| বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতির ফলে। ধ্বংসস্তূপ হলেও নিজ বাড়িতে ফিরছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। দুর্ভিক্ষপীড়িত উপত্যকাটিতে ঢুকছে ত্রাণ। মিসর ও কাতার ট্রাম্পের এই শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম। পাশাপাশি গাঁজা উপত্যকায় যুদ্ধ চলাকালে অনেক আরব রাষ্ট্র প্রকাশ্যে যুদ্ধের নিন্দা জানাচ্ছিল। অনেক আরব আবার তখন নীরবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াচ্ছিল। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নথিপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে কাতারে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর সেই সামরিক সম্পর্ক গভীর সংকটে পড়ে।
ধারণা করা হচ্ছে এখন সেই সম্পর্কই গাজায় নবগঠিত যুদ্ধবিরতির তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়, ইসরায়েল ও ছয়টি আরব দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বাহরাইন, মিসর, জর্ডান ও কাতারে পরিকল্পনামূলক বৈঠকে একমত হয় ইসরায়েল ও হামাস একটি শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপ নিয়ে । এর ফলে হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল আংশিকভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, তাদের ২০০ সেনা ইসরায়েলে পাঠানো হবে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে। আর তাদের সঙ্গে যোগ দেবে সেই সব আরব দেশের সৈন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে এই নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হয়ে আছে।
এই ঘোষণার আগেই, সহযোগী আরব রাষ্ট্রগুলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ শেষ করার ২০ দফা পরিকল্পনায় তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আরব রাষ্ট্রগুলো একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশ নেবে, যারা গাজায় নতুন একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গঠনে প্রশিক্ষণ দেবে। দোহায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে। অথচ কাতার ছিল সেই দেশগুলোর একটি যারা নীরবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের তাগিদে নেতানিয়াহু কাতারের কাছে বিমান হামলার জন্য ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেন। এই কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল, কাতার, বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গোপনে যখন ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চলছিল, তখন আরব নেতারা প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেন। মিশর, জর্ডান, কাতার ও সৌদি আরবের নেতারা বলেন, ইসরায়েলের অভিযানটি কার্যত এক গণহত্যা। কাতারের নেতারা সবচেয়ে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কাতারের আমির বলেন, এটি ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক গণহত্যা’ এবং ইসরায়েল এক প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলে অভিহিত করেন। আগস্টে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলকে নিন্দা জানায়, একে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র বানানো’ ও ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যা দেয়। যদিও কাতার-সৌদি আরবের ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, তবু সেন্টকমের নথিতে দেখা গেছে যে দুই প্রভাবশালী উপসাগরীয় দেশই এই অংশীদারত্বে গুরুত্বপূর্ণ গোপন ভূমিকা পালন করেছে। চলমান শান্তি প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে না হলে মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হয়ে যাবে যদি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে না পায়। এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা অতীতেও দেখা গেছে।
একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান খোঁজার মাধ্যমে- ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর এবং গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন-ই এই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান।একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। নাহলে আবারও মুখোমুখি হতে হবে এই সমস্যার। হামাস এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে এই চুক্তি সবাই মেনে চলবে।
এটি কেবল গাজা নয়, এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিষয় নয়। তিনি পুরো অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার দিকে তাকিয়ে আছেন। এই অঞ্চলে শান্তিই একমাত্র বিকল্প। আমাদের মনে হয় সকলের এখন বলার সময় এসেছে যে যথেষ্ট হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি স্থাপনের এই প্রক্রিয়াকে একটি প্রকৃত সম্ভাবনার মুহূর্ত বলেই আমরা মনে করি।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh