বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে তার দুর্বল বিতর্কের জন্য ভ্রমণজনিত ক্লান্তিকে দায়ী করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচনি বিতর্কের আগে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি ভ্রমণের কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন এবং এ কারণে তাকে খুব বেশি স্মার্ট দেখা যায়নি। ৮১ বছর বয়সী বাইডেন তার শেষ ভ্রমণ শেষ করেছিলেন গত ১৫ জুন। আর বিতর্ক হয় ২৭ জুন। এদিকে বাইডেন গত মঙ্গলবার এক ঘনিষ্ঠ মিত্রের কাছে ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন যে, তার পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলের ভেতর থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ যখন বাড়ছে তখনই এমন তথ্য সামনে এলো।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের সময় কিছু ক্ষেত্রে জবাব দিতে সংগ্রাম করতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ায় একটি ব্যক্তিগত তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটা কোনো অজুহাত নয়, তবে এটি একটি ব্যাখ্যা। তিনি তার পারফরমেন্সের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তার পুনরায় নির্বাচিত হবার জন্য এটি সহায়ক নয়। বাইডেন গত মাসে দুই সপ্তাহে ইউরোপে দুটি আলাদা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ইতালি থেকে রাতভর ভ্রমণ করে ফিরে এসে ১৫ জুন তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে একটি তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ঐ দিনই তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে আসেন। এর আগে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বিতর্কের দিন বাইডেন ঠান্ডায় আক্রান্ত ছিলেন। তবে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নিজে তার কোনো অসুস্থতার কথা বলেননি। হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিতর্কের সময় তিনি ঠান্ডার কোনো ওষুধ সেবন করেননি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে বাইডেন ক্যাম্প ডেভিডেও ছয় দিন কাটিয়েছেন। এটি ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে প্রেসিডেন্টের অবকাশ কেন্দ্র। বাইডেনের শিডিউল বা দৈনিক কর্মসূচির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, প্রেসিডেন্টের দিন শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং প্রতিদিন ঘুমের জন্য সময় পান। পত্রিকাটি আরও বলেছে যে, তিনি ভ্রমণের কারণে খুবই ক্লান্ত ছিলেন। যে কারণে বিতর্ক প্রস্তুতি দুই দিন কমিয়ে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল, যাতে করে তিনি ডেলাওয়ারে তার বাড়িতে বিশ্রাম নিতে পারেন। বাইডেনের একজন মুখপাত্র অ্যান্ড্রু বেটস বলেন, ক্যাম্প ডেভিডে ব্যায়ামের পর প্রেসিডেন্ট নিয়মিতই ১১টার আগে কাজ শুরু করেছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তার বয়স অনেক দিন ধরেই আলোচনার একটি বিষয়। বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে ভোটাররা বলেছেন যে, তারা মনে করেন, কাজের জন্য তার বয়সটা অনেক বেশি। বাইডেন এ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। বিতর্কের পারফরমেন্স সত্ত্বেও তিনি লড়াই অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। যদিও ৭৭ বছর বয়সি লয়েড ডগেট তার বিবৃতিতে বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভোটারদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট তার অর্জনগুলোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে এবং ট্রাম্পের মিথ্যাগুলোকে বের করে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বয়সের কারণেই ট্রাম্পের কাছে হারার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। লয়েড ডগেট বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আশাবাদী তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বেদনাদায়ক ও কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’ তিনি বলেন, তার একটি সুযোগ এসেছে নতুন প্রজন্মের নেতাদের উত্সাহিত করার এবং সেখান থেকে একজন প্রার্থী মনোনয়ন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার।
বিতর্কের পর বাইডেন শুক্রবারই এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাত্কার দেবেন। কয়েক জন সুপরিচিত ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা এ সপ্তাহে বাইডেনের বয়স ও সামর্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা কেউ লয়েড ডগেটের মতো তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি। অন্য শীর্ষ ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের জয়ের সামর্থ্য নিয়ে ভয় পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি প্রেসিডেন্টের ওপরেই ছেড়ে দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তারা। সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মঙ্গলবার বলেন, ‘এটা জো বাইডেনের ওপর, যা তিনি ভালো মনে করেন।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অন্যতম সমর্থক কংগ্রেসম্যান জিম ক্লাইবার্ন বলেছেন, বাইডেন সরে দাঁড়ালে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করবেন। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই বাইডেন-হ্যারিস চালিয়ে যাক।’ ম্যারিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জ্যামি রাসকিন বলেছেন, বিতর্কটি একটি ‘কঠিন পরিস্থিতি’ তৈরি করেছে। তিনি স্বীকার করেন যে, দলের সব স্তরেই অত্যন্ত সততার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্তই নিন, আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে এবং আমাদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে তাকে প্রয়োজন।’
পাশে কমলা হ্যারিস : বাইডেনর বয়স এবং বক্তৃতা নিয়ে যখন আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে সমালোচনা হচ্ছে, তখন পাশে দাঁড়িয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, বাইডেনের সঙ্গে কাজ করে তিনি আনন্দিত। তার কথায়, ‘ট্রাম্পকে আমরা এক বার হারিয়েছি, আবার হারাব।’ হোয়াইট হাউজের মুখপাত্রও জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই বাইডেনের। বিতর্কের সন্ধ্যাটি একটি বিক্ষিপ্ত দিন হিসেবে মন্তব্য করেছেন তিনি। -বিবিসি ও ডয়চেভেলে
Posted ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh