বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
বিশেষ সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখছেন ডা. নাজমুল খান। পাশে মসজিদের কর্মকর্তাবৃন্দ।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেএমসি’র গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। গত ১২ মার্চ রোববার প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্রাস্টিবোর্ড সদস্য বাছাইয়ের জন্য প্রস্তাবিত সিলেকশন কমিটিতে গঠন প্রক্রিয়ায় আনীত সংশোধনী সর্ব সম্মতিভাবে গৃহীত হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির চেয়ারম্যান বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ডাঃ নাজমুল এইচ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি ছিলো নজিরবিহিন ঘটনা। জেএমসির সেক্রেটারি আফতাব মান্নানের উপস্থাপনায় বিশেষ সাধারণ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র প্রেসিডেন্ট ডাঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফার্মাসিস্ট জায়েদুর রহমান। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। স্বাগত বক্তব্যে বক্তাগণ বিশেষ সাধারণ সভার প্রেক্ষাপট এবং জেএমসি’র সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে ঐক্য ও ভ্রাতৃতের বন্ধন আরো দৃঢ় করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এজন্য তারা সবাইকে সহনশীল ও আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত সর্ববৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার-জেএমসি। প্রতি দু’বছর অন্তর প্রতিষ্ঠানটির ১৩ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি ও ৯ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টিবোর্ড। পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। জেএমসির গঠনতন্ত্রের ৬ষ্ঠ ধারা ও ৬.৫ উপধারা অনুযায়ী নির্বাহী নূতন কর্মকর্তাদের মনোনীত করার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করে বিদ্যমান কমিটির দায়িত্বরত বোর্ড অব ট্রাস্টি ও কার্যনির্বাহী কমিটি। বাছাই কমিটি জেএমসির আজীবন সদস্যদের নিকট থেকে কার্যনির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের নূতন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নামের তালিকা আহ্বান করে। বিশেষ সাধারণ সভায় বাছাই কমিটি সাধারণ সদস্যদের সামনে নতুন কমিটি দুু’টি উপস্থাপন করে।
প্রস্তাবিত কমিটির পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্য সমর্থন জানালে অনুমোদিত হয় নূতন কমিটি। এটাই ছিলো গঠনতান্ত্রিক রীতি এবং সেভাবেই বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাহী ও ট্রাস্টিবোর্ড কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার নজিরও রয়েছে। তবে নির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকর্তা নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় নানা ধরণের জটিলতার সৃষ্টি হয় অতীতে। বিভক্তি দেখা দেয় সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে। পরিস্থিতি এতোটাই চরম আকার ধারণ করে যে এসব নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধের পাশাপাশি ঘটনা ঘটে মামলা মোকদ্দমার। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নির্বাচনের পরিবর্তে বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্বাহী ও ট্রাস্টি বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও অব্যাহত থেকে যায় মতবিরোধ। বিশেষ করে নির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ড কর্মকর্তা যারা বাছাই করে তাদের সেই বাছাই কমিটির গঠন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে। সম্প্রতি এসব নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
গতবছর ২০২২-২০২৩ সালের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটি মহল মামলা ঠুকে দেয় আদালতে। নির্বাহী ও ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য গঠিত বাছাই কমিটির গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা। পরবর্তীতে সাধারণ সভায় নতুন কমিটি অনুমোদন পেলেও গোটা বাছাই প্রক্রিয়ায় নতুন করে পরিবর্তন আনতে গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তারই আলোকে বর্তমান ট্রাস্টি বোডের্র ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ নাজমুল এইচ খানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই কমিটি জেএমসির সাধারণ সদস্য, বিগতদিনে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটির কর্মকর্তা হিসেবে জেএমসি’র সেবায় নিয়োজিত ছিলেন তাদের সাথে মত বিনিময় করেন। পরামর্শ করেন গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ও এটর্নির সাথে। শেষ পর্যন্ত তারা একটি চূড়ান্ত সংশোধনী আনতে সক্ষম হন গঠনতন্ত্রে। বিশেষ করে নির্বাহী কমিটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য বাছাই কমিটি কিভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে।
গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৭ সিলেকশন কমিটির ৭.১ উপধারায় এই সংশোধনী আনা হয়েছে। ডাঃ নাজমুল এইচ খান সিলেকশন বা বাছাই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় আনীত সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশেষ সাধারণ সভায়। পরে তিনি সংশোধনী বিষয়ে হাউজে অনুমোদনের জন্য আহ্বান জানালে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। সিলেকশন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনায় নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্রাস্টি বোর্ডের স্বচ্ছতা আরো বাড়বে। এছাড়া সাধারণ সদস্যরা অধিকতর সুযোগ পাবে। এসময় গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির অন্যান্য সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, কাজী আঃ হালিম, নূরুল হক, মঞ্জুর চৌধুরী, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাঈদ রহমান লাবু ও আজহার হক।
নানাবিধ মতবিরোধের কারণে যারা এতোদিন সভায় অংশ নেননি তারাও সেদিন সংশোধনীতে অনুমোদন দেন। এই বিশেষ সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে জেএমসির চলমান সংকটের অবসান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাঃ নাজমুল খান।
উল্লেখ্য নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি পরিচালিত সর্ববৃহৎ এবং বহুমুখী ইসলামী প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার-জেএমসি। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেএমসি’র বর্তমান ভবন। আল মামুর মসজিদ ভবনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয় ১৯৯৭ সালে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার। তারও প্রায় দুই দশক পূর্বে ১৯৭৪ সালে স্থানীয়ভাবে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি স্থান ঘুরে বর্তমান ভবনে কার্যক্রম শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের আল মামুর মসজিদ, হাফেজী মাদ্রাসা-জামিয়া কুরানিয়া একাডেমী ছাড়াও পৃথক ঠিকানায় রয়েছে আল মামুর ইসলামী স্কুল। এছাড়া নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে উইকেন্ড ইসলামী স্কুল। সবকিছু মিলিয়ে জেএমসি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রতি ওয়াক্তে কয়েক শত মুসল্লি নামাজ আদায় করেন এবং জুমার নামাজে সমবেত হন কয়েক হাজার মুসল্লি। সাধারণ মসুল্লিদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত জেএমসিকে কেন্দ্র করে জ্যামাইকা হিলস ও হিলসাইড এভিন্যুতে গড়ে উঠেছে ভিন্ন ধর্মী প্রতিবেশ। একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে এর খ্যাতি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে।
Posted ২:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh