বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১
বক্তব্য রাখছেন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস। বামে গিয়াস আহমেদ এবং ডানে শাহ নাওয়াজ।
বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্্ন তুলেছেন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস। দেশটিতে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টিও উঠে আসে তার বক্তব্যে। যুক্তরাষ্ট্র হাউজ ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস গত ২৩ এপ্রিল, শুক্রবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবিসিসিআই আয়োজিত ফান্ড রেইজিংয়ে বক্তব্য রাখছিলেন । সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও ইমিগ্রেশন এল্ডার হোম কেয়ার’র সিইও গিয়াস আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ফান্ডরেইজিং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবিসিসিআই’র কো’চেয়ারম্যান ও গোল্ডেন এজ হোমকেয়ার’র প্রধান নির্বাহী শাহ নাওয়াজ।
ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে করোনায় মৃতদের জন্য দোয়া মোনাজাত।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ব্যাপাওে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা সচেতন। বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, নির্বাচন ব্যবস্থা ও মানবাধিকার নিয়ে উগ প্রকাশ করেন প্রভাবশালী এ কংগ্রেসম্যান। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বক্তব্য রাখছেন গিয়াস আহেমদ।
এছাড়া মানবাধিকার লংঘন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রসঙ্গেও কথা বলেন, কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস। নেতা বা জনপ্রতিনিধি কে হবেন তা জনগণেকেই নির্ধারণ করতে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের ভেঙ্গে পড়া রাাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টির উপরও গুরুত্বারোপ করেন এই ডেমোক্র্যাট নেতা। গ্রেগরি মিকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায়। স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ ও দেশটির জনগণকে ভালোবাসি। চট্টগ্রামে জাতিসংঘের অর্থায়নে এশিয়ান হিউম্যান ইউনিভিার্সিটি নামে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বাংলাদেশ ককাসের উদ্যোগে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন গ্রেগরি মিকস। তিনি বলেন, তৎকালীন বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান জোসেফ ক্রাউলির সঙ্গে তিনিও ককাসের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন।
কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকসের সাথে ফান্ড রেইজিংয়ে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দ।
নিউইয়র্কের স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও কথা বলেন, কংগ্রেসম্যান মিকস। তিনি বলেন, কুইন্স যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কাউন্টি। এখানে বিভিন্ন জাতি. ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। এখানে বর্তমানে নানা ধরণের অমানবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, শান্তি ও মানবাধিকার বিঘ্নকারীরা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যতে প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশে গড়তে চাই। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গ্রিগরি মিকস। তাকে সমর্থনের জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি সবসময় বাংলাদেশী সহ সকল কমিউনিটির পাশে থাকবো। তবে কংগ্রেসে বাংলাদেশ ক’কাসে নূতনদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি এতে ভূমিকা রাখতে পারেন না বলে জানান।
কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকসের সাথে আবুল কাশেম ও মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল।
এবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ বলেন, কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস বাংলাদেশর প্রকৃত বন্ধু। তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে বরাবরই কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেবার আহ্বান জানান। গিয়াস আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জুইশ ভোট, ব্ল্যাক ভোট যদি গুরুত্ব বহন করে তাহলে মুসলিম ভোটও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে ৪ থেকে ৫ টা সুইং স্টেট আমরা দেখতে পাই। মূলত এই সুইং স্টেটগুলোই ডিসাইড করে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। এসব সুইং স্টেটে অনেক মুসলিম ভোট আছে। মাত্র ৫’শ থেকে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ওই রাজ্য ইলেকটোরাল জয়ী হন। তাই আমরা মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে আগামী নির্বাচনগুলোতে আমরা এ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবো। ফান্ড রেইজিং সফল করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এবিসিসিআই’র কো’চেয়ার শাহ নাওয়াজ তার বক্তব্যে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকসের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গ্রেগরি মিকস বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির অকৃত্রিম বন্ধু। তার নেতৃত্বে স্থানীয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এখন অনেক শক্ত অবস্থানে। তিনি বলেন, গ্রেগরি মিকসের নেতৃত্বে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গ্রেগরি মিকস যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের একজন প্রভাবশালী সদস্য। ইউএস হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভে তিনি ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান। ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৬ ও ৫ থেকে একটানা নির্বাচিত হয়ে আসছেন গ্রেগরি মিকস। ইউএস কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ও সফর করেছেন তিনি। ডেমোক্র্যাটিক অর্গানাইজেশন অব কুইন্স কাউন্টির চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকস। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বারী হোম কেয়ারের সিইও আসেফ বারী, ফাউমা ইনিসিয়েটিভ এর সিইও কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফাহাদ সোলায়মান, বিএনপি নেতা সোলায়মান ভূইয়া, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, শাহরিয়ার রহমান, রিসফা রহমান, মোঃ কাশেম, পরান চৌধুরী, মোহাম্মাদ এ আজাদ প্রমুখ।
Posted ১:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh