বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সবশেষ তথ্য বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৭ জন। মৃতের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৫। হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১৫% আইসিইউ খালি। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চাপে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ধারণ ক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী তিন মাস পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠবে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আমেরিকায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন তিনি। পরিস্থিতি যে এ রকম হবে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. অ্যান্টনি ফাউসি। কারণ যে পরিমাণ লোক থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে পার্টি করেছে, তাতে সংক্রমণ বাড়বে। প্রশাসনের এখন চিন্তা, এত রোগীর চিকিৎসার ভার সামলানো নিয়ে। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ হাসপাতালে আর শয্যা ফাঁকা নেই। একটানা পরিষেবা দিয়ে ক্লান্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের একটা বড় অংশও করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে করোনা। প্রতিদিন রেকর্ড গড়ছে সংক্রমণ। মিনিটে গড়ে আক্রান্ত হচ্ছে ৯৯ জন। গত এক বছরে ভাইরাসের কোপে ২ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এত বিশালসংখ্যক দৈনিক মৃত্যু এই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার দিনে নিহত মানুষের সমান মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। জাতীয় দুর্যোগের এ সময়ে নির্বিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদিন হাজারও মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও নীরবতা পালন করছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সবশেষ তথ্য বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৭ জন। মৃতের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৫। করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৫ জন। পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগী শনাক্ত, মৃত ও সুস্থ মানুষের সংখ্যা আরও বেশি দেখাচ্ছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৪ জন। মৃতের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৬। করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৯০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৭ জন। যেকোনো হিসাবেই রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে এই মুহূর্তে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত ৮ নভেম্বর ১ কোটি রোগী শনাক্তের ‘মাইলফলক’ অতিক্রম করে দেশটি। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। তারপর রয়েছে টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ইলিনয়, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য।
হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১৫% আইসিইউ খালি। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চাপে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ধারণ ক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। টেক্সাসের এল পাসোর হাসপাতালগুলোতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ৪০০ বেড এর মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৩টি বেড রোগীশূন্য ছিল। নর্থ ড্যাকোটার ফার্গো’তে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শূন্য বেড রয়েছে মাত্র তিনটি এবং নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কের হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের গতকাল বুধবার একটি বেডও রোগীশূন্য ছিল না। নিউইয়র্ক টাইমসের ৯ ডিসেম্বরের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিড ১৯ মহামারীতে সর্বাধিক উপদ্রুত এলাকাগুলোর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ঘাটতি চরম অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। দশ কোটি আমেরিকানের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১৫ শতাংশ আইসিইউ বেড গতকাল পর্যন্ত শূন্য ছিল। অবশিষ্ট ৮৫ শতাংশ বেডেই রোগী রয়েছে। অনেক এলাকার অবস্থা আরো শোচনীয় – বিশেষ করে মধ্য-পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকায়- এসব এলাকায় আইসিইউ বেড হয় রোগীতে পূর্ণ অথবা ৫ শতাংশের কম বেড এখনো খালি আছে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সংকটাপন্ন রোগীকে বর্তমান মান অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিপি সেন্টার ফর সিভিক ইমপ্যাক্ট এর ডাইরেক্টর বেথ ব্লউয়ার বলেছেন, করোনা ভাইরাসে চরম দুর্গত যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পল্লী কাউন্টিতে চিকিৎসা সেবা শহরের তুলনায় অপ্রতুল। ওইসব এলাকার কোন কোনটিতে দ্রুত ভাইরাস বিস্তৃুিতর কারণে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবা দান তাদের সামর্থের বাইরে চলে গেলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য। ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী নভেম্বর মাসের শুরুতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর যে সংখ্যা ছিল ডিসেম্বরের শুরুতে এসে তা দ্বিগুণ হয়েছে। কোন কোন স্টেটে এলাকা ভেদে ভাইরাস সংক্রমণ অধিক এবং সেইসব স্থানের হাসপাতালে আইসিইউ বেড সংখ্যার চেয়েও সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা বেশি।
দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালগুলোকে করোনাসংশ্লিষ্ট রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত করোনার কোনো টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে আশা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে ১০ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে বসছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এফডিএ গত ৮ ডিসেম্বর বলেছে, ফাইজারের টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। এই টিকা অনুমোদন না দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ তারা খুঁজে পায়নি। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২ ডিসেম্বর ফাইজারের টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ফাইজারের টিকাটি অনুমোদনের পর গত ৮ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যজুড়ে গণহারে প্রয়োগ শুরু হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই ১০ কোটি ডোজ করোনার টিকাদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। করোনার সংক্রমণ নিয়ে শোচনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। দৈনিক সংক্রমণ এখন দু’লাখের আশপাশেই থাকছে। নভেম্বরে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ মানুষ নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছে। ‘কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্ট’ নামে একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে মোট ১ লাখ ২২৬ জন করোনা-আক্রান্ত হয়ে ভর্তি।
সামনে শীত আসছে। সিডিসির ডিরেক্টর রবার্ট রেডফিল্ড বলেছেন, ‘বাস্তব হল, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিনটা মাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে কঠিনতম অধ্যায় হতে চলেছে।’ সিডিসির আরেক কর্মকর্তা সিন্ডি ফ্রেডম্যান পর্যটকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখেন। তার কথায়, ‘সরকারের পরামর্শ না মেনে বহু লোকজন থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। হয়তো যারা বেরিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে খুব সামান্যসংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাস ছিল। কিন্তু তাদের থেকে সংক্রমণ হয়তো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ছড়িয়ে গেছে আশপাশের লোকজনের মধ্যে।’ ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লোরিডা- এই তিনটি রাজ্যের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থাও এদের। প্রতিটি প্রদেশে ১০ লাখের বেশি করোনা-আক্রান্ত। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ভয়ানক বেডড়েছে সংক্রমণ। মেয়র এরিক গারসেট্টি গত ৪ ডিসেম্বর একটি জরুরি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, কোনো বাসিন্দা বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না।
বর্তমানে আমেরিকায় সংক্রমণের মৌচাক লস অ্যাঞ্জেলেস। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই ট্রাম্পের। শুরু থেকেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেননি তিনি। মাস্ক পরা নিয়ে তিনি কয়েক দফা উপহাসও করেছেন। নিজে সংক্রমিত হয়েও ট্রাম্প তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেননি। তার সমর্থকদের মধ্যে এখনও মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। নিজেও বেশ কয়েকটি পার্টির আয়োজন করছেন ক্রিসমাসের আগে।
বড়দিন উদযাপনে ভয়াবহভাবে বাড়বে করোনার সংক্রমণ : ফাউসি
বাংলাদেশ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের মহামারীতে আসন্ন বড়দিন উদযাপনের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি। তিনি বলেছেন, থ্যাংকস গিভিং ডের পর বাড়তে থাকা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তবে বড়দিন এবং নববর্ষের সময়কালের পর তার চেয়েও বেশি সংক্রমণ হতে পারে বলে হুশিয়ার করেন তিনি। খবর বিবিসির। করোনাভাইরাসের মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষের। থ্যাংকস গিভিং ডে শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে ক্যালিফোর্নিয়ায় আরোপ করা হয়েছে কঠোর লকডাউন। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোভিডবিষয়ক প্রধান পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ড. অ্যান্থনি ফাউসি জানিয়েছেন, থ্যাংকস গিভিং ডের চেয়ে বড়দিন ঘিরেই তার উদ্বেগ বেশি। কারণ এতে জনসমাগম হয় সবচেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে কেনো এতো লাশ!
যুক্তরাষ্ট্রের নাম শুনলেই সবার মাথায় যে ছবিটা আসে তা হল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ। নাগরিকদের জন্য উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব সময়ই সচেষ্টই দেশটির সরকার। শুধু তাই নয়, আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে বহু দেশ থেকে উন্নত চিকিৎসা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় অনেকে। অথচ করোনা মহামারীতে সেই দেশটির অবস্থায়ই নাস্তানাবুদ। চলতি বছর মার্চে করোনা শনাক্তের পর থেকে গেল গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ জন আক্রান্ত এবং ২ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। কোনো এতো মানুষের মৃত্যু দেশটিতে? অন্যান্য দেশ যথেষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টায় যেখানে সফল সেখানে যুক্তরাষ্ট্র কেনো পারছে না? এই প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজতে দেখা যাক কি কি চিত্র পাওয়া যায়। গেল কয়েক বছরে, আমেরিকায় চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা হয় প্রায় কয়েক লাখ কোটি মার্কিন ডলার, যা ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, স্পেন, কানাডার মতো দেশগুলোর জিডিপি থেকেও বেশি। ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি সংগঠন বলছে, পৃথিবীর আর কোন দেশে চিকিৎসা খাতে আমেরিকার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয় না। বলা যায়, প্রত্যেক নাগরিকের পেছনে চিকিৎসার জন্য গড়ে প্রায় ১০ হাজার ২২৪ ডলার ব্যয় করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে যা অনেক বেশি। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকানদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ৭৮ দশমিক ৭ বছর, যা অন্যান্য উন্নত দেশ থেকে কম। গবেষকরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে আমেরিকানদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হলো, মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগ এবং অ্যালকোহল জাতীয় নেশাদ্রব্য গ্রহণ। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১১৫ জন আমেরিকান মাত্রাতিরিক্ত আফিম জাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণের কারণে মারা যায় বলে পরিসংখ্যানে উঠে আসে।
আমেরিকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যান দেখলে অনেকেই আঁতকে উঠেন সেটি হচ্ছে, ভুল চিকিৎসা। জন হপকিন্স কলেজের একদল গবেষকের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখের বেশি মানুষ ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটিই সত্যি। বিভিন্ন রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, চার লাখেরও বেশি হৃদ্যন্ত্রের ব্যাধি ও ক্যানসারে ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যু হয় দেশটিতে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকার পরেও ভুল চিকিৎসার সংখ্যা এত বেশি হওয়ার পেছনে গবেষকেরা ভুল রোগ নির্ণয়, কম্পিউটার সিস্টেমে ভুল, যন্ত্রপাতির ত্রুটি, সঠিক নিয়মে ওষুধ গ্রহণ না করা, চিকিৎসকদের ভুলকেই দায়ী করছেন। কোন দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন চিকিৎসার মান, হাসপাতাল, ডাক্তার, যন্ত্রপাতির পেছনে খরচাদি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনা করা হয়।সেক্ষেত্রে আমেরিকার অবস্থান বিশ্বে ৩০তম। প্রথম স্থানে রয়েছে তাইওয়ান। এরপর যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্ক। প্রশ্ন উঠতে পারে, চিকিৎসা খাতে এত অর্থ ব্যয় করার পরও আমেরিকা পিছিয়ে আছে কেন মহামারী ঠেকাতে?
Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh