| শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি-সংগৃহীত
গৃহযুদ্ধে উত্তাল মিয়ানমার। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভিযানে একের পর এক এলাকা হারাচ্ছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে জান্তা সেনারা।
বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচার বিমান হামলার পাশাপাশি সেই পুরনো কৌশল ব্যবহার করছে জান্তা বাহিনী। গ্রামে গ্রামে আগুন দেয়া হচ্ছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে বাড়ির পর বাড়ি। খাক হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও-এর প্রতিবেদন মতে, চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সাগাইংয়ের খিন-উ উপশহরের একটি গ্রামে অভিযান চালায় জান্তা সেনারা। এ সময় গ্রামে বাড়ি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
অভিযানের দুদিন পর বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ওই গ্রাম থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে এই অঞ্চলের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী খিন-উ পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তার আরও একটি ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। বিদ্রোহী বাহিনী ও জান্তার সেনার মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে সেনারা।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমার নাও-এর পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের পোন্নাগিউন উপশহরের একটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জান্তা কর্তৃপক্ষ মিলিটারি কাউন্সিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর দায় চাপিয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, তাদের সেনারা ওই গ্রামে অভিযান চালিয়েছিল।
চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারে তিন বছর পূর্ণ করল সবশেষ সেনাশাসন। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে জান্তা সরকার। গণতন্ত্রপন্থি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো একের পর এক অঞ্চল দখল করে ক্রমেই রাজধানীর দিকে এগোচ্ছে। যেকোনো সময় পতন হতে পারে স্বৈরশাসনের।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতি জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরও একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
আরাকান আর্মি জানিয়েছে, ম্রাউক-উ টাউনশিপে বেশ কয়েক দিন লড়াইয়ের পর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৫৪০-কে তারা পরাজিত করেছে। সেখানে এলআইবি ৩৭৭ ও ৭৭৮ ব্যাটালিয়নের অন্তর্গত ঘাঁটিগুলোও ঘেরাও করেছে তারা।
এএ আরও জানায়, গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে এলআইবি-৫৪০-এর সদর দফতরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। তারা এখন টাউনশিপের অবশিষ্ট দুটি সামরিক ঘাঁটি এবং অন্যান্য জান্তা ফাঁড়িকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরুর পর থেকে এই জাতিগত জোট উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ দখলে নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০টি শহর এবং চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ।
মিয়ানমারের সামরিক শাসকের সঙ্গে চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর জোটটি জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের আক্রমণ বন্ধ করেছিল।
আরাকান আর্মি থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য। এই অ্যালায়েন্সে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিও (টিএনএলএ) রয়েছে।
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জানায়, গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাখাইনের উপকূলীয় রামরিতে জান্তা তাদের সেনা বাড়ালে সেখানেও সংঘর্ষ হয়। স্থলযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর রামরিতে আরও সেনা পাঠায় মিয়ানমার জান্তা। বুধবার যুদ্ধবিমান ও গানবোট থেকে রামরিতে তারা গুলি চালায়। গত ১৩ নভেম্বর রাখাইনে অপারেশন-১০২৭ আবারও শুরু করার পর থেকে এএ ১৬০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে, যার মধ্যে সিত্তওয়ের কাছে পাউকতাও শহর এবং চিন রাজ্যের পালেতওয়া টাউনশিপও রয়েছে।
Posted ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh