বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
ফাইল ছবি
মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে আগত ইমিগ্রান্টদের সংখ্যাধিক্যে দিশেহারা নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ সিটির দীর্ঘদিনের লালিত ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে কারো ‘আশ্রয় লাভের অধিকার’ সংক্রান্ত ৪০ বছর আগে ঘোষিত আদালতের একটি আদেশ সংশোধন করার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছে।
রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আশায় গত এক বছরে সীমান্ত অতিক্রম করে যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তাদের প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয় নিয়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে এবং গত এক বছরে সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের আবাসন থেকে শুরু করে অন্যান্য আবশ্যিক ব্যয় নির্বাহের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয় করেছে। সিটি কর্তৃপক্ষ ফেডারেল সরকারের কাছে বার বার বলছে যে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, অতএব ফেডারেল সরকার কোনো সহায়তা না করায় মেয়র এরিক অ্যাডামস ‘আশ্রয় লাভের অধিকার’ আদেশ সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
মেয়র অ্যাডামস বলেছেন, ‘অসংখ্য লোককে আশ্রয় দিতে আমরা অসমর্থ এবং ইতোমধ্যে আমাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। সেজন্য সকলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের আশায় এসেছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের সহজ সরল বক্তব্য হচ্ছে, যারা সীমান্ত পেরিয়ে আসছেন, নিউইয়র্ক সিটি তাদের সমস্যা এককভাবে মোকাবিলা করতে পারে না। আমাদের সিটির অবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। আমরা আমাদের সরকারের অংশীদারকে এ সত্য সম্পর্কে জানাতে চাই এবং আশা করি তারাও এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবেন।’
নিউইয়র্ক সিটি কোর্টস এর ডেপুটি চিফ অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ জজ ডেবোরাহ কাপলান এর কাছে লেখা এক চিঠিতে সিটির আইনজীবীরা ১৯৮১ সালের একটি আদেশ পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছেন, যে আদেশে সিটিতে যে কারো আশ্রয় লাভের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা আদেশটির কিছু শব্দ পরিবর্তন করার জন্যে বলেছেন, যাতে সিটির পক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক হোমলেস ও প্রাপ্তবয়স্কদের পরিবারকে আশ্রয় লাভের অধিকারকে অস্বীকার করা সম্ভব হয়। এতে বলা হয় যে, পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়ের সংস্থান করতে সিটির সম্পদ ও সামর্থে ঘাটতি রয়েছে এবং এ কারণে আশ্রয় লাভের জন্য যারা আবেদন করছে তাদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। তবে সিটি শিশু সন্তানসহ পরিবারের আশ্রয়ের অধিকার অস্বীকার করতে চায়নি।
অ্যাডামস বলেছেন যে তিনি স্থায়ীভাবে আশ্রয়ের অধিকার বন্ধ করতে চান না। কিন্তু কেউ সিটির কাছে আশ্রয় লাভের আবেদন জানালে সিটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে বাধ্য মর্মে ১৯৮১ সালে ‘কালাহান বনাম ক্যারে’ মামলার রায়ে সংশোধন চেয়েছেন। তার মতে, আদালত যখন এ রায় প্রদান করেছিল, ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে এ রায়ের যৌক্তিকতা অবশ্যই ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতির সমূহ পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৮১ সালে আদালত অথবা কারো পক্ষেই নিউইয়র্ক সিটিতে এত বিপুল সংখ্যক লোকের আগমণ সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন প্রতিবছর সিটিতে আশ্রয়হীন লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সিটির সামর্থের ওপর নজীরবিহীন চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন যে গত এক বছরে আগত প্রায় ৭০ হাজার ইমিগ্রান্টের মধ্যে ৪০ হাজারের অধিক সিটির প্রত্যক্ষ দায়িত্বে রয়েছে। এর বাইরে সিটির প্রধান শেলটার সিস্টেমে ৮১ হাজারের অধিক আশ্রয়হীন লোক বসবাস করছে।
সিটিকে নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য ১৪০টি হোটেল সহ ১৫০টি স্থানে রাখা হয়েছে। কিন্তু বহু স্থানে ইমিগ্রান্ট আশ্রয়কেন্দ্র খোলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক স্থানে তারা প্রকাশ্য প্রতিবাদে নেমেছে। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সিটি কর্তৃপক্ষ ইমিগ্রান্টদের পেছনে ৪.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে বলে একটি হিসাব করেছে এবং ফেডারেল সরকারের সহায়তা ছাড়া এই সহায়তা অব্যাহত রাখা যে সম্ভব নয়, তা ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও ওয়াশিংটন এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া না দেওয়ায় এরিক অ্যাডামস বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আদালতে রায় সংশোধনের মাধ্যমে সিটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটিতে নবাগত ইমিগ্রান্টদের আবাসন নিয়ে ক্ষোভ
এক বছর আগে টেক্সাসের গভর্নর তার একতরফা সিদ্ধান্তে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে আসা ইমিগ্রান্টদের বাসযোগে প্রধানত নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া শুরু করার পর সে সংখ্যা প্রায় সত্তর হাজারে উন্নীত হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রান্টের জন্য আবাসনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা দান করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এই ইমিগ্রান্ট প্রবাহ সামলাতে হিসশিম খেয়ে ফেডারেল সহায়তা কামনা করেছেন, যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ইমিগ্রান্টদের নিয়ে সিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা দাঁড়িয়েছে তাদের আবাসনের সংস্থান করা।
সিটি প্রথমে নবাগত ইমিগ্রান্টদের হোটেলে রেখেছে, এরপর তাবুতে, অতপর একটি ক্রুজ শিপ টার্মিনালে এবং সবমেষে স্কুলের জিমনেশিয়ামে। ইমিগ্রান্টদের আগমণ আরো বেড়েছে গত ১১ মে টাইটল ৪২ এর মেয়াদ অবসানের পর ইমিগ্রান্টদের সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার ওপর বিধিনিষেধ দূর হয়ে যাওয়ায়। এবার সীমান্ত থেকে ইমিগ্রান্টরা টেক্সাস গভর্নরের দেওয়া বাসে নয়, নিজ খরচে চলে আসছে তাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের গন্তব্য নিউইয়র্ক সিটিতে। কিন্তু ইমিগ্রান্টদের আবাসনের প্রতিটি উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে, সোচ্চার হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মেয়র সিটিবাসীকে ধৈর্য ধারণের এবং পরিস্থিতি উপলব্ধি করে সিটি প্রশাসনের পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন।
গত দুই সপ্তাহ যাবত প্রতিদিন নিউইয়র্কে ৭০০ ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করছে বলে সিটি প্রশাসন নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে। ১১ মে’র আগে এই সংখ্যা ছিল দৈনিক গড়ে তিনশো’র মধ্যে। সিটিতে যে হারে ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করছে, সেই তুলনায় সিটির প্রস্তুতি নেই। সেজন্যে তারা ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোকে পাবলিক স্কুলের জিমনেশিয়ামে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল সিটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শুধু নয়, সামগ্রিকভাবে সিটিবাসীদের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছে যে, সিটির এ ধরনের সিদ্ধান্ত কিছুতেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। ফলে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে সিটি স্কুল জিমনেশিয়ামে ইমিগ্রান্ট আবাসনের পরিকল্পনা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
গত এক বছরে সিটিতে যেসব ইমিগ্রান্ট এসেছে তাদের মধ্যে ৪১ হাজারের অধিক সংখ্যক ইমিগ্রান্টের প্রত্যক্ষ সহায়তা করছে সিটি কর্তৃপক্ষ। সিটির ডেপুটি মেয়র ফর হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অ্যানি উইলিয়ামস আইসোম এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে গত এক সপ্তাহে সিটি ৪ হাজার ৩০০ নতুন ইমিগ্রান্ট এসে উপনীত হয়েছে। সিটি গত এক বছরে ইমিগ্রান্টদের জন্য এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে ব্যয়ের পরিমাণ ৪.৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, যা সামাল দেওয়া সিটির পক্ষে সম্ভব নয়।
সিটির আর্থিক সামর্থের ওপর চাপ পড়ায় এবং এ কারণে বিভিন্ন খাতে কর ও সেবার মূল্য বাড়তে পারে বলে মেয়র ইঙ্গিত দিলে তার সঙ্গে সিটিবাসীর দূরত্ব সৃষ্টি আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে তিনি ইমিগ্রান্ট খাতে যা ব্যয় হবে তা মেটানোর জন্য আংশিক অর্থ ফেডারেল সরকারের কাছে বার বার দাবি করায় হোয়াইট হাউজের সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এরিক অ্যাডামস গত বুধবার হোয়াইট হাউজের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইমিগ্রান্টদের জন্য আপনারা কি করেছেন? আমাদের বলা হোক যে, আমরা কোথায় যাব? আমি সবার কাছে ধর্ণা দিচ্ছি, কেউ কি আমার পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন গিয়ে আমাদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করবে? যে হারে ইমিগ্রান্টরা আসছে, আমরা তাদের কোথায় স্থান দেব?”
সাংবাদিকরা যখন ডেপুটি মেয়র ফর হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অ্যানি উইলিয়ামস আইসোমের কাছে জানতে চান যে, সিটির পক্ষ থেকে ফেডারেল সরকারের কাছে যে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে তার পরিমাণ কত, তিনি জানান যে আপতকালীন অনুদান হিসেবে সিটি ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল সরকারের কাছে দাবি করেছে, কিন্তু ফেডারেল সরকারের কাছে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh