বাংলাদেশ অনলাইন | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের তিন দিন পর মিলন হোসেন (২৫) নামে এক যুবকের লাশের ৯ টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহসংলগ্ন পদ্মার চরে অভিযান চালিয়ে লাশের টুকরোগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবার ও পুলিশ বলছে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এস কে সজীবের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাঁকেসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টাকা লেনদেন নিয়ে তাদের সঙ্গে মিলনের বিরোধ ছিল। এর জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
মিলন হোসেন দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহিরমাদি গ্রামের মওলা বক্সের ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই-ব্লকের ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। মিলন একটি বেসরকারি কলেজে টেক্সটাইল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন– সজল ইসলাম, জহির রায়হান বাবু, ফয়সাল আহমেদ, ইফতি খান। জড়িতরা একে অপরের পরিচিত।
মিলনের পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত বুধবার সকালে সজলের ফোনকল পেয়ে শহরের ভাড়া বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। ওই দিন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন। পুলিশ তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে সজলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে মিলনকে হত্যা করে পদ্মার চরে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রাতে তাদের নিয়ে পদ্মার চরে লাশ উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। শনিবার সকাল পর্যন্ত চরের বিভিন্ন স্থানে চারটি ব্যাগে ভরে পুঁতে রাখা লাশের ৯ টুকরো উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশকে জানায়, মিলন ও সজল অনলাইনে যৌথভাবে ব্যবসা করত। বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিলনকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসে সজল। সেখানে সজীবসহ আরও কয়েকজন আগে থেকেই অবস্থান করছিল। তারা সেখানেই মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাতে লাশ পদ্মার চরে নিয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে চারটি ব্যাগে ভরে বালুর মধ্যে পুঁতে রেখে শহরে ফিরে যায় অভিযুক্তরা।
লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। সকাল থেকে মর্গের সামনে বসে ছিলেন মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুনসহ অন্য স্বজন। লাশ দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিলাপ করতে করতে মিমি খাতুন বলেন, ‘নিখোঁজের পর মিলনকে উদ্ধারে সজলের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তার হাতেপায়ে ধরেছি; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সে এ বিষয়ে কিছু জানে না বলেছিল। সজীব ও সজল মিলে আমার স্বামীকে ঠান্ডামাথায় খুন করেছে। কোটি টাকা চাইলেও আমরা দিয়ে দিতাম। তারা কেন আমার স্বামীকে হত্যা করল?’
তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আমার স্বামীর ফোন চালু ছিল। আগের দিন সন্ধ্যায় থানায় যাই। থানায় ফোনের লোকেশনও দেখাইছে। গিয়ে যে একটু তদন্ত করবে, তা করেনি পুলিশ।’
মিলনের শ্বশুর মহিবুল হক বলেন, গত রোজার ঈদের পর পারিবারিকভাবে আমার মেয়ে ও মিলনের বিয়ে হয়। নিখোঁজের পর পুলিশ প্রথমে তাকে উদ্ধারে সেভাবে কাজ করেনি। সময়মতো চেষ্টা করলে মিলনকে জীবিত পাওয়া যেত।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। দুপুরে ময়নাতদন্তের পর মিলনের লাশ পরিবারের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত সজীবের নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মাদক, চাঁদাবাজি, হামলাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার দুই বছরের সাজা হয়।
Posted ৮:১৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh