বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
ডোমিনিকান রিপাবলিকে জন্মগ্রহণকারী চুয়াল্লিশ বছর বয়স্ক সিলভার বয়স যখন এগার বছর তখন তিনি বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তার পিতার সাথে যোগ দেয়ার জন্য, যিনি আমেরিকার ন্যাচারালাইজড সিটিজেন হয়েছিলেন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠান। আশির দশকের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি আর কখনো তার জন্মভূমিতে ফিরে যাননি। তার বয়স যখন ১৭ বছর তখন তার পিতার মৃত্যু হয় এবং তখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের ষ্ট্যাটাস কী তা জানার চেষ্টা করার মত মানসিক অবস্থা তা ছিল না। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে যে পিতার সূত্রে তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিলভা যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তখন এদেশে ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট ১৯৪০ কার্যকর ছিল, যে আইনে সিলভার মত সন্তানেরা, যাদের কখনো বৈধভাবে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়নি তাদের পক্ষে পিতার সূত্রে নাগরিকক্ত লাভ সম্ভব নয়। কারণ ২০০০ সালের চাইল্ড সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৪০ সালের আইনকে আর বলবৎ রাখেনি। সিলভা যেহেতু কখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারেনি, অতএব এখন তাকে ডিপোর্টেশনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
তাছাড়া সিলভার বিরুদ্ধে মাদক বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে এবং এ অভিযোগে তাকে কারাদন্ড ভোগ করতে হয়েছে। তা সত্বেও সিলভা আশা করছেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এদেশে অবস্থান করতে পারবেন এবং জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন প্রশাসন তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন, যে আইন সিলভার নাগরিক হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে সেটি একটি পক্ষপাতমূলক ও একপেশে আইন, কারণ এতে বিবাহের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা এক ধরনের সাজা ও পরিবার বিচ্ছিন্ন করার আইন। কারণ সিলভার মা তার জন্মের অল্পদিন পরই তাকে ত্যাগ করেছেন এবং পিতা তার লালন পালনের দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘনায় নিহত হয়েছেন। পিতার অবর্তমানে সিলভাকে ছন্নছাড়ার মত জীবন কাটাতে হয়েছে। রাস্তাই ছিল তার আবাস। তিনি স্বীকার করেন যে তাকে মাদক বিক্রয় করেই দিন গোজরান করতে হয়েছে। অতীত কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত। ২০১৩ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর ফেডারেল আদালত সিলভাকে ১২৭ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং তাকে ডিপোর্ট করতে কোন আইনগত বাধা নেই। কারাগারে থাকাকালে তিনি জিইডি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়াও কারাগারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাফল্যের সাথে সেগুলো সম্পন্ন করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি রেসিডেন্সিয়া ড্রাগ এবিউজ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে প্রশংসিত হন।
সিলভা দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের পিত। তিনি তাঁর ভুলের জন্য অনুশোচনা করে দ্বিতীয় একটি সুযোগ চান তার সন্তানদের কাছে নিজেকে আদর্শ পিতা, বোনদের কাছে আদর্শ ভাই হিসেবে প্রমাণ করার জন্য। আদালতের নথি হিসেবে সিলভার মুক্তি লাভের তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ৭ জুলাই। কিন্তু আইস এর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। মুক্তি লাভের দুদিন আগে আইস সিলভার কাছে একটি নোটিশ পাঠায় যে তারা তাকে ডিপোর্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাকে আইস এর নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, একজন স্থায়ী বাসিন্দা বা শুধু গ্রীনকার্ডধারী। তিনি এটা বিশ্বাস করতে পারেননি। সিলভা ডোমিনিকান রিপাবলিক সম্পর্কে কিছু জানেন না এবং সেখানে কাউকে চেনেনও না। তার সন্তান, পরিবার সবাই এদেশে।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্ট অফ দ্য ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স এর সিনিয়র স্টাফ এটর্নি ক্রিস্টিনা ভেলেজ এবিসি নিউজকে বলেছেন, সিলভাকে জবরদস্তিমূলক ডিপোর্ট করা হলে তা হবে পরিবার বিচ্ছিন্ন করার চরম এক দৃষ্টান্ত ও নজীরবিহীন সাজা। তাকে এমন এক দেশে পাঠানোর চেষ্টা, যেখানে তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় যাবত ছিলেন না, সেখানে তাকে পদে পদে বিপদের মুখে পড়তে হবে। আইস এর মুখপাত্র এবিসিকে বলেন, সিলভা ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে তিনি এদেশে অবস্থানের শর্ত লংঘন করেছেন। ফেডারেল ইমিগ্রেশন জজের চূড়ান্ত রায় অনুসারেই তাকে ডিপোর্ট করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ফেডারেল জজ তার উপর গত ৩০ মার্চ ডিপোর্টেশন আদেশ জারি করেছে। রায়ে বলা হয়েছে, সিলভা ডোমিনিকান রিপাবলিকের নাগরিক এবং তাকে ডোমিনিকান রিপাবলিকে ডিপোর্ট করা হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে ২০১৯ সালের প্রতি মাসে ২০,০০০ এর অধিক ইমিগ্রান্টকে ডিপোর্ট করা হয়েছে, অর্থ্যাৎ গত বছর মোট ২৬৭,২৫৮ জনকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। করোনাভাইরাস বিস্তারের পর তা হ্রাস পেয়ে চলতি বছর মাসিক ডিপোর্টেশন হার ছিল ১০,০০০ এর নিচে। সিলভার মত আরও অনেক স্থায়ী বাসিন্দা ডিপোর্টিদের মধ্যে রয়েছে।
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh