বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
যেসব ইমিগ্রান্ট ইতিমধ্যে গ্রীনকার্ড পেয়েছেন বা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন এবং গ্রীনকার্ড পাওয়ার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সিটিজেনশিপের আবেদন করে ন্যাচারাইলজেশন পরীক্ষার তারিখ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের জন্য আগের তুলনায় কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের মেয়াদ অবসানের আগে এই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে আগ্রহীদের জন্য। গত ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে সিটিজেনশিপের নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে। নতুন পদ্ধতি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ইংরেজি চর্চা শুরু করেছেন বা ইংরেজি জ্ঞান খুব কম। শুধু তাই নয়, আগে আবেদনকারীকে ১০০টি সম্ভাব্য প্রশ্ন থেকে অফিসার প্রশ্ন করতেন। এখন সম্ভাব্য প্রশ্ন সংখ্যা ১০০ থেকে ১২৮ এ উন্নীত করা হয়েছে। আগের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো থেকে ১৮টি সম্ভাব্য প্রশ্ন বাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলো খুব সহজ ছিল বলে ইমিগ্রেশন কর্পক্ষ মনে করেছে।
এগুলোর মধ্যে ১১টি প্রশ্নের উত্তর ছিল মাত্র এক শব্দে। আগে ইমিগ্রেশন অফিসার ১০টি প্রশ্ন করতেন, ৬টির উত্তর সঠিক হলেই আবেদনকারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন এবং ১০টি প্রশ্নের মধ্যে দশম প্রশ্নে পৌছার আগেই যদি আবেদনকারী ৬টি উত্তর সঠিক দিতে পারতেন, তাহলে অফিসার তাকে পরবর্তী প্রশ্নগুলো করতেন না। কিন্তু এখন প্রশ্ন সংখ্যা ২০টি এবং উত্তর সঠিক হতে হবে ১২টির। তবে ১২টির উত্তর সঠিক হলেও অফিসার সবগুলো প্রশ্নই করবেন আবেদনকারীকে। প্রশ্নগুলো আগের মত সহজ প্রশ্ন হবে না, এমনকি ভৌগেলিক বিষয়ের সহজ প্রশ্নগুলো দূর করে জটিল প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে। কোনো প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর আগে যা ছিল, তার চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির কারণে সিটিজেন হতে আগ্রহী বহু ইমিগ্রান্টের পক্ষে সিটিজেন হওয়া সম্ভবপর হবে না। শুধু যে প্রশ্ন সংখ্যা বৃদ্ধি বা জটিল করা হয়েছে তাই নয়, এখন কোন কোন প্রশ্নের উত্তরেও পরিবর্তনআনা হয়েছে। যেমন একটি প্রশ্ন “একজন ইউএস সিনেটর কাদের প্রতিনিধিত্ব করেন?” এর উত্তর আগে ছিল “স্টেটের সকল জনগণকে,” কিন্তু এখন উত্তর হচ্ছে “স্টেটের নাগরিকদের।” আরেকটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে সংবিধানের দশম সংশোধনীর উপর , যাতে ষ্টেটের সকল ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে ফেডারেল সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়নি। ফেডারেল কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে বিল অফ রাইটসের এই অংশটুকু রক্ষণশীলদের প্রিয় একটি প্রসঙ্গ। আরো একটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েনাম যুদ্ধে জড়িত হয়েছিল কেন?” এর উত্তর হিসেবে “কমিউনিজমের বিস্তার রোধের জন্য” সঠিক বলে বিবেচনা করা হয়েছে। যুদ্ধের কারণে যে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে ওঠেছিল সে সম্পর্কিত কোনকিছু ঠাই পায়নি নতুন প্রশ্নমালায়। আগের একটি প্রশ্নে আবেদনকারীকে প্রথম তেরটি স্টেটের মধ্যে তিনটি স্টেটের নাম বলতে হতো, এখন বলতে হবে পাঁচটি স্টেটের নাম।
ইমিগ্রেশন সংগঠনগুলো, যারা গত দশকে হাজার হাজার ইমিগ্রান্টকে ন্যাচারাইজেশন আবেদন প্রস্তত করাসহ পরীক্ষার প্রস্তু‘তি গ্রহণে যাবতীয় সহযোগিতা করেছে, তারা সম্ভাব্য আবেদনকারীদের সতর্ক করছে যে যেসব দেশের নাগরিকদের ভাষা ইংরেজি নয় তাদের জন্য ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল, তা হচ্ছে ভোট দানের অধিকার অর্জনে ইমিগ্রান্ট সংখ্যা সীমিত রাখা। তারা বলছেন যে, প্রশাসনের এই অসুদ্দেশ্য ছাড়াও ন্যাচারাইজেশনের আবেদনের জটের মধ্যে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি জটকে আরো বৃদ্ধি করবে। স্যান ফ্রান্সিসকোর ইমিগ্রান্ট লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার, যারা গ্রীনকার্ডধারীদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করতে সহায়তা করে, সেই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক এরিক কোহেনের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ চাল ছিল স্থায়ী বাসিন্দাদের আমেরিকান সিটিজেন হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, যাতে তারা ভোটাধিকার অর্জন করতে না পারে। এর কোন আইনগত কারণ বা কোন বিধিগত কারণ ছিল না। ন্যাচারাইজেশন পরীক্ষার প্রশ্ন ২০০৮ সাল থেকে অপরিবর্তিত ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করার পেছনের তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে। ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর এক মুখপাত্র বলেছেন, পরীক্ষা পদ্ধতি সংশোধন করা হয়েছে, যাতে আবেদনকারীদের আরও নিবিড়ভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়। নবর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বিভিন্ন বক্তব্যে বিভিন্ন ইমিগ্রেশন নীতি পরিবর্তন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তা খুব সহজ হবে বলে মনে করেন না ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা এবং যদি পারেনও সেক্ষেত্রেও তা করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের বিশ্লেষণ অনুযায়ী তারা ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর তথ্য উপাত্ত থেকে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এতদিন পর্যন্ত সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার ছিল ৯১ শতাংশ। কিন্তু আগের মূল প্রশ্নগুলোর মধ্যে মাত্র ৪০টি প্রশ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে, অবশিষ্ট ৬০টি প্রশ্নের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে বা প্রশ্ন ঘুরিয়ে করা হযেছে অথবা সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্ন স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এর উপর যুক্ত হয়েছে আরো ২৮টি সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্ন। সিটিজেনশিপের জন্য আবেদনকারী অনেকে বিচলিত বোধ করছেন এই পরিবর্তনের কারণে।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh