| বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচ শতাধিক নিরীহ ও নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ ঘটালেও ইসরাইল এ জন্য দায়ী করছে হামাসকে এবং পশ্চিমা দেশগুলোও চোখ বন্ধ করে ইসরাইলের বক্তব্যই সমর্থন করেছে। এ হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন বাসিন্দা ‘নিরাপদ’ ভেবে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের মিসাইল হামলা ও অভিযানের পর তেল আবিব গাজায় গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে ইতোমধ্যে শিশু ও নারীসহ সাত হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং বিপুল সংখ্যককে আহত করেছে। ইসরাইল সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
ইসরাইল বলছে, তারা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যুদ্ধের নীতি হলো বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু না করা। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবীদের সুরক্ষা দেওয়া। অথচ ইসরাইলের বোমার শিকার হচ্ছে হাসপাতাল এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরাও। ইসরাইলের এই নজিরবিহীন নৃশংসতার পেছনে যে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর প্ররোচনা ও সমর্থন আছে তা স্পষ্ট। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও বছরের পর বছর সেখানে হামলা চালানোর পরও পশ্চিমা বিশ্ব নীরব থেকেছে। অথচ ইসরাইলের ভেতরে হামাসের অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় সব পশ্চিমা দেশ সোচ্চার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলে গেছেন অভয় দিতে। দ্রুততম সময়ে দুটি বিমানবাহী রণতরি পাঠানো হয়েছে।
অথচ গাজায় এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের পরও তারা খাদ্য ও ওষুধ পাঠানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। হাসপাতালে নজিরবিহীন বোমা হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের সেই দেশগুলোও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে, যারা এত দিন আক্রমণকারী ও আক্রান্তের মধ্যে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। পশ্চিমা দেশগুলোকে সেটা ভুলে গেলে চলবে না যে ধ্যপ্রাচ্য সংকটের মূল হচ্ছে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের ভূখন্ড দখল। হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালালে পাশ্চাত্যে দেশগুলো বিচলিত বোধ করে। কিন্তু ইসরাইল যে সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড অন্যায়ভাবে দখল করে আছে, সে সম্পর্কে কিছু বলে না। তাদের এই দ্বিমুখী নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইসরায়েলের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার রক্ষার অধিকারের বিষয়টি স্বীকার করলে একই সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে ফিলিস্তিনিদেরও অধিকার আছে তাদের মাতৃভূমি উদ্ধার করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের। ইসরাইল-ফিলিস্তি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিরপেক্ষতার ঝান্ডাধারী পশ্চিমা গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রগুলোর চরিত্র পরিষ্কার হয়ে উঠছে গোটা বিশ্ববাসীর কাছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমে হামাসের প্রতি একতরফা দোষারোপ এবং ইসরাইলের প্রতি নির্লজ্জ পক্ষপাতে বিস্মিত বিশ্ববিবেক।
চলমান ফিলিস্তিন- ইসরাইল সংঘাত নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর একতরফা প্রতিবেদনে হতবাক বিশ্ব। তারা ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে নেই। পাশ্চাত্যের মিডিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। যেসব দেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ও যারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বুদ্ধি-পরামর্শ দেয় তাদের গণমাধ্যম একটি যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে পারছে না। পশ্চিমের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া দেখলে ইসরাইলের অত্যাচারের কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন- এই যদি হয় পরিস্থিতি, তবে তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে কোন মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার কথা শেখায়। পশ্চিমা গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও নিশ্চুপতার প্রতি প্রশ্ন তুললে ভুল হবে না যে কেনো তারা গাজায় যুদ্ধাপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রচারিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে না?
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh