বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   সোমবার, ১২ মে ২০২৫

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। ১২ মে (সোমবার) এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশের কথা রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের। নতুন অভিবাসন নীতি অনুযায়ী—বিদেশি নাগরিকেরা আর ৫ বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

নতুন নীতিতে, এখন থেকে অধিকাংশ অভিবাসীকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ‘বাস্তব ও স্থায়ী অবদান’ রেখেছেন, তাহলে তিনি ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আবেদন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যারা নিয়মিত আয়কর দেন, ন্যাশনাল হেলথ সেন্টারে (এনএইচএস) চিকিৎসক, নার্স বা হাসপাতালের কর্মী হিসেবে কাজ করেন, বা ব্যতিক্রমী স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত আছেন—তাঁদের জন্য এই সুযোগ থাকবে।

স্থায়ী বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার মানে হলো—কল্যাণ ভাতা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার এবং ব্রিটিশ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাওয়া। এই নতুন নিয়ম অনেকটা ডেনমার্কের মতো, যেখানে অভিবাসীদের সমাজের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যেতে এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ডেনমার্কের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ সময়সাপেক্ষ।

ব্রিটেন সরকারের ভাষ্যমতে, নিট অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে নিট অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার। একই সঙ্গে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে লেবার পার্টিকে চাপে ফেলতে থাকা রিফর্ম ইউকে পার্টির (নাইজেল ফারাজের দল) হুমকিও মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সমালোচনা করে বলেছে—তারা মোট অভিবাসন সংখ্যা কমাতে কোনো নির্দিষ্ট সীমা (ক্যাপ) নির্ধারণ করেনি। নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ নিশ্চিত করতে আজ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি করবে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা।

ভিসা পেতে ইংরেজি দক্ষতায় কড়াকড়ি, বাড়ছে শর্ত

যুক্তরাজ্যে ভিসা পেতে হলে এখন থেকে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আরও কঠিন ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। নতুন অভিবাসন নীতিতে বলা হয়েছে, তাঁদের এখন এমন পর্যায়ের ইংরেজি জানতে হবে যা ‘এ’ লেভেল সমমানের—যেখানে তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীলভাবে সামাজিক, একাডেমিক ও পেশাগত পরিবেশে কথা বলতে পারবেন। এর আগে শুধু জিসিএসই সমমানের ইংরেজি জানলেই চলত, যেখানে শুধু দৈনন্দিন বিষয় বুঝতে পারা এবং ভ্রমণের সময় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা থাকাই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতো।

এখন থেকে শুধু ভিসার জন্য নয়—যারা স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্ব চাচ্ছেন, এমনকি যারা বিদেশি শিক্ষার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই এ-লেভেল মানের ইংরেজি বা বি-২ লেভেলের ইংরেজি জানার শর্ত প্রযোজ্য হবে।

আর প্রথমবারের মতো, যারা সফল ভিসা আবেদনকারীর সঙ্গী, সন্তান বা অভিভাবক হিসেবে যুক্তরাজ্যে যেতে চান, তাঁদেরও এ-১ স্তরের ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে—যেখানে ইংরেজির প্রাথমিক জ্ঞান যাচাই করা হয়। যদি তাঁরা যুক্তরাজ্যে আরও দুই বছর থাকতে চান, তাহলে তাঁদের আরও ভালো ইংরেজি জেনে এ-২ স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

বিদেশ থেকে কেয়ার কর্মী নেওয়া বন্ধ, নিয়োগ দিতে হবে দেশের ভেতর থেকেই

এ বছরের শেষ থেকে কেয়ার হোমগুলো আর সরাসরি বিদেশ থেকে কর্মী আনতে পারবে না। এখন থেকে তাদের যুক্তরাজ্যে থাকা বিদেশি নাগরিক বা ব্রিটিশ নাগরিকদের কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো বিদেশি কর্মী রয়েছেন, যারা কেয়ার ভিসায় এসেছেন, কিন্তু পরে তাঁদের স্পনসরশিপ বাতিল হয়েছে। ওই ৪০ হাজার অভিবাসী থেকেই কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে কেয়ার হোমগুলো। তাই আমরা বিদেশ থেকে নতুন নিয়োগ বন্ধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কেয়ার সেক্টরে কর্মীদের “ন্যায্য মজুরি” নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়েও এগোচ্ছি। কেয়ার সেক্টরের মূল সমস্যাগুলো কোনো দিনই ঠিকভাবে সমাধান হয়নি। এবার আমরা সেটাই করব।’

কেয়ার ভিসার পাশাপাশি অন্য ভিসায় আসা অভিবাসীদেরও এই সেক্টরে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।

নতুন এই সিদ্ধান্তের পর প্রায় ৫০ হাজার ভিসা কম ইস্যু হবে বলে ধারণা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যেখানে স্বাস্থ্য ও কেয়ার ভিসার সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ হাজার ৭০০ এ—এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার জন ছিলেন সামাজিক কেয়ার ওয়ার্কার। কনজারভেটিভ সরকার বিদেশি কেয়ার ওয়ার্কারদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর কমে আসে এই সংখ্যা।

লেবার পার্টির নতুন এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছেন কেয়ার ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী মার্টিন গ্রিন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় ধাক্কা। এই সেক্টর বহুদিন ধরে বাজেট স্বল্পতা, অতিরিক্ত ব্যয় আর কর্মী সংকটের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। বিদেশি কর্মী নিয়োগ যথাযথ সমাধান না হলেও, অনেকটা শেষ সম্বলের মতো ছিল সেটি। কোনো বিকল্প না খুঁজে আগেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হলো—এটা কেবল অদূরদর্শিতা নয়, নিষ্ঠুরতাও।’

অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানো

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য এবার আসতে চলেছে কঠিন সময়। শ্বেতপত্রে নতুন প্রস্তাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে ছোটখাটো কোনো অপরাধ করেও পার পাবে না কেউ। ছোটখাটো নিয়মভঙ্গের অপরাধ করলেও তা সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

নতুন এই নিয়মের আগ পর্যন্ত শুধু এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে তবেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরে রিপোর্ট করা হতো এবং তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে ছোট অপরাধ করলেও ভিসা বাতিল হয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি বাড়বে।

এ ছাড়া নতুন এই ব্যবস্থায় যদি কোনো বিদেশি যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অপরাধীর তালিকায় ওঠেন, তাহলে তাঁর অপরাধ যত ছোটই হোক, তাঁকে ‘গুরুতর অপরাধী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ফলে তিনি আর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে সুরক্ষা পাবেন না। এমনকি নিজ দেশে অপরাধ করে তা গোপন রেখে যুক্তরাজ্যে এলে তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে এই নিয়ম। তাঁর অপরাধ সম্পর্কে জানা মাত্রই দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বিদেশি কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড বৃদ্ধি

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড আবারও স্নাতক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা হবে। বরিস জনসনের সময় এই শর্ত বাতিল করে এর পরিবর্তে একটি পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যেখানে কেবল এ-লেভেল সমমানের যোগ্যতা এবং বেতনের ভিত্তিতে বিদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া হতো।

তবে এখনো নিয়োগকর্তারা পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারবেন—কিন্তু কেবল সেসব খাতে যেগুলোকে সরকার ‘জরুরি খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং যেখানে জনবল সংকট দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে, যেমন—আইটি, নির্মাণ ও প্রকৌশল।

এই খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ কেবল ‘অস্থায়ী ও নির্দিষ্ট মেয়াদে’ অনুমোদিত হবে এবং নিয়োগকর্তাদের একটি নতুন সরকারি সংস্থার কাছে প্রমাণ দিতে হবে যে তাঁরা ব্রিটিশ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য অ্যাপ্রেনটিসশিপ ও অন্যান্য প্রকল্প চালাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নতুন বাধা আসছে

শ্বেতপত্রে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলে বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের শুধু ভালো বেতনের চাকরি হলেই হবে না—চাকরিটা হতে হবে অবশ্যই দক্ষতা-ভিত্তিক, গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের। এখন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, ডিগ্রি শেষ করার পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা দুই বছর (আর পিএইচডি করলে তিন বছর) যুক্তরাজ্যে ‘গ্র্যাজুয়েট ভিসা’ নিয়ে চাকরি খুঁজতে পারবেন। এই সুযোগকে স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার পথ বা ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই নতুন নিয়ম করল যুক্তরাজ্য সরকার।

তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার অভিবাসন কমাতে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা সংখ্যাগত সীমা নির্ধারণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিট অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর পরিকল্পনা নিচ্ছি। আপনি জানেন, অতীতে কনজারভেটিভ সরকারগুলো অনেক লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর কিছুই পূরণ হয়নি। ফলে, এসব লক্ষ্য সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুণ্ন করেছে। এ কারণেই আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণের পথ অনুসরণ করছি না।’

এদিকে কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, তারা অভিবাসনের ওপর বাধ্যতামূলক সীমা (ক্যাপ) চালু করার পক্ষে। পাশাপাশি অভিবাসন ইস্যুতে মানবাধিকার আইনের কিছু দিকও বাতিল চায় তারা। আর এ ইস্যুতে আজ সোমবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে বলেও জানিয়েছে দলটি। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, ‘স্টারমার একসময় বিপজ্জনক বিদেশি অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তিনিই অভিবাসন নিয়ে কঠোর হচ্ছেন—এটা হাস্যকর!’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘স্টারমার নিজের দলের এমপিদের দিয়েই ১০ বছর আবাসকাল ও অবদানের শর্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। অথচ এখন সেটিই কার্যকর করতে চলেছেন। কনজারভেটিভদের নেওয়া পদক্ষেপেরই কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তিনি।’

Posted ৬:১১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ মে ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.