সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

উদ্বাস্তু

উম্মে তাসবীহ   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উদ্বাস্তু

চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মিতুল ভীষণ চঞ্চল। সারাক্ষণই তার খেলায় মন। যতক্ষণ স্কুলে থাকে ততক্ষণ বন্ধুদের সাথে তার ভালো সময় কাটে কিন্তু বাসায় ফিরে এলেই নির্জনতা তাকে ক্রমেই বিরক্ত করে তোলে। মিতুলের বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন। সে সময়টা মিতুল থাকে তার দাদীর কাছে। মিতুলের একাকীত্ব কাটানোর জন্য বাবা-মা তাকে একটি আইপ্যাড কিনে দিয়েছেন যাতে কার্টুন দেখে বা গেইমস খেলে সে সময় কাটাতে পারে।

এ বাসায় সকাল বেলাটা কাটে দারুণ ব্যস্ততায়। মা সকাল সাতটায় মিতুলকে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে, টিফিন আর বই গুছিয়ে তৈরি করে দেন স্কুলের জন্য। বাবা তাকে স্কুলে পৌঁছে দেন আর সেই সাথে নিজেরাও দৌড়োতে থাকেন যার যার অফিসের সময় ধরতে। মিতুলের সকালে ঘুম থেকে উঠতে একদম ইচ্ছে করে না। মা-বাবাকে সারাদিন কাছে পায় না বলে রাতের অনেকটা সময় সে জেগে থাকতে চায়। তাদের কোল ঘেঁষে জেগে থাকলেও সে আসলে মেতে থাকে বাবার মোবাইল ফোনটি নিয়ে। ওখানে কত কত মজার মজার গেইম সে ডাউনলোড করে নিয়েছে। বাবা বাসায় ফিরে প্রায় দিন টিভিতে ফুটবল খেলা দেখেন। মিতুলও দুপুরবেলা মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পায় পাশেই বস্তির বাচ্চারা খানিকটা ফাঁকা জায়গায় ফুটবল খেলে। সেও আগে মোবাইলে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলত কিন্তু এখন সে নতুন কিছু গেইম খুঁজে পেয়েছে। কল অফ ডিউটি কিংবা জম্বির গেইমগুলোতে যতটা উত্তেজনা আছে তা এখন আর পাজল মিলিয়ে পাওয়া যায় না। ওখানে একের পর এক নতুন চ্যালেঞ্জ। তার নিজের একটি একাউন্টও আছে ফেইসবুকে। স্কুলের অনেক বন্ধু মিলে তারা এখন অনলাইন গ্রুপ করে গেইম খেলে। তাদের দুটো দল তৈরি হয়েছে খেলায়। স্কুলে গিয়েও বন্ধুদের সাথে গেইম নিয়ে কত গল্প হয়। এক দল অন্য দলকে কতটা হারাতে পারল তা নিয়ে বাকযুদ্ধও চলে। শুধু একটাই সমস্যা, তার স্কুলের পড়া তৈরি না হলে আর গেইম খেলতে খেলতে অনেক রাত হয়ে গেলে মা খুব বকাঝকা করেন তাকে। মিতুল ভারি গাল ফোলায়। ওঁরাও তো ঘুমোন না তখন, তাহলে ছোট বলে তাকেই কেন এত বকাঝকা! সে ভাবে, এসব ভারি অন্যায় বাবা-মায়ের। সে যখন বড় হবে তখন একদম বাবা-মায়ের কথা শুনবে না। কেন যে সে তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে না! দাদীও খুব জ্বালান। সারাক্ষণ তার সাথে খেলতে ডাকেন। বুড়োদের সাথে খেলতে তার একদম ভালো লাগে না।

এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। একদিন হঠাৎ মিতুলের দাদীর খুব জ্বর হলো। ডাক্তার দাদীকে কিছুদিনের বিশ্রাম দিলেন। কোনো পরিশ্রম যাতে না হয় দাদীর, সেই ব্যাপারে বাবা-মাকে সতর্ক করে গেলেন। তাই তখন মিতুলের দেখাশোনা করতে এলেন কমল ভাইয়া। মিতুল তো ভীষণ খুশি। কতদিন পর কমল ভাইয়া তাদের সাথে থাকতে এলেন। মিতুলের মামাতো ভাই কমল ভাইয়া এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার এখন বেশ ক’দিনের ছুটি। মিতুল শুনেছে তিনি একজন স্কাউট। অবশ্য মিতুল তখনও জানত না, একজন স্কাউট বলতে আসলে কী বোঝায়। সে শুধু শুনেছে কমল ভাইয়ার অনেক গুণ।

ভাইয়া যে দিন এলেন, তার পরদিন দুপুর বেলায় দাদীর ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে কথার আওয়াজ পেয়ে মিতুল থমকে দাঁড়াল। দেখল, ভাইয়া দাদীকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছেন আর থেমে থেমে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দিচ্ছেন। মিতুল অত ভালো বুঝতে না পারলেও যেন কিছুটা বুঝতে পারছিল পুরো দৃশ্যটা খুব পরিপাটি। ঘরটা এত সতেজ ওর আগে কখনো মনে হয়নি। সব জিনিস যেন গোছানো। এমনকি দাদীর কোলের ওপর একটা তোয়ালে পাতা, তার ওপর ট্রেতে সুপ্যের বাটি। দাদীর চুলগুলো আচড়ে টেনে বাঁধা, পরনে একটা নতুন ম্যাক্সি। মিতুল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একটু বিহ্বলতা নিয়ে যখন এই দৃশ্য দেখছিল, ভাইয়া তাকে দেখে হাসলেন। বললেন, ‘ওষুধের বাক্সটা নিয়ে আয় তো মিতুল।’

মিতুল তার হাতের ফোনটা রেখে বাক্সটা এগিয়ে নিয়ে এলে ভাইয়া কিছু ওষুধ বের করে দাদীকে খাইয়ে দিয়ে বললেন, ‘আজ থেকে নানীকে ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব তোর। আয় তোকে শিখিয়ে দিচ্ছি কোন ওষুধটা কিভাবে কোন বেলায় দিতে হবে।’ মিতুল ভীষণ অবাক হয়ে গেল। সে তো অনেক ছোট, সে কী করে পারবে! কিন্তু কমল ভাইয়া তাকে দিয়ে প্রত্যেকটা ওষুধের নাম পড়িয়ে দেখে নিলেন আর কয়েকবার করে তার মুখে শুনে নিলেন সে সব বুঝতে পেরেছে কি না। ভাইয়া এরপর তাকে একটার পর একটা কাজে ব্যস্ত করে রাখলেন। যেমন, দুজনে মিলে সেদিন ঘরটা গুছিয়ে ফেললেন, বারান্দায় লাগানো ফুলের গাছে আর দাদীর শখের সব্জির গাছগুলোতে পানি দিলেন, মিতুলের কালার বুকে তার পছন্দের ছবিতে রঙ করা হলো, সন্ধ্যায় চমৎকার একটা নাস্তা তৈরী করে তিনজনে মিলে খাবারটা খেয়ে চা পান করলেন আর তারপর মিতুলকে হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করলেন। মিতুলের খুব ভালো লাগছিল এতসব নতুন নতুন কাজ করতে আর ভাইয়ার সাথে গল্প করতে। তার অবশ্য কয়েকবার মনে হয়েছিল একটু ফোনটা হাতে নিয়ে গেইম খেলতে কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় সে আর সুযোগ পেল না। সেদিন বাড়ি ফিরে মা-বাবা যখন দেখলেন, কমল ভাইয়া আর মিতুল মিলে তাদের জন্য খুব সুন্দর, আরামদায়ক একটা পানীয় তৈরি করে রেখেছে, ক্লান্ত তারা এত খুশি হলেন যে মিতুলের মনে হলো, এরকম আলো তাদের মুখে সে আগে দেখেনি। কারও জন্য কিছু করতে পারার আনন্দ সে যেন এই প্রথম পেল। এভাবে হাসলে বাবা-মাকে যে এত ভালো লাগে সে আগে তো জানত না! রাতে তারা সবাই মিলে একে অন্যকে টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে আর খাওয়া শেষে সব পরিষ্কার করতে সাহায্য করল।

সে রাতে মিতুল আর না জেগে থেকে কমল ভাইয়ার সাথে পাশের ঘরে ঘুমুতে গেল। রাতে বিছানায় শুয়ে সারাটা দিন চিন্তা করতে তার যেন সে দিনটাকে অন্য রকম লাগছিল। সারা দিন ব্যস্ত থাকায় ক্লান্তিতে তার চোখে ঘুম নেমে আসছিল এত আরাম করে যে, সে ফোনের কথাও আর ভাবতে পারল না। মিতুল ভাইয়া তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প বলছিলেন, ‘এক দেশে ছিল এক ছোট্ট ছেলে। সে ছিল সত্যবাদী আর ভীষণ দায়িত্বশীল। সবার সুখে দুখে সে পাশে থাকত…’

শুনতে শুনতে ছোট্ট মিতুল ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল। তার স্বপ্ন জুড়ে সে রাতে এলো বাবা, মা, দাদীর হাসিমুখ। একটি দায়িত্বশীল সুখী পরিবার।

Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8704 বার পঠিত)

অমর জিয়া
অমর জিয়া

(2059 বার পঠিত)

ঠ্যালা সামলা!
ঠ্যালা সামলা!

(2040 বার পঠিত)

আইসবার্গ থিওরী
আইসবার্গ থিওরী

(1853 বার পঠিত)

বন্ধন
বন্ধন

(1442 বার পঠিত)

ছিপ
ছিপ

(1403 বার পঠিত)

খড়কুটো

(1306 বার পঠিত)

বৃক্ষ, অতঃপর
বৃক্ষ, অতঃপর

(1209 বার পঠিত)

কেউ ভালো নেই
কেউ ভালো নেই

(1157 বার পঠিত)

কুহক ও কুহকী
কুহক ও কুহকী

(1129 বার পঠিত)

একটা বোবা ছেলে
একটা বোবা ছেলে

(1108 বার পঠিত)

প্রত্যাশা
প্রত্যাশা

(1103 বার পঠিত)

রম রোদ
রম রোদ

(1055 বার পঠিত)

গাঁয়ের বিল
গাঁয়ের বিল

(1026 বার পঠিত)

কষ্ট নিদারুণ
কষ্ট নিদারুণ

(1004 বার পঠিত)

কবিকে ভয় কেন
কবিকে ভয় কেন

(987 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.