| বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে ঐক্যের আহ্বান জানালেও বাস্তবে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে অনৈক্য বিরাজ করছে। এই অনৈক্য নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজপথেও গড়িয়েছে। বস্তুত ভোটের হিসাবনিকাশ যত এগিয়ে আসছে, অনৈক্য ততই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। এটি জনমনে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি করছে। এক দলের সঙ্গে অপর দলের মতপার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়, বরং এটাই স্বাভাবিক। একেক দলের মতাদর্শ ও কর্মপরিকল্পনা একেক রকম। এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে; কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে অনৈক্য কখনো কাম্য নয়। কারণ এর ফলে গণতন্ত্রের শত্রুরাই লাভবান হবে। ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের পথ সহজ হবে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নেবে সুযোগসন্ধানীরা। তারা নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। এমনকি তা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চক্রান্তকে জোরদার করতে পারে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন সম্ভব হয়েছিল জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যের কারণে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে যে শক্তিগুলো সেদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল, আজ তাদের মধ্যেই বিভেদ ও অনৈক্যের সুর তীব্র হচ্ছে। এই বিভেদ দ্রুত মিটিয়ে ফেলা উচিত।
গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের রাজনীতিতে ছিলেন, তাদের মধ্যকার বিভেদ এবং একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনা সাধারণ মানুষকে হতাশ করছে। এটি শুধু হতাশাই নয়, এটি গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা এবং প্রাপ্তির পথকেও রুদ্ধ করে দিচ্ছে। নেতারা প্রকাশ্যে ঐক্যের ডাক দিলেও বাস্তবে ক্ষমতার সমীকরণ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং স্বার্থের সংঘাত অনৈক্যের জন্ম দিচ্ছে। যখন দেশের সামনে দ্রুত নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তখন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর এমন বিভক্তি নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সংশ্লিষ্ট দলগুলো দ্রুত নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একতাবদ্ধ হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পারস্পরিক কোন্দল ও বিভাজন যে কোনো বড় অর্জনের পথকে বিপন্ন করে। গণ-অভ্যুত্থান অর্জিত হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যা এখনো বহুলাংশে অনিশ্চিত। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান, তারা যেন নিজেদের মধ্যকার ক্ষুদ্র স্বার্থ ও মতপার্থক্যকে দ্রুত মিটিয়ে ফেলে এবং দ্বৈতনীতি পরিহার করে। পরিহার করতে হবে বিরোধকে উসকে দেওয়ার মতো পালটাপালটি বক্তব্যও। শুধু কথায় ঐক্যের চিড়ে ভিজবে না, দরকার বাস্তব পদক্ষেপ ও সহনশীল মনোভাব। জনগণের সামনে একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আসতে হবে। জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রাখাই এখন সময়ের দাবি। এটা ঠিক, ভিন্নমত থাকবে; কিন্তু তা যেন অপশক্তির জন্য সুযোগ হয়ে ওঠার পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকে সব পক্ষকেই খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস আর হতাশা ক্রমেই ভারী হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য জাতি প্রত্যাশা করে না। সঙ্গত কারণে সবার মতো আমাদেরও চাওয়া, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো প্রকাশ্যে না হলেও পর্দার অন্তরালে পরস্পরের সাথে বসে জাতীয় স্বার্থে নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ও অনৈক্য দূর করতে সহনশীলতার পরিচয় দেবে।
Posted ১২:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh