শামছুন ফৌজিয়া : | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
রিফাতের নিষেধ সত্ত্বেও ছেলের একটাই দাবী হোন্ডা কিনবে। কি আর করা কিছু জমানো টাকা ছিল তা ব্যয় করে নতুন একটা বাইক কিনে দিতে হল কলেজ পড়ুয়া ছেলে সোহানকে। সেই সাথে সাবধান করে দিল বাইক চালাতে হেলমেট পরা সহ সতর্কতা অবলম্বন করতে। সোহান ভীষণ খুশি হয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
রিফাতের মনে পড়ে সবেমাত্র পুলিশে চাকরী নিয়েছে, নতুন চাকরি আর দায়িত্ব সব মিলিয়ে ব্যস্ততা ছিল। প্রথম ডিউটি পড়ল কলেজে পরীক্ষার হলে। সেদিন বৃষ্টি ছিল আর আকাশ কিছুটা অন্ধকার।আলো আধারিতে দেখতে পেল একদল ছাত্রী পরীক্ষা শেষ করে কলেজের কাদামাখা রাস্তা ধরে আসছে। ওরা এলোমেলো চলছিল দেখে জোরে ব্রেক কষতে হল। সেটাই কাল হল !সবগুলো মেয়ে দৌড়ে সরে গেলেও দুজনের জামা মুখ ভরে গেল কাদায়।ডিউটি শেষে লাঞ্চের জন্য বাজার হতে আনা পাউরুটি কলার প্যাকেট হাত হতে পড়ে গেল। মেয়ে দুটো ভীষণ ক্ষেপলো রিফাতের ওপর। সে সরি বলতে বলতে চলে আসলো।
রিফাত বুঝতে পারেনা তার জীবনে একই ঘটনা বার বার ঘটছে কেন? মনে পড়ে গ্রামের মেঠো পথে সে প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে ঘুরত।ছোটচাচার সাইকেলটির মালিক একদিন সে হয়েই গেল চাচা তখন সৌদিআরবে। তখন ক্লাস নাইনে পড়ত রিফাত, গ্রামের মেঠো পথ ধরে ক্রিং ক্রিং করে বেল বাজিয়ে যাবার সময় সবাই সরে যেত ।শেফালী একই গ্রামের মেয়ে আর একই ক্লাসে পড়ত।
একদিন স্কুল হতে ফেরার পথে সাইকেল নিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে গিয়েছিল শেফালীর ওপর। সাথে আরো চার পাঁচজন মেয়ে ছিল, সবাই চেঁচামেচি শুরু করে দিলে লোকজন দৌড়ে এসে রিফাতকে শাসাতে লাগল। কেউ কেউ কিল ঘুষিও দিল।রিফাতের বাবা সেদিন খুব বকা দিয়েছিলেন যেন সাইকেল নিয়ে বের না হয়। শেফালীর হাত পা কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছিল, রিফাতের কষ্ট লাগলেও কিছু বলতে পারেনি সেদিন।
পরে একদিন শেফালীর সাথে যখন রিফাতের দেখা হয়েছিল সে ঐদিনের ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল। শেফালী বলেছিল, তুমি তো ইচ্ছে করে দূর্ঘটনা ঘটাওনি, সেদিন সবাই তোমাকে কত মার দিল বকা দিল তা দেখে খুব কষ্ট লেগেছে। সেই থেকে শেফালীর সাথে প্রতিদিনই রিফাতের কথা হত, একদিন শেফালীর শখ পূরণ করতে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে নির্জন রাস্তায় ঘুরেছে।
দুজনের মনে তখন অদ্ভুত এক আকর্ষণ ছিল। সেই অনুভূতি কি তারা কেউই জানতনা। এসএসসি পরীক্ষার একমাস আগে থেকেই শেফালীর দেখা মিলেনা, স্কুলেও আসেনা। শেফালীর চাচাত ভাই রুমন একই ক্লাসে পড়ত সে জানাল শেফালীরা শহরে চলে গেছে। রিফাত ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল, একে তো সামনে পরীক্ষা তার ওপর শেফালীকে না দেখে মনটা ভারাক্রান্ত ছিল। শেফালীদের নানাবাড়ি শহরে এটা রিফাত জানত। কিন্তু ভীষণ ইচ্ছে করছিল শেফালীকে দেখার কোন উপায় ছিলনা।
এসএসসি পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে শেফালীর বিয়ে হয়ে যায় এক প্রবাসীর সাথে, সেই খবরটা রিফাত জানতে পারল পরীক্ষার হলে। সে ভাবছিল পরীক্ষার সময় নিশ্চয়ই দেখা হবে! মনমরা হয়ে পরীক্ষা দিল রিফাত আর বুঝতে পারল বুকের মাঝে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে শেফালীর জন্য। এর পর সে আর সাইকেল নিয়ে কোথাও বের হয়নি, ফেলে রেখেছিল।
চাকরীর সুবাদে হোন্ডা ব্যবহার করতে গিয়ে সেই একই কাণ্ড ঘটল! কলেজের ছেলেরা হৈ হৈ করে আসতে দেখে শেষ পর্যন্ত মেয়ে দুটোই তাদের থামালো। রিফাত সেদিন কৃতজ্ঞতার চোখে মেয়ে দুটোকে সম্মান জানিয়েছিল মনে মনে। হয়ত সেই দৃষ্টিভঙ্গি মেয়ে দুটোও বুঝতে পেরেছিল। ঠিক তখুনি মনে পড়ে গেল শেফালীর কথা সাইকেলের কথা। শেফালীর স্মৃতি সে আজো ভুলতে পারেনি।
যখন নিজের ছেলে সোহান সেই একই বয়সে হোন্ডার আব্দার করল তখনই নিজের অতীতের ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল। রিফাত যখনি গ্রামে যায় সেই মেঠোপথ ধরে হাঁটতে থাকে আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে শেফালীর মুখটি।
সে তখন কিশোর বয়সে চলে যায় সাথে সাইকেলের বেল বাজাতে বাজাতে শেফালীদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শেফালী তখন মুচকি হেসে চলে যায়। জীবনের অর্ধেক সময় পার করেও ভুলতে পারেনি ছোটবেলার পড়ার সাথীকে। নিজের মনে নিজেই হাসে মাঝে মাঝে। একটি সাইকেল এবং দূর্ঘটনা শেফালীকে খুব আপন করে দিয়েছিল। নিজের মনেই বিড়বিড় করে শেফালী তুমি কোথায় আছো আর কেমন আছো? আমার কথা কি তোমার একবারও মনে পড়েনা?
Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh