মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থ জো বাইডেন তাদের প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন। ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে মোট তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। ডিবেটিং কোচ দিয়ে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান
শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জো বাইডেনকে। এসব কোচ দু’জনকেই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের কৌশলগুলো শিখিয়ে দিচ্ছেন হাতেকলমে। নানা ইস্যুতে এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বিতর্ক। প্রথম বিতর্কের পর দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ অক্টোবর এবং শেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ অক্টোবর।
এছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ অক্টোবর। ১৯৬০ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জন এফ কেনেডি ও রিপাবলিকান প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনের মধ্যে । তখন থেকে প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠান একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বিতর্কে অংশগ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণভাবে প্রার্থীর নিজস্ব এখতিয়ার। ১৯৬৪ সালের নির্বাচনের আগে কোন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। পরলোকগত প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৬৮ ও ১৯৭২ সালের নির্বাচনের আগে বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করে বিতর্কে অংশ নেননি।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে রাত নয়টায় ওহাইয়োর ক্লিভল্যাণ্ড বেইস ওয়েষ্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। দেড় ঘন্টাব্যাপী প্রথম বিতর্কে মডারেটর হিসেবে থাকবেন ফক্স টিভির নিউজ অ্যাংকর ক্রিস ওয়ালেস। চরম দক্ষিণপন্থী হিসেবে পরিচিত ক্রিস ওয়ালেসকে মডারেটরের দায়িত্ব দেয়ার কারণে মডারেটরের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয় বিতর্ককে বলা হয় টাউন হল মিটি। এসময় দর্শকরা প্রার্থীদের সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন। তবে প্রশ্নকারীদের তাদের প্রশ্ন মডারেটরের কাছে লিখিতভাবে দিতে হবে। এ বিতর্ক হবে মায়ামির এন্ড্রিল সেন্টারে। সিএসপ্যানের পলিটিক্যাল এডিটর স্টিভ স্ক্যালি মডারেটর হিসেবে থাকবেন। তৃতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে টেনিসির ন্যাশভিলে বেলমন্ট ইউনিভার্সিটিতে। মডারেটর থাকবেন এনবিসির হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতা ক্রিস্টিন ওসেলকার। ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্ক হবে ইউনিভার্সিটি অফ ইউতাহ’য় এবং মডারেটর থাকবেন ইউএস টুডে’র ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ সুজার পেইজ।
স্নায়ু যুদ্ধের পর থেকে শুরু হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্ক অনেক অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। তবে রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, ইরানকে চাপে রাখা নিয়ে এখনকার বিতর্ক স্নায়ুযুদ্ধ পূর্বেকার চেয়ে আরও জটিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্ন আসবে। ইরানকে চাপে রাখার জন্য কোন প্রার্থীর কৌশল কী হবে তা জানতে চাওয়া হবে। আফগানিস্তানে তালিবানদের সাথে সংলাপ নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ট্রাভেল ব্যানসহ মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছাড়াও অভ্যন্তরীণ একাধিক প্রশ্ন থাকতে পারে। অর্থনৈতিক ইস্যু, কোভিড ১৯ মোকাবিলায় ট্রাম্পের বিতর্কিত ভূমিকা, দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ, আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টস, মিনেসোটায় ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড, কৃষ্ণাঙ্গদের উপর গুলিবর্ষণ, ট্রাম্পের একাধিক বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন উঠাতে পারেন মডারেটর ও দর্শকরা। বিতর্কে কোন প্রার্থী জিতলে বা হারলেন অথবা কোন প্রার্থীর পারফর্মেন্স ভালো বা মন্দ তার উপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে না। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে তিনটির মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু জয়লাভ করেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০০ সালের বিতর্কে জয়ী হন ডেমোক্রেট প্রার্থী আল-গোর, কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হন জর্জ ডব্লিউ বুশ। ২০০৪ সালের বিতর্কগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জন কেরি, কিন্তু নির্বাচনের দ্বিতীয় বারের মতো জয়লাভ করেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে প্রচন্ড আক্রমণাত্মক ও বর্ণ বিদ্বেষী কথামালায় উস্তাদ। তিনি জীবনে মাত্র তিনবার বিতর্কে অবতীর্ণ হন ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে। অন্যদিকে জো বাইডেন তার পুরো জীবন কাটিয়েছেন রাজনীতির মাঠে। জীবনে বহুবার তিনি সিনেটে ও ভাইস প্রেসিডেন্টের বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। তিনি বিজ্ঞ আইনজীবী, ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিনেটর এবং দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে দায়িত্ব পালনকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার সমস্যার মধ্যে অনেক সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা তাঁর মুখ ফসকে বের হয়ে যায় এবং সেজন্য খেসারতও দিতে হয়।
ক্রিস ওয়ালেস কে?
প্রথম বিতর্কের সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস। এদিনের বিতর্ক ভাগ করা হবে ৬টি অংশে। প্রতি অংশের দৈর্ঘ্য থাকবে প্রায় ১৫ মিনিট। কি নিয়ে বিতর্ক হবে সেই টপিক নির্বাচন করবেন ক্রিস ওয়ালেস। তিনি ফক্স নিউজের দীর্ঘদিনের উপস্থাপক। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের স্মরণীয় সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য তিনি পরিচিত হয়ে আছেন। বিতর্কে কি টপিক থাকবে তা নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগে প্রকাশ করা হবে। প্রতিটি অংশ শুরু হবে একটি প্রশ্ন দিয়ে। প্রার্থীরা প্রতিজন এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দু’মিনিট করে সময় পাবেন।
উল্লেখ্য, ক্রিস ওয়ালেস একজন রেজিস্টার্ড ডেমোক্রেট। তিনি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের উপস্থাপক ছিলেন। ওই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ডেমোক্রেট হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে অস্বস্তিকর ইস্যুতে প্রতিজন প্রার্থীকে চাপে ফেলেছিলেন এই উপস্থাপক। এ জন্য তিনি ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। সমতা রক্ষা করে বিতর্ক পরিচালনার জন্য উভয় পক্ষই তার প্রশংসা করে। তিনি বলেছিলেন, ওই বিতর্কের মডারেটর হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সিরিয়াস। এর মাধ্যমে কোটি কোটি মার্কিনি কাকে ভোটে বেছে নেবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি শুধু সহায়তা করেছেন। তবে প্রেসিডেন্সির সময়ে মাঝেমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন।
Posted ১:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh