বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ওইসব সিটি থেকে লোকজন স্বল্প ব্যয়বহুল সিটিতে চলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত সিটি নিউইয়র্ক এর ব্যতিক্রম নয়। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে নিউইয়র্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্টেটে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলীয় স্টেটগুলোতে চলে গেছে প্রায় ৫ লাখ নিউইয়র্কবাসী। সেন্সাস ব্যুরো পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালের এপ্রিল ও ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে নিউইয়র্কের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৮৩ লাখ ৪০ হাজার, এর আগে যা ৮৮ লাখ ছিল।
অর্থ্যাৎ সিটির জনসংখ্যার প্রায় ৫.৩ শতাংশ অথবা ৪ লাখ ৬৮ হাজার হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় স্টেট ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রান্সিসকো সিটির জনসংখ্যা হ্রাসের হার আরো বেশি, সেখানে ৭.৫ শতাংশ লোক হ্রাস পেয়েছে। এককভাবে স্যান ফ্রান্সিসকো থেকে লোক সংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যার দিক থেকে নিউইয়র্ক ও স্যান ফ্রান্সিসকোর অবস্থান প্রায় সমান।
স্যান ফ্রান্সিসকো সিটি এবং বে এরিয়া জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আইটি কোম্পানিগুলোর কর্মক্ষেত্র ছড়িয়ে থাকায় এলাকাটি নিউইয়র্কের চেয়েও ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের ব্যয় সাধ্যের বাইরে। স্যান ফ্রান্সিসকোতে মাঝারি মানের একটি বাড়ির দাম নিউইয়র্ক সিটিতে অনুরূপ বাড়ির দামের চেয়ে অন্তত ৪৫ শতাংশ বেশি। নিউইয়র্ক সিটিতে কেউ বার্ষিক ১৩১,২৮৭ আয় করে জীবনযাত্রার যে মান বজায় রাখেন, তাকে স্যান ফ্রান্সিসকো সিটিতে একই মান বজায় রাখতে বার্ষিক অন্তত ১৯০,০০০ ডলার আয় করতে হবে। সেখানে নিয়োগকর্তারা নিউইয়র্কের চেয়ে গড়ে ৬.৪ শতাংশ অধিক বেতন পরিশোধ করেন।
ব্যয়বহুল সিটিগুলো থেকে দক্ষিণের স্টেটগুলোতে লোকজনের চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে টেক্সাসের জর্জটাউন সিটিতে ২০২২ সালেই জনসংখ্যা বেড়েঠে ১৪.৪ শতাংশের বেশি। টেক্সাসের পাঁচটি শীর্ষ সিটি, যে সিটিগুলোর জনসংখ্যা ৫০ হাজার বা এর বেশি, সেই সিটিগুলোতে নতুন করে জনসংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সূচক হিসেবে সংশ্লিষ্ট সিটিগুলোতে ড্রাইভার্স লাইসেন্স পরিবর্তন অন্যতম। ২০২১ সালের শুরু থেকে ফ্লোরিডায় ১২৬,০০০ নিউইয়র্কার ড্রাইভার্স লাইসেন্স পরিবর্তন করেছে বলে ফ্লোরিডার ডিপার্টমেন্ট অফ হাইওয়ে সেফটি এন্ড মোটর ভেহিক্যালস এর পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস এ গড় বাড়ির মূল্য এক মিলিয়ন ডলার, গড় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৩,১৯৮ ডলার। বোস্টনে বাড়ির গড় মূল্য ৮৩০,০০০, গড় বাড়ি ভাড়া ৩,৭৮১ ডলার। সহজে বোঝা যায় এসব সিটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের বসবাসের ক্ষমতার বাইরে।
আমেরিকান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন বার্ষিক কত অর্থ আয় করেন, তা দিয়ে কি তাদের পক্ষে বড় বড় সিটিতে বসবাস করা সম্ভব? অথবা তারা দশ বছর আগেও জীবনযাত্রার যে মান বজায় রাখতে পারতেন, তা কি বর্তমান আয়ে সম্ভব? আমেরিকানদের যারা বাড়ির মালিক তাদের ১২ বছর আগের চেয়ে হোম ইন্স্যুরেন্স বাবদ ৪০ শতাংশ অধিক ব্যয় করতে হচ্ছে।
ফলে তাদের পক্ষে মানসিক প্রশান্তি বজায় রেখে দিন কাটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে বলে মনস্তাত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে। নিউইয়র্ক, স্যান ফ্রান্সিসকো এবং হনলুলুর মতো সিটিতে কেউ যদি বার্ষিক ৩০০,০০০ ডলার আয় করেন, তাহলে ট্যাক্স, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি কেটে তার পক্ষে শুধু ১০০,০০০ ঢলার বাড়ি নিয়ে আসা সম্ভব। এই প্রতিযোগিতায় জীবন দেওয়ার চেয়ে তারা অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল সিটিতে চলে যাওয়াকেই ভালো মনে করেন বলে বড় বড় সিটিগুলো ছেড়ে যাচ্ছেন।
Posted ৫:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh