ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশ সমাজ নিয়ে চিন্তাভাবনায় অমানুষদের কথা স্বাভিকভাবেই এসে যায়। এদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে সত্যিকার সুস্হ সুনাগরিকদেরও দুষ্টজন বেষ্টনী থেকে আলাদা করা মুশকিল। আধিক্য দুষ্টজনেরই। মুখে মিষ্ট কথা, লোকদেখানো বিনয়, ভব্যতা, জনসেবা এসবের আড়ালে লোভ, হিংসা, দ্বেষ সমন্বিত মানসিক ও দৈনন্দিন কর্মতৎপরতায় অষ্টপ্রহর নিমজ্জিত এবং নিয়োজিত এমন সংখ্যক লোকের আধিক্যই সমাজে পরিপূর্ণ। নৈতিকতায় শুদ্ধ মানুষ যে কোন নিরিখে প্রায় তলানিতে । বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রের স্ন্দুর, অসুন্দর দিকগুলোর অনুসন্ধানে সত্য উদঘাটনে যুক্তিবাদ প্রয়োগ কমই প্রয়োগ করা হয় ।করলে নিশ্চয়ই অমানুষদেরই ভীডে সুবোধজন একেবারে কুয়োর তলায় অবস্থান নিবে এমনতরো প্রত্যক্ষণ এবং উপসংহার পরিহারের কোন গত্যন্তর আছে বলে মনে হয়না ।
নিষ্ঠুরতা মানুষের মত আর কোন প্রাণী কব্জা করতে পারেনি । কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে জগন্যতম নিষ্ঠুর আচরণ অন কোন জীব করতে পারেনা । সুবিখ্যাত সাহিত্যিক, দার্শনিক মার্ক টোয়েন তার The Lowest Animal এ বলেন, “Of all.the animals, man is the only one that is cruel. He is the only one that inflicts pain for the pleasure of doing it. It is a trait that is not known to the higher animals„ Man is the Cruel Animal. He is alone in that distinction.
মানুষের লোভ, লালসা, অন্যের সম্পদ, ভূমি, জমি দখলের কুৎসিত স্পৃহা সীমাহীন। মার্ক টোয়েন যথার্থই বলেছেন, বিশ্বে এমন কোন জায়গা নাই যা সত্যিকারের মালিকের নিরঙ্কুশ দখলে আছে ।
খুন, রক্তপাত, জোর-জবরদস্তি, চাতুর্য্য এমনসব নিন্মমানের কৌশল, মিথ্যে মামলা মোকদ্দমার মাধ্যমে বা অপরাপর দুষ্ট মানুষের সহযোগে জায়গা-জমিন বহুবার আত্মসাৎ করা হয়েছে, হয়ে আসছে। ঠকানোর বহুবিদ অপকৌশল মানুষের মত অন্য কোন প্রাণী রপ্ত করতে পারেনি, ভবিষ্যতে ও পারবেনা ।
সমাজে এখন যে চরিত্রের মানুষ অধিক সংখ্যায় হামেশাই দেখা যায় তাদের নৈতিক মূল্যবোধ প্রায় শুন্যের কোঠায়। ধর্মীয় লেবাস, জ্ঞান বিতরণের জন্য উঁচ্চ শিক্ষিত টকশো’তে অংশগ্রহণকারী সে যে পরিচয়ধারীই হোন না কেন সদাই সচেষ্ট থাকে অতি উত্তমরূপে কিভাবে অন্যকে ঘায়েল করা যায়। তাদের নৈতিকতায় শুদ্ধাচার বলতে কিছু নেই। অন্তসারশুন্য নিতান্তই অবিবেচক অমানুষ তারাই ।
শ্রেণীবিভক্ত সমাজেও তাদেরই সংখ্যাধিক্য । দুষ্টপ্রকৃতির এই সংখ্যাধিক্য লোকেরা আসলে শয়তান সমতুল্য। উল্লেখ করা যেতে পারে যে শয়তানের ইংরেজী প্রতিশব্দ ঝধঃধহ শব্দটি ল্যাটিন মূল শব্দ ‘stn’ থেকে এসেছে। এ প্রসংগে Elaine Pagels তার ‘The Social History of Satan’ প্রবন্ধে বলেন, শয়তান হলো one who opposes,obstructs, or acts as adversary. এই শ্রেণীর লোকেরা অন্যের ন্যায়পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সিদ্ধহস্ত।
টাউট বাটপার সমাজে সবসময়ই ছিল। ইদানীং এদের সংখ্যা অপ্রতিহত গতিতে বেডে গেছে। ৭০’র দশকে লেখক যে কম্যুনিটিতে বসবাস করতেন সেখানে মুক্তযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে সাকুল্যে তিন চারজন প্রফেশনাল মামলাবাজ ছিলেন। বছর ছয়েক পূর্বে গ্রামে গেলে এ জাতীয় দুষ্টজনের সংখ্যার বৃত্তান্ত জেনে শংকিত বোধ করেছিলাম। উপজেলা, জেলাকেন্দ্রিক আইনজ্ঞ, উকিল, মুহুরী এদের সাথে মামলাবাজদের যোগাযোগ নিত্য।
পারস্পরিক লাভের জন্য এ যেন এক ভালোবাসার সম্পর্ক। মামলার বিষয়বস্তুও এখন অনেক বিস্তৃত । জমিজমা এক নম্বরে হলেও খুন-জখম, মারামারি ইত্যাদির সাথে হরেক রকম বিষয় যুক্ত হয়েছে।
মামলাবাজরা এখন সমাজে প্রধান কাতারের ধান্দাবাজ। গ্রামের শান্তরুপ, শান্তির পরিবেশ নষ্ট করার জন্য মূলত এ গোষ্ঠিটিই সবচাইতে দায়ী । এদের সংখ্যা বেডে যাওয়ায় ঐতিহ্যগত গতানুগতিক ব্যবস্থায় বিচার শালিস করা দুরূহ। গ্রামীণসমাজে অনানুষ্ঠিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে দারুণভাবে চিঁড় ধরেছে।
গ্রাম এখন সংঘাত সৃষ্টিকারী মামলাবাজ, টাউট-বাটপারদের স্বর্গরাজ্য। এ শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে এখন শিক্ষিতজন, চাকুরীজীবী, রাজনীতিবিদ এরাও সগৌরবে বিরাজ করছেন। মোদ্দাকথা হলো দুষ্টজন শয়তান প্রকৃতি ধারণ করে বাংলাদেশের গ্রামে, শহরে সর্বত্রই দাপটের সাথে রাজত্ব কায়েম করেছে । এদের উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ ব্যতিরেকে দেশে, সমাজে শান্তি, সৌহার্দের সুবাতাস বইবে না হাজারো সংস্কারেও ।
Posted ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh