কাজী জহিরুল ইসলাম : | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
রাসেল এবং রাকিব। দুই ভাই। স্মার্ট, সুদর্শন দুই ডাব বিক্রেতা।
বাড়ি কোথায়?
ফরিদপুর।
রাসেল বড়ো, ও ভালো করে ডাব কাটতে পারে না। রাকিব দূরে কোথাও ছিল। ও ফিরে আসতেই ডাব এবং দা রাকিবের দিকে বাড়িয়ে ধরে রাসেল, মুখে পরাজয়ের হাসি।
হাসতে হাসতে রাকিব দা হাতে নেয়। আমি এবং রুহুল আমিন ওদের দুই ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল খুনসুটি দেখে মজা পাই। রুহুল আমিন দামাদামি করে।
আশি টাকা করে দিব।
না, কী বলেন? ছোটো বড়ো মিলিয়ে গড়ে ১০০ টাকা করে কেনা, বড়োগুলো একটু বেশি দামে বেচি, ছোটোগুলোর জন্য দাম নেই ১০০ টাকা। এইটুকুই লাভ।
সত্যি মিথ্যা জানি না। যদি ওর কথা সত্যি হয় তাহলে সবগুলো ডাব বিক্রি করলে ওদের দুই ভাইয়ের সারাদিনের আয় দেড় হাজার টাকার বেশি না। জনপ্রতি সাড়ে সাতশ। আমার বন্ধু রুহুল আমিন এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের প্রধান। ও জানালো, বাংলাদেশের একজন ভালো ডাক্তার রোগী দেখে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করে। এই দুই শ্রেণির মানুষের আয়ের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। একজনের আয়ের মাত্র দুই শতাংশ অন্যজনের আয়। এরপরও রাসেল হাসে, রাকিব হাসে কিন্তু অনেক চিকিৎসকের মুখেই হাসি নেই, তারা মুখ গম্ভীর করে রাখেন। বাড়তি আয়ের জন্য হাঁ করে থাকেন।
রাকিব ওর দক্ষতা দেখাল। অতি দ্রুত দুটো ডাব কেটে স্ট্রাইপের দুটো স্ট্র বের করে ডাবের ফুটোতে গুঁজে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিল। আমরা এই শহরের সবচেয়ে নিরাপদ পানিতে চুমুক দিয়ে বনশ্রীর রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মানুষের স্রোত দেখি। প্রতিদিন যেন বলক দেওয়া দুধের মতো ফেনিয়ে উঠছে মানুষ। এতো যে ক্রাইম, দুর্ঘটনা, এইসবের পেছনে অব্যবস্থাপনা, ইন্ডিসিপ্লিন তো আছেই, সবচেয়ে বড়ো কারণ হচ্ছে দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যা, অথচ এই বিষয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। গতকাল ব্রিগেডিয়ার মেসবাহ বলছিলেন, আগে তো পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক অনেক বিজ্ঞাপন দেখতাম টিভিতে, আজকাল এইসব আর দেখি না। আমাদের কি এখনই চীনের মত এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে ফেলা উচিত নয়?
আমরা ডাব শেষ করি, রুহুল আমিন দুটো ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দেয় রাসেলের দিকে। রাসেল নোট দুটো নিয়ে আরো কিছু পাবার অপেক্ষায় আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি পকেটে হাত দিলে আমিন বাঁধা দেয়। কিন্তু আমি জোর করেই কিছু টাকা বের করে রাসেলের দিকে বাড়াই। রাসেলও বুঝে গেছে আমি অতিথি। সে আমিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
নিবো স্যার?
আমিন সম্মতি দিলে ও টাকাটা নেয়।
এইসবের মধ্য দিয়েই রাকিব এবং রাসেলের সঙ্গে আমাদের কিছুটা সখ্য গড়ে উঠে। এবার আমি ওদেরকে দেশের রাজনীতিতে টেনে আনি।
ফেব্রুয়ারিতে তো ভোট, তোমরা কাকে ভোট দেবে?
গলাটা বেশ নামিয়ে আস্তে করে বলে রাসেল,
এইবার হুজুরদের একটু দেখবার চাই।
তোমরা তো ফরিদপুরের মানুষ, আগে কোন পার্টিকে ভোট দিতে?
আমরা তো হারাজীবন নৌকায় ভোট দিছি। আমরাই আবার আন্দোলন কইরা তারে খেদাইছি।
আন্দোলন করেছ?
হ, করছি মানে? জান দেবার জন্য তৈরি ছিলাম।
আচ্ছা। তোমরাই সেই সাহসী জেন জি! তা তোমাদের তো নিজেদেরই একটা পার্টি হয়েছে, সেই পার্টি করো না?
না স্যার। হেরা নষ্ট হ’য়া গেছে। টেকা-পয়সা খা’য়া পইচা গেছে। এই কথা হুনলে যদি কেউ মাইর দেয়, দিবে, এইবার হুজুদেরই সুযোগ দিবো। একবার তাদের চেয়ারে বসায়া দেখবার চাই কী করে।
এবার আমি ছোটো ভাই রাকিবের দিকে তাকাই।
রাকিব, তুমি কি ভোটার হয়েছ?
না স্যার, এখনো হই নাই।
আঠারো হয় নাই তোমার?
সাড়ে সতেরো চলে, আর ৬ মাস পরেই ভোটার হয়ে যাবো।
ঠিক আছে রাসেল এবং রাকিব। তোমাদের জন্য অনেক শুভকামনা। তোমরা ভালো থেকো।
১৭ অক্টোবর ২০২৫। বনশ্রী, রামপুরা।
Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh