শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

নিউইয়র্কে প্রথম ডোজ নিলেন স্যান্ড্রা লিন্ডসে : যুক্তরাষ্ট্রে মার্চে সবার জন্য ভ্যাকসিন

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

নিউইয়র্কে প্রথম ডোজ নিলেন স্যান্ড্রা লিন্ডসে : যুক্তরাষ্ট্রে মার্চে সবার জন্য ভ্যাকসিন

যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক ও অন্যান্যদের করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে মার্চে। হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস উপদেষ্টা ডা: এন্থনি ফাউসি এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ডিন ডা: আশিষ কুমার ঝা বলেছেন যে, তাদের মতে, আমেরিকানদের মধ্যে যারা তাদের কাজ ও স্বাস্থ্যগত কারণে আপাতত ভ্যাকসিন গ্রহণ না করলেও চলতে পারে, তাদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের একমাত্র কারণ যারা স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নিয়োজিত ও নার্সিং হোমগুলোতে চিকিৎসাধীন করোনা ভাইরাসে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সকল দিক বিবেচনা করেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে ওয়ালগ্রীনস ও সিভিএস হেলথসহ আরও কিছু ফার্মেসি কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম সরবরাহ লাভ করবে বলে আশা করছে। ভ্যাকসিন পাওয়া পর তারা প্রথমে তাদের স্টাফ ও লং-টার্ম কেয়ার ফ্যাসিলিটিগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করবে বলে সিএনবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে খুচরা ওষুধ বিক্রেতা একচেটিয়া প্রতিষ্ঠান ওয়ালগ্রীনস ভ্যাকসিনের সরবরাহ লাভ করার জন্য ফেডএক্সের সঙ্গে কাজ করছে এবং তাদের কিছু সংখ্যক ষ্টোরকে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য নির্ধারণ করেছে, যেখানে বিশেষ রেফ্রিজারেটরে হিমাঙ্কের নিচে নির্ধারিত মান বজায় রেখে সংরক্ষণ করা সম্ভব। ওয়ালগ্রীনসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা লং টার্ম কেয়ার ফ্যাসিলিটিজগুলোতে ক্লিনিক চালু করবে এবং অন্তত ১৫ জন করে স্টাফ নিয়োগ করবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার জন্য। ৩০,০০০ লং টার্ম ফ্যাসিলিটিজের পক্ষ ওয়ালগ্রীনসকে নির্বাচন করা হয়েছে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। ওয়ালগ্রীনসের ২৭,০০০ ফার্মাসিষ্টকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং ভ্যাকসিন দেয়ার কাজে সহযোগিতা করার জন্য ৮,০০০ থেকে ৯,০০০ ফার্মেসি স্টাফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ওয়ালগ্রীনসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ ফার্মেসি এন্ড হেলথকেয়ার রিক গেঁটস সিএনবিসি’কে বলেছেন যে, লং টার্ম কেয়ার ফ্যাসিলিটিজে আমাদের ভ্যাকসিশেন কর্মসূচির উদ্দেশ্য জনগণকে সচেতন করা। তিনি এখনো জানেন না যে সাধারণ মানুষের জন্য ওয়ালগ্রীনস ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবে কিনা। এটি নির্ভর করে সিডিসির উপর। তবে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রয়োগের যে অগ্রাধিকার রয়েছে তাতে সাধারণ মানুষে কাছে ভ্যাকসিন পৌছতে স্প্রিং এর শুরু দিক পর্যন্ত লেগে ধারণা করা হচ্ছে।

সুপারস্টোর কস্টকো আগামী স্প্রিং এ সাধারণ মানুষের মাঝে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে শুরু পারবে বলে আশা করছেন কস্টকোর সিই্ও ক্রেইগ জেলিংক। এছাড়া রাইট এইড, ক্রোগার, পাবলিক্স ও এই-ই-বি সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানও ভ্যাকসিন দেয়ার কাজে যুক্ত হবে। তারাও অপেক্ষা করছে, কখন তাদের কাছে ভ্যাকসিন এসে পৌছবে। ওয়ালমার্ট তাদের ৫,০০০ স্টোরকে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করছে।
সিভিএস হেলথও কোভিড ভ্যাকসিনের সরবরাহ অচিরেই লাভ করবে বলে জানা গেছে এবং সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সিভিএস এবং ওয়ালগ্রীনসের ফেডারেল ও স্টেট সরকারকারগুলোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ভ্যাকসিন বিতরণে সরকারকে সহযোগিতা করার এবং তারা চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ছাড়াও লং টার্ম কেয়ার ফ্যাসিলিটিজে ভ্যাকসিন দেবে। সিভিএস ৪০ হাজারের বেশি ফ্যাসিলিটিজে রোগী ও ষ্টাফদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবে এবং ওয়ালগ্রীনস করবে ৩০ হাজার ফ্যাসিলিটিজে। গত অক্টোবর থেকে সিভিএস হেলথ ১৫ হাজার অতিরিক্ত লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কোভিড ১৯ টেষ্ট করা এবং ভ্যাকসিন বিতরণের বিশাল দায়িত্ব পালনের জন্য। সিভিএিস এর ৬০,০০০ ফার্মেসি টেকনিশিয়ার এবং ৩০,০০০ ফার্মাসিষ্ট রয়েছে, যারা ভ্যাকসিন প্রয়োগে দক্ষ। উভয় কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন ভ্যাকসিন দেয়ার সময় আসবে তখন দেশজুড়ে তাদের কেন্দ্র বা ষ্টোরগুলোতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রযোগ করা হবে। ওয়ালগ্রীনসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ওয়ালগ্রীনস ফার্মেগুলোর ৫ মাইল দূরত্বের মধ্যে বসবাস করে। অতএব ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিতে কোন সমস্যা হবে না। ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়া হলেও ওয়ালগ্রীনস ও সিভিএস সামান্য পরিমাণে প্রশাসনিক ফি নেবে। কিন্তু কেউ যদি ফি দিতে অপারগ হয় তাহলে কাউকে ভ্যাকসিন না দিয়ে ফেরত পাঠানো যাবে না বলে মিজৌরি ও ওকলাহোমার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন।

নিউইয়র্কে প্রথম নিলেন স্যান্ড্রা লিন্ডসে

যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর সোমবার লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিকেল সেন্টারের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসে স্টেট গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোর সাথে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিউইয়র্কের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। সোমবার ভোরে নিউইয়র্ক সিটিতে ভ্যাকসিনের চালান এসে পৌছার কয়েক ঘন্টার মধ্যে সকাল ৯.২০ মিনিটে তাঁকে এই টিকা দেওয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের অন্যতম। সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইউএস ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছ থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যকসিন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার পর সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর লিন্ডসে বলেন, ‘অন্যান্য ভ্যাকসিন নেয়ার মতোই ছিল এটি। আমি কোন যন্ত্রণা বোধ করিনি। করোনাভাইরাস মহামারীতে যারা সামনের সারিতে লড়াই করে যাচ্ছে আমি তাদেরকে সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার মধ্যে আজ এক ধরনের আশার জন্ম হয়েছে যে, আমরা নিরাময় লাভের দিকে যাচ্ছি। আশা করি, এর মধ্য দিয়েই ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর সময়ের অবসানের সূচনা ঘটলো।’
এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দফা সংক্রমণের সময় নিউ ইয়র্ক সিটি দেশের মহামারীর প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এই সিটি থেকেই প্রথম ভ্যাকসিন দেয়া শুধু হওয়ায় গভর্নর কুমোর কণ্ঠে উচ্ছাস ফুটে উঠে। তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন মানবতাকে অশুভ শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষাকবচ, যার মধ্য দিয়ে চলমান করোনাভাইরাস-বিরোধী যুদ্ধের সফল সমাপ্তি ঘটবে। ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের শুভ সূচনা; যা মহামারীর সমাপ্তি ডেকে আনবে। তিনি আরও বলেন, আমি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির জন্য বলতে চাই যে, এই ভ্যাকসিন নিরাপদ। আমরা মহামারীর মধ্যে কাটাচ্ছি এবং আমাদের সকলকে নিজ নিজ কাজ করে যেতে হবে। মহামারীতে ক্ষত-বিক্ষত মানবতার পরিত্রাণে এই ভ্যাকসিনের কোন বিকল্প ছিল না। আমি সকলকে ভ্যাকসিন নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলেই করোনাকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে। এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে লিখেন, প্রথম ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। অভিনন্দন যুক্তরাষ্ট্র! অভিনন্দন বিশ্ব।”

গত ১১ ডিসেম্বর এফডিএ জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। সোমবারই ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বিতরণ করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় ১৫০টি হাসপাতাল এই ভ্যাকসিন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন দেয়ার এই কর্মসূচিতে আগামী এপ্রিলের মধ্যে ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় ‍আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। নিউইয়র্ক ষ্টেট গভর্নর ক্যুমো বলেছেন, এই ষ্টেটে প্রথম দফায় পাওয়া ভ্যাকসিনের ৭২ হাজার ডোজ প্রয়োগ করা হবে। প্রথমবার ভ্যাকসিন নেয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর পুনরায় আরেক ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। নিউইয়র্ক ষ্টেটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৫,০০০ লোক মারা গেছে। জনস্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ার পাশাপাশি অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে এই সংক্রমণে।
ক্যুমো বলেছেন, এ‘ই ভ্যাকসিন আমাদের কাছে একটি মোক্ষম অস্ত্র, যা প্রয়োগ করে আমরা এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবো। তিনি বলেন, আমরা বিমান, ট্রেন ও সড়ক পরিবহনে দ্রুততার সাথে সর্বত্র ভ্যাকসিন পৌছানো চেষ্টা করছি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন পৌছানো ও প্রয়োগ করা হোক। স্টেট জুড়ে হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে সারাদিন ধরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।’ সিটি মেয়র বিল ব্লাজিও বলেছেন, প্রাথমিক বরাদ্দ হিসেবে সিটির পাঁচটি হাসপাতালে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ৩৯টি হাসপাতালে আগামী দুই দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন পৌছানো হবে বলে তিনি জানান। যারা মহামারীতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্যতম এবং নার্সিং হোম ও দীর্ঘস্থায়ী সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টাফ ও রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। মেয়র ব্লাজিও স্যান্ড্রা লিন্ডসে’কে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে লক্ষ্য করে বলেন, এটি সুন্দর এক মুহূর্ত। আশা আমাদের হৃদয়কে পূর্ণ করবে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে ষ্টেট কর্তৃপক্ষ ফাইজারের কাছে ১৭০,০০০ ডোজ ভ্যাকসিন আশা করছিলেন। কারণ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রত্যেককে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে। ষ্টেট আশা করছে যে আগামী সপ্তাহে তারা আরেক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী মরডানার নিকট থেকে ৩৪৬,০০০ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে। মরডানা এখনো এফডিএ’র কাছ থেকে তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন লাভ করেনি।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যু হারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। এ মহামারী এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি শুরু হওয়ায় আমেরিকানদের মনে স্বস্থির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত সামারে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কিছুটা হ্রাস পেলেও গত নভেম্বর মাস থেকে সংক্রমণ হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ফিরে এসেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু হার এখনো বেড়ে চলেছে। বর্তমানে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ৯ হাজারের বেশি কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এই মহামারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, তা লাঘবের শুরুর বিন্দু হিসেবে এই মুহূর্তটির বিশেষ মূল্য রয়েছে বলে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নর্থওয়েলের হেলথের স্বাস্থ্যকর্মী সেবা বিভাগের পরিচালক মিশেল চেস্টার বলেন, ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এর সঙ্গে থাকা যাবতীয় সরঞ্জাম বেশ যথাযথভাবে কাজ করেছে। নর্থওয়েল হেলথের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ডোলিং পরে এই দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। তিনি জানান, এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি কোভিড রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

নিউইয়র্কেরই একজন স্বাস্থ্যকর্মীর প্রথম সারির ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণের অনেক বড় প্রতীকী মূল্য রয়েছে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিন প্রয়োগকারী ও ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর লৈঙ্গিক ও বর্ণ পরিচয়ও এ মুহূর্তকে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে তুলেছে। প্রথম ডোজ নেয়ার ২১ দিন পর লিন্ডসেকে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এর পর তিনি আরও ভালোভাবে ও নির্ভয়ে তার কর্তব্য পালন করতে পারবেন। কর্তব্য পালনের কারণে নিজের পরিবার ও প্রিয়জন থেকে তাঁকে আর বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে না। ভ্যাকসিন দেয়ার পর মাইকেল ডোলিং বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। এই মুহূর্তটির জন্য সবাই এতদিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল।’ গত শুক্রবার এফডিএর অনুমোদনের পর সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনও (সিডিসি) ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার অনুমোদন দেয়। এর আগেই অবশ্য যুক্তরাজ্যে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়। এ ছাড়া তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার সময়ই ২১ হাজারের বেশি লোক এই ভ্যাাকসিন পেয়েছে, যা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেক মিলে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ট্রায়ালে এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও মেক্সিকো ফাইজারের টিকা অনুমোদন করেছে। যুক্তরাজ্য কয়েকদিন আগেই ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়া তাদের আবিষ্কার করা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি সাধারণ মানুষকে দেয়া শুরু করেছে।সিএনএন জানায়, গত রোববার মিশিগানের পোর্টেজে ফাইজারের কারখানা থেকে ৫০ স্টেটের অঙ্গরাজ্যের নির্ধারিত ৬০০ স্থানের উদ্দেশে ভ্যাকসিন পাঠানো শুরু হয়। প্রথম চালান পৌঁছায় মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত সোমবার আরও বেশ কিছু স্থানে ভ্যাকসিনের চালান পৌঁছেছে। ষ্টেটগুলোতে কারা কীভাবে প্রথম ভ্যাকসিন পাবে, তা নির্ধারণ করছে স্থানীয় প্রশাসন। সিডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা নিজেদের মতো করে বিষয়টির সমন্বয় করবে।

ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে সিডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী শুরুর ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সিং হোমে বয়স্ক ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন পাবেন। এর পর ক্রমান্বয়ে ১৬ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিরা ভ্যাকসিন পাবেন। নিউইয়র্ক স্টেটে ভ্যাকসিন দেয়ার অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ১৮ লাখ লোক, যার এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি সংখ্যক প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। অগ্রাধিকার তালিকার লোকজনের ভ্যাকসিন দেয়া শেষ হবে জানুয়ারী মাসের মধ্যে যদিও ভ্যাকসিন এসে পৌছায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এমন আশংকাও উড়িয়ে দেয়া হয়নি যে মহামারী শেষ হওয়ার আগেই প্রতিদিন ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার লোক ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে বলে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আভাস দিয়েছেন; যদিও টেষ্টের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস পজিটিভ সনাক্ত হচ্ছে খুব কম সংখ্যক লোক। স্টেটের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশা করছেন যে তারা ফাইজারের সর্ববৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্র মিশিগানের কালামাজো থেকে এ সপ্তাহে তিন দফায় ভ্যাকসিনের চালান পাবেন এবং অধিকাংশ ভ্যাকসিন আসবে ষ্টেট ক্যাপিট্যাল অ্যালবানি ও নিউইয়র্ক সিটিতে এবং এই দুই স্থান থেকে প্রায় ৯০টি স্থানে ভ্যাকসিন প্রেরণ করা হবে।

সোমবার ভ্যাকসিনের ডোজগুলো সরাসরি জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে লং আইল্যাণ্ড জুইশ মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন হাসপাতালের আইসিইউ এর ৫২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসে। তিনি বলেন যে অশ্বেতাঙ্গদের ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করার জন্যই তিনি প্রথমে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, আমি শুধু আমি শুধু আমার নিজের জন্য নয়, আমি মানুষকে দেখাতে চেয়েছি যে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ। যারা দেখতে আমার মত এবং আমার সাথে জড়িত, আমি তাদেরকে বলতে চাই যে এটি নিরাপদ। তিনি আরও বলেন, আমাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিন, এ ভ্যাকসিন নিরাপদ।

Posted ২:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.