ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
বেশি দিনের কথা নয়। গোষ্ঠিই ছিল গ্রামীন সমাজে ক্ষমতা, আধিপত্য, নেতৃত্ব তথা বিচার-সালিশের চালিকা শক্তি। বড় গোষ্ঠী মানেই ছিল পেশীশক্তির আঁকড়, শক্তিমান গোষ্ঠির আস্ফালনের মাধ্যম। লাঠির জোর যার বেশী সেই ততবেশি ক্ষমতাবান। অন্যদের দুর্বল মনে করে ইচ্ছেমত কতৃত্ব ফলাতে পারত। পাড়ায় পাড়ায়, সম্প্রদায় সম্প্রদায়ে সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্ভর করত শক্তিমত্তার উপর। বেশি লাঠির সমাহার করতে পারাটা শক্তিমত্তার পরিচায়ক বলে গণ্য হতো।
কে বেশী ক্ষমতাবান তা নির্ভর প্রথমত লাঠির জোর, দ্বিতীয়ত কার জমির পরিমান বা সম্পদ, সম্পত্তি বেশী। লেখাপড়ার অবস্থান এ ক্ষেত্রে অনেক নীচে ছিল। এর অনেক উপরে স্হান ছিল আত্মীয়তার বলয়, নৈকট্য এবং আত্মীয় গোষ্ঠির শক্তিমত্তা। এমন অবস্থায়,চিত্রে বড়ো ধরণের পরিবর্তন এসেছে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর। এ সময় থেকে গ্রামীন সমাজ কাঠামোতে মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার এ দু’টো রাজনৈতিক প্রতিকী ক্যাটেগরি সমাজ প্রবেশ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আত্মীকরণ প্রক্রিয়া প্রথমোক্ত ক্যাটাগরী আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করে তবে নিষ্কলুষভাবে হয়নি। দ্বিতীয় দলটির আঁতাত গোপনে এখনও চলমান ।
গ্রামে এখন পল্লবিত হচ্ছে দালাল টাউট শ্রেণীর লোক জনের অপ্রতিরোধ্য পদচারণা। তারা মামলা মোকদ্দমায় সাধারন মানুষকে জড়িয়ে চরম ভাবে হয়রানি করছে, নিঃস্ব করে দিচ্ছে। এরা বেশিরভাগই অল্পশিক্ষিত তবে খুঁটির জোরে বলীয়ান। এসব খুঁটির শেকড় স্হানীয় রাজনৈতিক কাঠামো, বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা যাদের গ্রামে জমিজমা, আত্মীয় স্বজন আছে তাদের সাথে স্বার্থনির্ভার ।
ঐতিহ্যগত সমাজ কাঠামো, সচেতনতা, নেতৃত্ব ধরণ, সামাজিক, রাজনৈতিক গ্রামীণ সংস্কৃতি , বিনোদন বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে কার্যকারিতা হারিয়েছে। মদ, জুয়া, বিভিন্ন ধরনের নেশা এবং এসবের সাথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি জাঁকিয়ে বসেছে। গ্রামের মানুষের সহজ, সরল জীবন আগের মতো নেই। ছল-চাতুরির ব্যবহারে অন্যের সম্পত্তি ভোগ দখল এখন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত যারা বিদেশে থাকে তাদের প্রতি এ ধরণের অনাচার, অত্যাচার, দুর্নীতি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় সামাজিক ব্যাধি। প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থায় ধ্বস নেমেছে। দুর্নীতির আধিক্য দমন
সম্ভাবনাকে দারুণভাবে অনুৎসাহিত করছে পদে পদে, প্রতিনিয়ত।
প্রশাসনের এবং স্হানীয় সরকারের সকল স্তরে, পর্যায়ে ঘুষ, উৎকোচ, দুর্বিসহ স্বজনপ্রীতি ইত্যোকার সীমাহীন বিস্তার সমাজকে কলুষিত করেছে প্রবল ভাবে আকর্ণ ঢেউয়ের উত্তাল উন্মাদনায়। লুন্ঠন মাত্রাহীন ভাবে চলমান যার মাধ্যমে রাতারাতি বিত্তবান হওয়া সম্ভব সে ফিকিরে গ্রামীন সমাজে পূর্বে বর্ণিত গোষ্ঠিসমূহ সামগ্রিকভাবে অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ফাঁদে ফেলে, ফাঁকি দিয়ে কিংবা সংলিষ্টদের যোগসাজশে লুটপাট করে পুঁজিগঠন প্রচেষ্টায় নিয়তই সফলকাম হচ্ছে দুষ্টু চক্রে জড়িত ব্যক্তিরা।
নৈতিকতা বিবর্জিত এ কাজে অনেক মানুষ, পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। স্টক মার্কেটে জোচ্চুরি, বিনিয়োগের প্রলোভনকে পুঁজি করে অর্থ, জমি আত্বসাত গ্রামে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুয়া, নেশাদ্রব্যের বেঁচা-কেনা ও ব্যবহার গ্রামের সহজ সরল জীবনযাপনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুষ্টলোকেরা অনৈতিক পন্হায় দ্রুততম সময়ে বড়লোক বা বিত্তবান হতে চায়। এজন্য তারা নিত্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করে। লন্ঠন শামিল অপকর্ম সাধারণত ব্যাংকিং ব্যবস্থা শেয়ার বাজার, অন্যের জমি সুকৌশল আত্মসাৎ এ বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে প্রাধান্য পেলেও অচিরেই তা জাতীয় পর্যায়ে প্রসারিত হয়। বলাইবাহুল্য, অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে সচেতন জুতসই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এখন কদাচিৎ দেখা যায় ।
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh