| বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসন বর্বর হামলায় ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা। ইসরায়েলের এই বর্বর হামলার কারণে সাত লাখের বেশি শিশু ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আর এই সময়ে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৩০ শিশু। খবর আল-জাজিরার জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ বলেছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজার সাত লাখের বেশি শিশু ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ইউনিসেফ বলেছে, এ অঞ্চলে মানবিক সহায়তার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাদের টেকসই ও নির্বিঘ্ন সহায়তার জন্য দরকার যুদ্ধরিবরতির। সেই সঙ্গে যেসব শিশুকে জিম্মি করা হয়েছে, তাদের নিরাপদে মুক্তি দাবি করেছে ইউনিসেফ।এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৪০ জনে।
নিহতদের মধ্যে শিশুই ৪ হাজার ৬৩০ জন এবং নারী ৩ হাজার ১৩০ জন। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও জ্বালানি সংকটের কারণে ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলের সব হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি সংকটে জেনারেটর বন্ধ থাকায় সেখানকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফায় ৩৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে সাত নবজাতকও রয়েছে। গাজায় যে বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েল, এ নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে পক্ষপাত করছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। গাজাবাসীকে ‘অমানুষ’ এবং ইসরায়েলি হামলার ন্যায্যতা দিয়ে আসছে এদের বেশির ভাগ প্রতিবেদন। এ নিয়ে বিশ^ব্যাপী নিন্দা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি খবর বড় হয়েছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের নিয়ে বর্ণবাদী ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট।
তোপের মুখে পড়ে তারা সেই ব্যঙ্গচিত্র ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আর পক্ষপাত করার অভিযোগ তুলে নিউইয়র্ক টাইমসের কার্যালয়ে সংবাদকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। ওদিকে ইসরায়েল উল্টো দাবি করেছে, ৭ অক্টোবরে হামাসের ‘হঠাৎ’ হামলা সম্পর্কে চারটি পশ্চিমা গণমাধ্যম আগে থেকেই জানত। তবে সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, এপি ও রয়টার্স।
হামাসের হামলার পর পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে দখলদার রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ভারী হচ্ছে।
গাজায় চলমান ইসরায়েল বাহিনীর আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে প্রতিনিয়তিই আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার এই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালল প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। এক ব্যঙ্গচিত্রে ফিলিস্তিনিদের ‘অমানুষ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, ‘হিউম্যান শিল্ডস’ শিরোনামের ওই ব্যঙ্গচিত্রে এক ব্যক্তির অবয়ব আঁকা হয়েছে; যার গায়ে গাঢ কালো ও ডোরাকাটা স্যুট। যার ওপর সাদা অক্ষরে লেখা ‘হামাস’।
লোকটির ভ্রু বিশালাকার, নাক হাস্যকরভাবে চওড়া। তার শরীরের চারপাশে চারটি শিশু বাঁধা। এর মধ্যে দুটি শিশু তার কোমরে, একটি বুকে আর অপর শিশুটি বাঁধা তার মাথায়। কার্টুনটিতে ফিলিস্তিনি নারীর প্রতীক হিসেবে ওই ব্যক্তির পেছনে একজন বোরকা পরা নারী দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের পেছনে একটি ফ্রেমে আরব নেতাদের প্রতীক হিসেবে আঁকা রয়েছে একজন সাদা আলখেল্লা পরা লম্বা দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তির ছবি। ওই ব্যক্তিটি তার ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে ধরে বলছে, ‘কী দুঃসাহস, ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করছে।’
ব্যঙ্গচিত্রটি এঁকেছেন দুবারের পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মাইকেল রামিরেজ। এর আগেও ফিলিস্তিনিদের কটাক্ষ করে ছবি এঁকেছেন তিনি। বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কঠোর সামলোচনা ও প্রতিবাদের মুখে ওই ব্যঙ্গচিত্র নিউজ পোর্টাল থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের খবর প্রচারে পক্ষপাতমূলক আচরণ করার অভিযোগে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে শত শত সংবাদকর্মী। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতির সঠিক খবর প্রকাশ না করে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে সংবাদমাধ্যমটি। এর প্রতিবাদে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে সংবাদমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ও লবিতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করেন তারা। ‘রাইটার্স ব্লক’ নামে একটি সংগঠন এ বিক্ষোভের আয়োজন করে।
ইসরায়েলের নতুন অভিযোগ : ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার বিষয়ে চারটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আগে থেকেই জানত বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলপন্থি পর্যবেক্ষক সংস্থা অনেস্টরিপোর্টিংয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে চারটি সংবাদমাধ্যমই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অনেস্টরিপোর্টিং নিজেদের অলাভজনক সংস্থা হিসেবে দাবি করে থাকে।
তাদের লক্ষ্য হলো সংবাদমাধ্যমগুলোর ইসরায়েলবিরোধী একপক্ষীয় অবস্থান প্রকাশ করা। এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, হামাস যখন সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছিল, তখন সেখানে গাজাভিত্তিক আলোকচিত্র সাংবাদিকরাও ছিলেন। এ ধরনের আচরণ নৈতিকভাবে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। এ প্রতিবেদনের পর রয়টার্স, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইসরায়েল সরকার। তবে চারটি গণমাধ্যমই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Posted ১২:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh