বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ইরান ও ইসরায়েল : আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় কে এগিয়ে

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েল : আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় কে এগিয়ে

ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল আজ শুক্রবার ভোররাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালাল। মধ্যপ্রাচ্যের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যে চলমান দীর্ঘ উত্তেজনার সাম্প্রতিকতম অধ্যায় এটি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ভেতরে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এ আচমকা হামলায় ইরানের শীর্ষ তিনজন সামরিক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিহত কমান্ডারদের নাম প্রকাশ করেছে—ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রাশিদ। ২০২৪ সালে ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। গত ২ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বড় বড় শহরে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

আইআরজিসি জানায়, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ এবং আইআরজিসি, হামাস, হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার জবাবেই ওই হামলা করা হয়। এর পাল্টা জবাবে গত ২৫ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানে প্রায় ২০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা তাদের ভাষ্যমতে ‘ইরান ও এর প্রক্সিদের’ মাসব্যাপী হামলার প্রতিক্রিয়া ছিল।

তবে আজ ১৩ জুন, শুক্রবার ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তা পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটিয়েছে। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে ‘চড়া মূল্য’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান ও ইসরায়েল এখন সরাসরি সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা, আক্রমণ করার ক্ষমতা ও আত্মরক্ষার উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো—

সৈন্যসংখ্যা

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ২০২৩ সালের ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স’ প্রতিবেদন অনুসারে: ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার, আইআরজিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার, নৌবাহিনীতে ১৮ হাজার, বিমানবাহিনীতে ৩৭ হাজার ও বিমান প্রতিরক্ষায় ১৫ হাজার সৈন্য।

এ ছাড়া ইরানের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। ইসরায়েলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে—সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ২৬ হাজার, নৌবাহিনীতে ৯ হাজার ৫০০ ও বিমানবাহিনীতে ৩৪ হাজার। তাদের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সী অধিকাংশ নারী ও পুরুষের জন্য সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক, তবে নির্দিষ্ট কিছু ছাড় আছে।

সামরিক ব্যয়

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী:

২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০ কোটি) ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

একই বছর ইসরায়েল ব্যয় করেছে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৫০ কোটি) ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে মূলত ৭ অক্টোবরের পর শুরু করা গাজা যুদ্ধের কারণে।

স্থলবাহিনী

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে:

ইরানের আছে ১০ হাজার ৫১৩টির বেশি যুদ্ধ ট্যাংক, ৬ হাজার ৭৯৮টি আর্টিলারি গান ও ৬৪০টির বেশি সাঁজোয়া যান। সেনাবাহিনীর আছে ৫০টি হেলিকপ্টার এবং আইআরজিসির আছে ৫টি।

ইসরায়েলের আছে প্রায় ৪০০টি যুদ্ধ ট্যাংক, ৫৩০টি আর্টিলারি গান ও ১ হাজার ১৯০টির বেশি সাঁজোয়া যান।বিমানবাহিনী

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে:

ইরানের বিমানবাহিনীর কাছে আছে ৩১২টি যুদ্ধোপযোগী বিমান, আর আইআরজিসির আছে ২৩টি। বিমানবাহিনীর রয়েছে ২টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনীর ৫০টি এবং আইআরজিসির ৫টি।

ইসরায়েলের রয়েছে ৩৪৫টি যুদ্ধোপযোগী বিমান ও ৪৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।

নৌবাহিনী

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে:

ইরানের নৌবাহিনীর আছে ১৭টি ট্যাকটিক্যাল সাবমেরিন, ৬৮টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ, ৭টি করভেট, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ, ১১টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ও ১৮টি লজিস্টিক ও সহায়ক জাহাজ।

ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন এবং ৪৯টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ।

বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে:

ইসরায়েল: দেশটির বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আয়রন ডোম, যা সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বড় অংশ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এ ব্যবস্থায় একটি রাডার আছে, যা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, এর গতি ও দিক নির্ণয় করে। নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বিশ্লেষণ করে ক্ষেপণাস্ত্রটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়বে কি না। হুমকি মনে হলে ‘মিসাইল ফায়ারিং ইউনিট’ তা গুলি করে ভূপাতিত করে। প্রতিটি লঞ্চারে ২০টি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থাকে।

ইসরায়েলে ১০টি আয়রন ডোম ইউনিট রয়েছে। মধ্য ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে অন্যান্য ব্যবস্থাও আছে। ডেভিড’স স্লিং ৪০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে। দ্য অ্যারো সিস্টেম ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম।

ইরান: গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটি ‘আজারাখশ’ (ফার্সি অর্থ বজ্র) নামের স্বল্প–পাল্লার ও নিচু উচ্চতায় আঘাত হানতে সক্ষম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করে। এটি ইনফ্রারেড, রাডার ও ইলেকট্রো-অপটিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে এবং যানবাহনে স্থাপনযোগ্য।

ইরানের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে ৪২টির বেশি রাশিয়া নির্মিত দীর্ঘ পাল্লার এস-২০০, এস-৩০০ ও স্থানীয়ভাবে তৈরি বাভার-৩৭৩; ৫৯টির বেশি মাঝারি–পাল্লার মার্কিন এমআইএম–২৩ হক, এইচকিউ–২জে ও খোরদাদ-১৫ এবং ২৭৯টি স্বল্পপাল্লার চীনের তৈরি সিএইচ–এসএ–৪ ও ৯কে৩৩১ টর-এম১ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্ট অনুসারে:

ইরানের কাছে অন্তত ১২ ধরনের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে টোন্দার-৬৯-এর পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার, আর খোররামশহর ও সেজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।

ইসরায়েলের আছে অন্তত চার ধরনের স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে এলওআরএর পাল্লা ২৮০ কিলোমিটার এবং জেরিকো-৩–এর পাল্লা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার।

পারমাণবিক সক্ষমতা

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই বলে মনে করা হয়। তবে তাদের একটি সমৃদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে এবং দেশটি একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্র পরিচালনা করে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ২০০০-এর দশকের শুরুতে এক ফতোয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। অবশ্য গত মে মাসে ইরান সতর্ক করে জানায়, দেশটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তারা তাদের পারমাণবিক নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারে।

Posted ১০:৪২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.