| বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। কর্মসংস্থান, খাদ্য, পানীয়, আবাসন, যোগাযোগ এবং নিরাপত্তার সুযোগ ও নিশ্চয়তা মানুষকে এক স্থানে বসবাসে উদ্বুদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল সিটি নিউইয়র্ক এসব কারণে মানুষের বসবাসের প্রিয় এক স্থান। এখানে মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা ব্যাপক এবং নিরাপত্তাজনিত নিশ্চয়তাও একেবারে কম নয়। কিন্তু বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের রাজধানি খ্যাত নিউইয়র্ক এখন মানুষকে আর আগের মতো টানতে পারছে না, অথবা আগের মতো সাশ্রয়ী সিটি বলেও ভাবতে পারছে না।
সেন্সাস ব্যুরোর পরিসংখ্যান এবং গণমাধ্যমের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে জীবনযাত্রার ব্যয় এতো বেড়েছে যে করোনা মহামারী চলাকালে গত তিন বছরে প্রায় পাঁচ লাখ লোক নিউইয়র্ক সিটি থেকে ওইসব সিটিতে চলে গেছে, যেখানে আবাসন ব্যয় কম, আয় তুলনামূলকভাবে অধিক। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় জনবহুল সিটি লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসকারী জনসংখ্যা নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
সে কারণে তিন বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে পাঁচ লাখ লোক কমে গেলে হয়তো সহজে চোখে পড়ে না। কিন্তু অনেক কর্মক্ষেত্রে লোকের ঘাটতি পড়লে তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোতে অন্যান্য সকল সূচকের চেয়ে বাড়ি ভাড়ার ওপর নির্ভর করে মানুষের বসবাসের প্রবণতা। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের অনেক স্টেট ও ছোট সিটিগুলোতে বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ নিউইয়র্কে গড় বাড়িভাড়ার অর্ধেকেরও কম।
অতএব, নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে যদি বাড়ি ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে দোষণীয় বলা যাবে না। ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির একটি বিরাট অংশ, তারা যে দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে এসে থাকুক না কেন, নিউইয়র্কের চাকচিক্যের কথা শুনে তারা তাদের কল্পনায় নিউইয়র্ককে স্থায়ী ঠাঁই দেয় এবং নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করে। একথা সত্য যে, নিউইয়র্কে ইমিগ্রান্টরা কাজ শুরু করে খুবই কম মজুরিতে এবং তারা ওয়ার্ক পারমিট বা বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পাওয়ার আগে নগদ অর্থে অবৈধভাবে কাজ করেও দিনাতিপাত করতে পারে।
অনেকে শেষ পর্যন্ত রয়ে যায় এখানে পরিচিত মানুষের সাহচর্য লাভের সুযোগ সবচেয়ে বেশি, অন্যান্য স্টেটের যেকোনো সিটির চেয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে চিকিৎসা সেবা লাভের সুযোগ বেশি। কিন্তু মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় বাড়ি ভাড়া। নিউইয়র্ক সিটিতে জনসংখ্যার তুলনায় বাড়ির সংখ্যা কম বলে স্বল্প আয়ের লোকজনের সাধ্যের মধ্যে বাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই বাড়িতে গাদাগাদি করে থাকছে দুই বা তিনটি পরিবার। মানবেতর এক অবস্থা।
নিউইয়র্কে একটি রুমে বাস করে, কিচেন-বাথরুম শেয়ার করে যদি মাসে আটশো, এক হাজার ডলার ভাড়া গুনতে হয়, তার চেয়ে মিশিগান, মিনেসোটা, ফ্লোরিডা এবং আরো অনেক সিটিতে নিউইয়র্কে এক রুমে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটানোর চেয়ে একই ভাড়ায় বা আরো কম ভাড়ায় ওইসব সিটিতে বসবাস করা অনেক সম্মানজনক। অতএব, নিউইয়র্কে বসবাসকারী অনেকে সিটি ত্যাগ করেছেন এবং নিউইয়র্কে ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করার চেয়ে সাশ্রয়ী সিটিতে চলে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে মনে হয় না।
নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারীরা যত আয় করুন না কেন, ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তাদের প্রকৃত আয় কমে যায় এবং তারা তাদের জীবনযাত্রার কাংখিত মান বজায় রাখতে পারেন না। এমনকি নিউইয়র্কে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন বার্ষিক যে অর্থ আয় করেন, তা দিয়েও তাদের পক্ষে এ সিটিতে কাংখিত মান বজায় রেখে বসবাস করা অসম্ভব? তারা দশ বছর আগেও জীবনযাত্রার যে মান বজায় রাখতে পারতেন, তা বর্তমান আয়ে সম্ভব নয়? অতএব তারাও নিউইয়র্ক ছাড়ছেন ভালোভাবে জীবন কাটানোর উদ্দেশ্যে।
Posted ১২:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh