মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
মিলওবাকি উইসকনসিনে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিন ব্যাপী ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন। এই কনভেনশন থেকে ডেলিগেইটসদের ভোটাভোটির মাধ্যমে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও তার রানিংমেট কামালা হ্যারিসকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। তারপর “বাইডেন হ্যারিস” জুটিই নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান জুটি ট্রাম্প-পেন্সের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কোভিড-১৯ এর কারণে এবারকার কনভেনশন ধরণ হচ্ছে ভিন্ন। মিলওয়াকি উইসকনসিন সেন্টারে অর্থাৎ কনভেনশনস্থলে ডেলিগেইটস সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত হতে পারছেন না। অনেক সিনেটর, কংগ্রেসম্যান দলীয় গভর্নররা পারছেন না উপস্থিত হতে। ভোট নেয়া হবে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রাথী জো বাইডেনও তার রানিংমেট কামালা হ্যারিস কনভেনশনে উপস্থিত না হয়ে নিজ অবস্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করে বক্তৃতা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৮৩০-এর দশক থেকে দলীয় জাতীয় কনভেনশনের রীতি চালু রয়েছে। এ সমাবেশ ঘিরে ভোটারদের থাকে বাড়তি আগ্রহ। দলের পক্ষ থেকে থাকে জমকালো আয়োজন। এবার একদম আলাদা। মঞ্চ-গ্যালারি মিলিয়ে উপস্থিত হাতে গোনা কয়েকজন। চোখে পড়েেছ না লাল-নীল-বেগুনি রঙের বেলুন-বৃষ্টি। থাকবে না সমর্থকদের উল্লাস-উচ্ছ্বাস। হবে না প্রতিনিধিদের সমাগম।
ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটিক দলের চার দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে সোমবার। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের কারণে একেবারে ব্যতিক্রমী এ সম্মেলনেও নজর পুরো বিশ্বের। ডেমোক্র্যাট দল থেকে এবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মূলত ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনে ৭৭ বছর বয়সী এ প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আনুষ্ঠানিক প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোষণা করতেই এ সম্মেলন। ‘আমরাই জনগণ’, ‘নেত্বত্বই আসল বিষয়’, ‘আমেরিকার প্রতিশ্রুতি’-স্লোগানে উইসকনসিন রাজ্যের মিলাউকির উইসকনসিন কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয়েছে সম্মেলন। প্রায় ৫০ হাজার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ও সমর্থকের উপস্থিতিতে ১৩-১৬ জুলাই এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে তা এক মাস পিছিয়ে ১৭-২০ আগস্ট সম্মেলনের দিনক্ষণ ধার্য করা হয়। চার দিনই স্থানীয় সময় রাত ৯-১১টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে এ চলছে সম্মেলন । উইসকনসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট। আগের ধাঁচে সম্মেলন না হলেও এর প্রস্তুতিতে লাখ লাখ ডলার খরচ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০-রও কম মানুষ এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসও সশরীরে মঞ্চে উপস্থিত থাকছেন না। সাধারণত সম্মেলনে দলীয় প্রায় চার হাজার ৮০০ প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত করেন। দলীয় নীতি কী হবে-তা নির্ধারণ করেন। এরপর ধারাবাহিক বক্তব্য দেন। এবার প্রায় অর্ধেক প্রতিনিধির আগেই রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হছে। জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিস দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হচ্ছে উইলমিংটন দেলোয়ার থেকে।
সোমবার কনভেনশনের উদ্বোধনী দিনে বক্তৃতা করেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, সাবেক রিপাবলিকান গভর্নর জন কাসেস, নিউইয়র্ক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো, মিশিগান গভর্নর গ্রিটচেন হুইটম্যান আরও অনেকে। সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন অনৈতিক প্রেসিডেন্ট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন। মিশেল বলেন, সঠিক নির্দেশনার পরিবর্তে আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিকট পেয়েছি বিভক্তি, বিশৃংখলা ও চরম হতাশা। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষন করে মিশেল বলেন, আপনারা ২০০৮ ও ২০১২ সালে যেভাবে ভোট দিয়েছিলেন এবারও ঠিক সেইভাবে ভোট দিবেন। ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তার অতি শক্তিশালী বক্তৃতায় বলেন, ট্রাম্প যদি জয়ী হয় আমাদের গণতন্ত্রের পরাজয় ঘটবে। স্টিমুলাস ও ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার জন্যে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সাড়াশী আক্রমন করে বলেন, এর জন্য সম্পুর্ন দায়ী ট্রাম্প প্রশাসন। সিনেটর স্যান্ডার্স বলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন পরিবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। লোকজন জানেনা তারা কিভাবে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিবে। সিনেটর বলেন, আমেরিকানরা যখন সমস্যায় জর্জরিত তখন প্রেসিডেন্ট নিউজার্সীতে এসে গল্্ফ খেলছেন। সিনেটর বলেন,্ এটা হচ্ছে ‘রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল’ অনেকটা সেরকম।
ওহাইয়োর রিপাবলিকান দলীয় সাবেক গভর্নর জন কাসিস ডেমোক্র্যাট দলীয় কনভেনশনে এসে সকলের নজর কাড়েন। গভর্নর কাসিস তার বক্তৃতায় বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন শান্তি বিঘ্নিতকারী, হতাশা সৃষ্টিকারী ও ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক পরিচয় একজন রিপাবলিকান হওয়ার জন্যে আমি গর্ববোধ করি। কিন্তুু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বাইডেনকে সমর্থনের বিকল্প নেই। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক রিপাবলিকান দলীয় গভর্নর প্রার্থী সেগ হুইটম্যান, নিউইয়র্কের সাবেক রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেসম্যান সুজান মলিনারী, নিউজার্সির সাবেক রিপাবলিকান দলীয় গভর্নর ক্রিস্টি হুইটম্যান সমর্থন করেন জো বাইডেনকে। তারা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্র্ম্পূন ব্যর্থ। মিশিগান গভর্নর গ্রিটচেন হুইটম্যান তার বক্তৃতায় বলেন, মিাশগান এবার জো বাইডেনের জন্যে প্রস্তুত।
মঙ্গলবার কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনে বক্তৃতা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক সেক্রেটারী অফ স্টেট জন কেরী, সিনেট মাইনরিটি লিডার সিনেটর চাক শ্যুমার, ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান টম পেরেজ, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও রোজলিন কার্টার, ঝিল বাইডেন, অবসর প্রাপ্ত জেনারেল কলিন পাওয়েল, ক্যারোলাইন কেনেডি ও তার ছেলে সহ অনেকে। রাত ১০টা দিকে ৫০ স্টেট ও ৭ টেরেটোরি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেলিগেটসরা ভোট দিতে থাকেন বাইডেনকে। ভোট গ্রহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পরে কনভেনশন থেকে জো বাইডেনকে অফিসিয়ালী মনোনয়ন দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তারপর পরই জো বাইডেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্ষণিকের জন্যে উপস্থিত হয়ে বলেন, “আমি আমার অন্তুরের অন্তস্থল থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, বৃহস্পতিবার দেখা হবে।”
উল্লেখ্যযোগ্য বক্তাদের মাঝে নিউইয়র্কের সিনেটর ও সিনেট মাইনরিটি লিডার চাক শ্যুমার বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে আমাদের জয়ী হয়ে সিনেটের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে। শুধু হোয়াইট হাউজ নয় আমাদেরকে জয়ী হতে হবে সিনেটেও। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার হুইল চেয়ারে বসে তার বক্তৃতায় বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের জাতির ইতিহাসে জো বাইডেন হচ্ছেন সঠিক ব্যক্তি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন আমরা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছি। ভাল কথা আমরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে শিল্প উন্নত দেশ, কিন্তু আমাদের বেকারত্বের হার এখন উর্ধ্বমুখী। ঠিক এই রকম সময় ওভাল অফিস হওয়া দরকার নেতৃত্ব দেয়ার স্থান। কিন্তু তার পরিবর্তে সেখানে দেখা যাচ্ছে চরম বিশৃংখলা। বুশ প্রশাসনের সেক্রেটারী অফ স্টেট জেনারেল কলিন পাওয়েল কনভেনশনে বক্তৃতা দিয়ে বলেন, আমি জো বাইডেনের প্রতি আমার সমর্থন ব্যক্ত করছি। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন সম্ভাব্য ফার্স্ট লেডি ঝিল বাইডেন। কনভেনশনের তৃতীয় দিনে গতকাল বুধবার বক্তৃতা করেন সাবেক প্রেসিডেন্টট বারাক ওবামা, হাউজ স্পিকার নেন্সী পেলোসী, প্রভাবশালী সিনেটর এলিথাবেথ ওয়ারেন ও সাবেক সেক্রেটারী অব স্টেট হিলারী ক্লিনটন। সবশেষে জো বাইডেনের রানিংমেট সিনেটর তুমুল হর্ষধ্বণির মাঝে তার মনোনয়ন গ্রহণ করে বক্তৃতা করেন।
আজ বাইডেন মনোনয়ন গ্রহণ করবেন বৃহস্পতিবার চতুর্থ বা শেষ দিন। শেষ দিনে কনভেনশনে বক্তৃতা করবেন বক্তৃতার যাদুকর বলে পরিচিত নিউজার্সীও সিনেটর কোরি বুকার, সাবেক ইন্ডিয়ানা সাউথবেন্ড সিটির মেয়র পিটি বুটিগেগ ও গভর্নও টামি বল্ডইউন। সবশেষে জো বাইডেন তার মনোনয়ন গ্রহণ করে বক্তৃতা করবেন।
Posted ৭:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh