ইহা মানব জাতির জন্যে ব্যাখ্যা এবং মুত্তাকীদের জন্যে পথ নির্দেশ ও উপদেশ বাণী।”তিনি আরো বলেছেন,“তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমান এসেছে গেছে সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে। আর কেউ না দেখলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমি তোমাদের তত্বাবধায়ক নই।”(সুরা আনয়ামঃ১০৪) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন, “যার অন্তরে কুরআনের কিছুই নেই সে পরিত্যক্ত ঘর তুল্য।” (তিরমিযি)

Posted ২:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(793 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.