বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
নিউইয়র্কে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করার জন্য বাড়ি মালিকদের দায়েরকৃত মামলার কার্যক্রম কমপক্ষে ৬০ দিন স্থগিত থাকবে এবং বাড়ি মালিকরা আগামী ১ মে’র পূর্ব পর্যন্ত ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে না। ষ্টেট এসেম্বলি ও ষ্টেট সিনেটে পাস হওয়া এ সংক্রান্ত একটি বিলে গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো গত সোমবার স্বাক্ষর করেছেন, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, অনেক বাড়ি মালিক এই পদক্ষেপ প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন এবং যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে, এই আইনে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নির্নয় করা হয়নি যে ভাড়াটেদের মধ্যে কাদের ভাড়া দেয়ার সামর্থ রয়েছে এবং কাদের ভাড়া পরিশোধ করার সঙ্গতি নেই। নিউইয়র্ক সিটির বাড়ি মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘রেন্ট ষ্ট্যাবিলাইজেন এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ আইনের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ঢালাও মরাটরিয়াম লক্ষ লক্ষ ভাড়াটে, যারা চাকুরিতে নিয়োজিত রয়েছে এবং কর্মহীন হননি, তারাও ভাড়া পরিশোধ না করতে উৎসাহিত হবে এবং সিটিকে দেউলিয়াত্বের পথে ঠেলে দেবে ও অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং এর কাঠামোকে ধ্বংস করবে।
তারা বলছেন, নতুন আইনে বাড়ি মালিকদের সমস্যার দিকগুলোর প্রতি তেমন মনোযোগ দেয়া হয়নি, যারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কারণ ভাড়াটেদের ভাড়া বাকি পড়েছে এবং যেসব ভবনের নিচতলা ও দোতলা দোকানপাট ও অফিসের কাজে ব্যবহৃত হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে বা কোনরকমে চলছে। এছাড়া এ পরিস্থিতি বাড়ির পেছনে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর জন্যও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ছোট বাড়িগুলো নিয়ে। কারণ ওইসব বাড়ি মালিকের একটি বড় অংশ তাদের ভাড়াটেদের কাছে ভাড়া আদায় করতে না পারায় মর্টগেজ পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছে না। প্রচলিত ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মর্টগেজ পরিশোধে অসমর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বাড়ি ফোরক্লোজারে পড়ে। কিন্তু করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে ব্যাংকগুলো কোন বাড়ি ফোরক্লোজারে দিয়ে তাদের ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। নতুন আইনে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী বাড়ি মালিকদের কর রেয়াত স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিপুল বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ যাবত ভাইরাস সংক্রমণের ৩ লাখ ৩০ হাজারের অধিক লোক প্রাণ হারিয়েছে। কর্মহীনতার কারণে বহু লোকের জীবনযাত্রা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এবং নিউইয়র্কের মত সিটিতে যেহেতু বাড়ি ভাড়া অসহনীয় পর্যায়ে অধিক, দরিদ্র ও স্বল্প আয় বিশিষ্ট, এমনকি যাদের আয় মাঝারি পর্যায়ে ছিল, তারা আয়হীনতা বা বর্তমান পরিস্থিতিতে আংশিক আয় করার কারণে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না, অথবা আংশিক ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে। ভাড়াটে ও ভাড়াটেদের পক্ষ সমর্থনকারী অধিকার প্রবক্তারা আশংকা করছিলেন যে ইতিপুর্বে উচ্ছেদের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার অবস্থান ঘটলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, গত সোমবার অনমোদিত আইন তাদের মধ্যে স্বস্থি এনেছে। পূর্ববর্তী আইনে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বাড়ি মালিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ষ্টেটের আইন প্রনেতারা ভাড়াটেদের পরিস্থিতি উপলব্ধি করে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতার প্রমাণ রেখেছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটসের ভাড়াটে ভিনসিয়া বারবারের জন্য নতুন আইন একটি স্বস্থি। তিনি ন্যানি হিসেবে কাজ করতেন এবং প্যানডেমিকের কারণে চাকুরি হারাবার পর বহু মাসের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি। তার পরিবারের দু’জন সদস্য ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। নতুন আইন বলে ভিনসিয়া করেনা ভাইরাসজনিত কারণে তার আর্থিক সংকট প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করবেন। উল্লেখ্য, ভাইরাস সংক্রমণের পর কর্মহীনতার কারণে নিউইয়র্কে ১২ লাখের বেশি ভাড়াটে ভাড়া পরিশোধ না করার কারণে উচ্ছেদের আশংকার মধ্যে রয়েছে। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ভাড়াটে উচ্ছেদের আশংকায় রয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের কোভিড ১৯ রিলিফ তহবিল অনুমোদন করেছেন, তাতে নিউইয়র্ক স্টেটে বাড়ি ভাড়ার সংকট দূর করতে ১.৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত নভেম্বরে নিউইয়র্ক স্টেটে বেকারত্ব ছিল ৮ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। নিউইয়র্ক সিটিতে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। যারা বাড়ি ভাড়া পরিশো করতে পারছেন না, তারা নিউইয়র্ক রেন্ট রিলিফ প্রোগ্রামে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করলে উপযুক্ততা প্রমাণ সাপেক্ষে বাড়ি ভাড়া পরিশোধে সহায়তা লাভ করতে পারেন। ভাড়াটে এই সহায়তা লাভ করলেও সহায়তা অনুমোদিত হলে তা বাড়ি মালিকের একাউন্টে জমা হবে।
উল্লেখ্য গত জুলাই মাসে রেন্ট রিলিফ কর্মসূচি চালু হওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্টরা সহায়তা লাভ করছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে নতুন পর্যায়ে বাড়ি ভাড়া সহায়তার জন্য আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয়েছে, যা ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে। যারা গত জুলাইয়ে আবেদন করার পর কোন সহায়তা লাভ করেননি, তাদেরকে নতুন করে আবেদন না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যারা তাদের মাসিক আয়ের ৩৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়ায় পরিশোধ করতেন, তারা যদি ১ মার্চের পর চাকুরি হারিযৈ থাকেন, তাহলে তারা আবেদন করতে পারবেন। ভাড়টেকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ২০২০ এর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আয় করেননি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বা আবেদন করার জন্য পরামর্শ নিতে আগ্রহীরা কর্মদিবসের সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮৩৩-৪৯৯-০৩১৮ ফোনে যোগায়োগ করতে পারেন, অথবা ইমেইলে [email protected] যোগাযোগ করতে পারেন। আবেদন করার জন্য ফরম পেতে ও নির্দেশনা জানতে আগ্রহীরা www.her.ny.gov/rrp ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
Posted ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh