| বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
যদিও ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’ এমন একটি প্রবচন আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সূচনাকাল থেকে ঘৃণার রাজনীতির যে অশুভ সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার একক দাবিদার শেখ মুজিবুর রহমান, তার কন্যাসহ তার অনুসারীরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘৃণার বিশাল বিষবৃক্ষে পরিণত করেছেন। ফলে শেখ মুজিবের সময়ে তার প্রতিপক্ষ বা বিরোধিতা করা সামান্য সংখ্যক মানুষ ‘বিষে বিষক্ষয়’ তত্ত্ব প্রয়োগ করে মুজিব কন্যা এবং তার দলকে দেশ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন। কিন্তু বিষাক্ত সাঁপকে প্রচন্ড আক্রোশে পিটিয়ে থেতলে ফেলার পরও সেটি যেভাবে ফণা তুলতে চেষ্টা করে, সেভাবে হিংসা উস্কে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তার পোষ্যদের প্ররোচিত করতে চেষ্টা করছে আত্মম্ভরী কথাবার্তা বলে।
এত বড় পতনের পরও যদি একজন নেতা, একটি দল এবং দলটির অনুসারীদের মধ্যে অনুশোচনা না জাগে, বিবেকের তাড়নায় না ভোগে, এমনকি তার প্রতিপক্ষও যে তাদের সাথে পুনরায় একই আচরণ করবে এবং একই ধারার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে, তা নি:সন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের বিগত ৫৫ বছরের রাজনীতিতে বার বার এই পরম্পরা চলতে থাকায় দেশ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধন করতে পারেনি এবং জনগণ বার বার প্রতারিত হয়েছে, বিনা কারণে নিপীড়িত হয়েছে, বিপুল সংখ্যক হতাহত হয়েছে এবং তা শুধুমাত্র এক দলের প্রতি আরেক দলের ঘৃণা-বিদ্বেষকে উপজীব্য করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইচ্ছার কারণে। পুরো প্রবচনের স্থান করে নিয়েছে, ‘পরস্পরের প্রতি ঘৃণাই রাজনীতির শেষ কথা।’ ঘৃণাই আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদকে প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঘৃণার রাজনীতিই দুর্বৃত্তায়ন, ঘৃণার রাজনীতি ও এক শ্রেণির রাজনীতিককে লাগামহীন করে দিয়েছে।
যে কারণে শীর্ষ রাজনীতিবিদ হোক, আর ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মী হোক, সবাই পরস্পরকে ‘দেখে নেওয়ার’ আস্ফালন করা ছাড়া কোনো কথা বলে না। তারা তাদের কথায় বিষ উগড়ে দেয়। তাদের কথায় মনে হয়, বাংলাদেশ এখনো কোনো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়, এটি এখনো কোনো ঔপনিবেশিক শক্তির বিশৃঙ্খলাপূর্ণ উপনিবেশ, যাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের ফলাফল হিসেবে বহি:শক্তির সুযোগ এসেছে দেশটি সহজে তাদের কব্জায় নিতে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে দেশে মীরজাফর পাওয়া কঠিন কাজ নয়। মীরজাফরের সময় রাজনীতি বলে কিছু ছিল না, সবই হতো উর্ধতনদের ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে’। এখন রাজনীতি আছে, ঘৃণার রাজনীতি অগণন মীরজাফর সৃষ্টি করেছে। তারা দেশকে বাইরের শক্তির হাতে তুলে দিয়ে তাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতেও প্রস্তুত। কারণ তারা মুখে যা বলেন, অন্তরে পোষণ করেন ভিন্ন কিছু।
তারা জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণের কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন, কিন্তু ক্ষমতা পেলেই জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ নিজ মর্জি অনুযায়ী কাজ করে জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং ঘৃণা ছড়ায়। স্বাধীনতার চেতনা, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ আওয়াজ তোলা আওয়ামী লীগের মোক্ষম এক অস্ত্র হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে। সযত্নে লালন করছে তারা এইসব চেতনা।
বিভাজনের রাজনীতির খেসারত দিয়েও হুশ হয়নি তাদের। রাজনীতির পটপরিবর্তন হয়েছে বারবার এবং প্রতিটি পরিবর্তনে আশা করা হয়েছিল রাজনীতিতে সুস্থতা ফিরে আসবে। কিন্তু এ আশা পূরণ হয়নি। কখনো কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুস্থতা ফিরে আসবে? স্বাধীনতার পর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে যা প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। এখন অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। তবুও আমরা আশা ছাড়তে পারি না যে জাতি এক স্থানে স্থির থাকবে। কোনো না কোনো পথ বের হয়ে আসবে কিছু মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার সাথে।
Posted ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh