মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
কলঙ্কময় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধান ‘ওয়ান ইলেভেন’ এর খলনায়ক জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের মত অবাধ, মুক্ত দেশে বসবাস করেও তিনি যেন খাঁচায় বন্দী। যেন তিনি লুকিয়ে আছের ইঁদুরের গর্তে। বাড়ি থেকে একা বের হতে পারেন না তিনি। কোথাও বেড়াতে যাওয়া, কোনো কফি শপ বা রেস্টুরেন্ট, বা কেনাকাটা করতে যেতে পারেন না কোনো শপিং মলে। বেঁচে থেকেও তিনি যেন গৃহবন্দী। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে ইঁদুরের মতো গৃহকোণের কোনো গর্তে লুকিয়ে থাকতে হবে। বিবেকের তাড়না নিয়ে কাটাতে হবে কলঙ্কময় দুর্বিষহ জীবন। কি অপরাধ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক এই সেনাপ্রধান?
উত্তর একটাই; ‘ওয়ান ইলেভেন’ খ্যাত তথাকথিত এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তিনি বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছেন ভারতের হাতে। যার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে। ভারত এখন পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ শাসন করছে। বাংলাদেশ যেন এখন ভারতের একটি অঘোষিত অঙ্গরাজ্য। ‘ওয়ান ইলেভেন’ এর পর ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা আর কখনো ভারতের রাডার থেকে হারাতে দেব না।’ ভীরু জেনারেল মঈন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। কারণ, দেশে গেলে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্য অনেকে মনে করেন যে, বর্তমানে যে সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে, ঠিক এসময় তার দেশে যেতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে অর্থ্যাৎ বর্তমান রেজিমের পরিবর্তন হলে জেনারেল মঈন কখনো দেশে যেতে পারবেন না।
এই জেনারেলের বয়স এখন ৭০ বছর। সকল অঘটন ঘটিয়ে, বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটা আরাম আয়েশে কাটানোর উদ্দেশ্যে তিনি বেছে নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো মুক্ত মানবাধিকারের মহান দেশকে। কিন্তু বিধি বাম। এই দেশে মাটি যেন তাকে সহ্য করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রে আগমণের পর তিনি কিছুদিন বসবাস করেছেন নিউইয়র্কের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকায়। একটি বাড়ির বেসমেন্টে থাকতেন তিনি। কোথাও তেমন বের হতে পারতেন না। কারণ একটাই, যদি কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী আমেরিকান তাকে বাগে পেয়ে উত্তম-মধ্যম দেয়। তিনি জানেন, এখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সিংহভাগই তাকে ঘৃণা করেন।
কিন্তু নিউইয়র্কের এক লাওয়ারিশ কুকুর একদিন মঈন ইউ আহমেদ রাস্তায় বের হলে তাকে ধাওয়া করে এবং কামড়ে দেয়। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে এবং বাংলাদেশে। বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ঘটনাটি নিউইয়র্কে ছিল ‘টক অফ দ্য কমিউনিটি’। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কমিউনিটির বহু লোক সরস মন্তব্যও করেছেন যে, ‘আহা, চিনিল কেমনে!’ এ ঘটনার পর মঈন আরো কিছুদিন নিউইয়র্কে ছিলেন। এরপর তিনি বেছে নেন নিউইয়র্ক থেকে ১২শ’ মাইল দূরের ফ্লোরিডাকে। সেখানেও তার পরিস্থিতি একই রকম। লুকিয়ে থাকতে হয় গৃহকোণে। কারণ ফ্লোরিডাতেও রয়েছে অনেক বাংলাদেশী, যারা এখনো বিস্মৃত হতে পারেনি মঈন ইউ আহমেদের কর্মকান্ড। সেখানেও তিনি হেনস্তা হতে পারেন। জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো তাকে এভাবেই অভিশপ্ত জীবন কাটাতে হবে বলে মনে করেন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীরা। অথচ বাংলাদেশের অহঙ্কার সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি নন্দিত জীবন কাটাতে পারতেন, কিন্তু অপকর্মের খেসারত হিসেবে তাকে কাটাতে হচ্ছে ঘৃণিত, নিন্দিত জীবন ।
Posted ৩:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh