মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
হোয়াইট হাউজের কিছু উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের শেষ দিনগুলো নিয়ে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিপূর্বে একাধিকবার এবং সর্বশেষ গত সোমবার আবারও বলেছেন যে ২০ জানয়ারী তিনি হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছেন না। ২০ জানুয়ারী নবনির্বাচিত প্রেসডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেবেন। সেদিন বেলা ১২টা ১ মিনিট থেকে ট্রাম্পের আর কোন ক্ষমতা থাকবে না। তাহলে ২০ জানুয়ারী বেলা ১২টা ১ মিনিটের পর ট্রাম্প কিভাবে হোয়াইট হাউজে অবস্থান করবেন? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন যে তিনি নতি স্বীকার করবেন না এবং জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন না। এ সম্পকে গত মঙ্গলবার সিএনএন তাদের প্রিন্ট ভার্সনে এক নিবন্ধে লিখেছে যে ভিন্নমতাবলম্বী ও স্বল্প গুরুত্বপূর্ণ একটি দুষ্ট চক্র প্রতিনিয়তই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে নতি স্বীকার না করতে। এই দুষ্ট চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক নিউইয়র্ক সিটি মেয়র ও বর্তমানে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি। এই চক্রটি গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে একাধিক মাল দায়ের করেছিল। যতগুলো মামলা দায়ের করা হয়েছিল সবগুলোতেই তারা হেরেছে। সর্বশেষ গত রোববার তারা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টে একটি আপিল আবেদন করেছেন পেনসিলভেনিয়ার কোর্টে তাদের মামলা বাতিল করার কারণে। এ নিয়ে গত সোমবার হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বরৈচৈন, কেউ নিশ্চিত নয় যে ঘটনা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরবর্তী এক মাসের জন্য তিনি এখনও প্রেসিডেন্ট। সিএনএন তাদের রিপোর্টে বলেছে, একটি দুষ্ট চক্র প্রেসিডেন্টকে কুপরামর্শ দেয়ার জন্য সক্রিয়। গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রেডিও হোস্ট চার্লি ক্লিককে বলেন, নির্বাচনে আমি বিপুলভাবে জয়ী হয়েছি। এখন আমাদের এমন একটি পার্টি দরকার যারা নির্বাচন নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত এবং বেশকিছু দক্ষ কংগ্রেসম্যান রয়েছেন, যারা এটি করছেন। এখন আমাদের প্রয়োজন বিচার বিভাগের সমর্থন।
প্রেসিডেন্ট চলতি সপ্তাহের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছুটি কাটানোর জন্য ফ্লোরিডায় তার নিজস্ব রিসোর্ট ‘মার-এ-লাগোতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এক উপদেষ্টা বলেছেন তারা ধারণা করছেন যে চক্রটি ট্রাম্পকে ঘিরে রেখেছে তাদের একটি অংশ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারে। তাদের একজন আলাবামার কংগ্রেসম্যান মো ব্রুকস। তিনি আগামী ৬ জানুয়ারী হাউজ ও সিনেটের যে যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনার মাধ্যামে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার সময় প্রতিবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কংগ্রেসম্যান ব্রুকস বলেন, আমি কি বিশ্বাস করি তা বড় কথা নয়, তবে আমাদের দলের অনেক হাউজ প্রতিনিধি ও সিনেটর ৬ জানুয়ারী ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় বিরোধিতা করবেন। এছাড়া গত সোমবার ওভাল অফিসে এক সভায় অংশগ্রহণসহ সিডিনি পাওয়েলকে বোববার ও সোমবার হোয়াইট হাউজে দেখা গেছে। সোমবার সিডনি পাওয়েল কেন হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন তা পরিস্কার নয়। তবে সিএনএন বলেছে, সিডনি হোয়াইট হাউজ থেকে একটি নির্বাহী আদেশ আদায় করার চেষ্টা করছেন, যার মাধ্যমে তিনি যেসব স্টেটে নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে সেইসব ষ্টেটের ভোটিং মেশিনগুলো জব্দ করার আদেশ থাকবে। সাবেক ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার মাইকেল ক্লিন গত থ্যাঙ্কস গিভিং এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পান। সিডনি পাওয়েল ছিলেন ক্লিনের আইনজীবী। বর্তমানে মাইকেল ক্লিন, সিডনি পাওয়েল ও রুডি জুলিয়ানি চক্র প্রেসিডেন্টকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন বলে মনে করছেন ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে ওভারস্টকডটকমের প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিক ব্রাউন বলেন, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা তাকে মারাত্মক ভুল পথে পরিচালনা করছেন। তারা চান প্রেসিডেন্ট হেরে যাক ও মিথ্যা বলুক। প্রেসিডেন্ট ভয়ঙ্কর এক দুষ্টচক্রের খপ্পরে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, এই প্রথমবার আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অনুতপ্ত। তিনি প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। বিশ্বাস করছে রুডি ও সিডনিদেরকে।
এর আগে সাবেক ও বিতর্কিত হোয়াইট হাউজ প্রধান উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন গত রেবাববার বলেন, আমি ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছি যাতে তিনি একটি স্পেশাল কাউন্সিল গঠন করেন, যে কাউন্সিল নির্বাচনী অনিয়ম ও হান্টার বাইডেনের ব্যবসা নিয়ে তদন্ত করবে। আমি মনে করি আমাদের একটি স্পেশাল কাউন্সিল প্রয়োজন এবং এ ব্যাপারে আমি প্রেসিডেন্টকে বলেছি। স্টিভ ব্যানন বলেন, আমি বিশ্বাস করি ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন না এবং কখনও নতি স্বীকার করবেন না। তিনি কখনো সরে দাঁড়াবেন না। এদিকে গত সোমবার ট্রাম্প কিছু কংগ্রেসম্যানের সভায় একত্রিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ৬ জানুয়ারী কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় প্রতিবাদ করতে একত্রিত হওয়ার জন্য। জর্জিয়ার নবনির্বাচিত কংগ্রেসম্যান টেলর গ্রীন এ প্রসঙ্গে বলেন, যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল ভোটে জো বাইডেনের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রতিহত করতে আমাদের সমর্থন বাড়ছে। হোয়াইট হাউজের সভায় আমাদের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল পেন্স, ট্রাম্পের লিগ্যাল টিম ১৫ জন কংগ্রেসম্যান উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসের নিয়ম হচ্ছে যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল ভোটের চূড়ান্ত অনুমোদনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য মাত্র একজন হাউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ ও একজন সিনেটরকে উদ্যোগ নিতে হয়। তবে তাদের চ্যালেঞ্জ কতটুকু ধোপে টিকবে তা দেখার বিষয়। এর মাঝে সিনেট মেজরিটি লিডার মিটচ ম্যাককনেল তার সতীর্থ সিনেটর ও হাউজ প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছেন যে নির্বাচনী অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে হাউজ ফ্লোরে যে উচ্চ বাচ্য করা না হয়। এছাড়া সিনেট মেজরিটি হুইপ সাউথ ক্যারোলিনার জন থিউন বলেন, আমি মনে করি নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ। এখন সময় হচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কোন ধরনের বাড়াবাড়ি আমাদের দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। সিএনএন এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে আগামী ২০ জানুয়ারী ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ছেন না এবংব বাইডেনের শপথ গ্রঞন অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হবেন না তা নিশ্চিত। সেজন্য প্রশ্ন উঠেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে কি করবেন বা কোথায় লুকিয়ে থাকবেন? এর আগে ৬ জানুয়ারী হাউজ ও সিনেটের যৌথ অধিবেশনে কিছু রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যান অহেতুক হাউজ ফ্লোরে ঝামেলা বাঁধাতে চেষ্টা করবেন।
Posted ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh