বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে নিউইয়র্ক সিটিতে। নূতন করে বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমন। হাসপাতালগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত সপ্তাহে সংক্রমনের হার ছাড়িয়েছে ৫শতাংশ। নিউইয়র্ক সিটিতে এসময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা পৌছেছে আশংকাজনক পর্যায়ে। সংক্রমনের হার এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী সোমবার অর্থাৎ ১৪ডিসেম্বর থেকে নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টগুলোতে নূতন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ঘোষণা করেছেন গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো। আর এ নিষেধাজ্ঞার প্রাথমিক ধাপ হবে রেস্টুরেন্টগুলোর ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া। তবে আউটডোর ডাইনিং এবং ক্যাটারিং সার্ভিস অব্যাহত থাকবে। নিউইয়র্ক স্টেটের অন্যান্য এলাকায় সংক্রমন বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে সেসব এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হবে। সেক্ষেত্রে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস ৫০শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরুতে ৯মাস পূর্বে সিটির অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট ও বার সমূহ। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টগুলো ইনডোর ডাইনিং বন্ধ রেখে শুধু ক্যাটারিং বা টেক আউট ব্যবস্থা চালু রাখে। জুনের শেষে সীমিত আকারে চালু করা হয় আউটডোর ডাইনিং সার্ভিস। এ পর্যায়ে সিটির প্রায় ২৬ হাজার রেস্টুরেন্টের মধ্যে ৭হাজার রেস্টুরেন্ট আবেদন করে আউটডোর ডাইনিং সার্ভিসের জন্য। লকডাউন শেষে স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার তৃতীয় ধাপে সেপ্টেম্বর মাসে অনুমতি মিলে সীমিত আকারে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস চালু করার। সেক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টগুলোকে পুরো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দিতে হচ্ছিল গ্রাহক সেবা। ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস চালু হলে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ও মালিকদের মাঝে কিছুটা প্রাণের সঞ্চার ঘটে। দীর্ঘ লকডাউন কালে আর্থিকভাবে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়েন রেস্টুরেন্ট মালিকগণ। এসময় চাকুরী হারান নিম্ন আয়ের কয়েক লাখ মানুষ। লকডাউন শেষে জনজীবন ও ব্যবসায় বাণিজ্য যখন নূতন স্বাভাবিকতায় ফিরছে তখনই আবার দ্বিতীয় দফা আঘাত হেনেছে করোনা ভাইরাস। আবার রেস্টুরেন্টের ইনডোর ডাইনিং বন্ধের ঘোষণাকে বড় ধরণের হুমকি মনে করছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন-উৎকন্ঠিত।
করোনাভাইরাসে নিউইয়র্কে ব্যাপক প্রাণহানির তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং ভীতিকর স্মৃতি এখনো তাড়া করছে মানুষকে। বিষয়টি বিচলিত করে তুলেছে সিটি ও রাজ্য প্রশাসন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই অনিচ্ছাসত্বে ব্যবসায় ক্ষেত্রে নানাবিধ জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে গভর্নর কুম্যোর সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিওকে। গভর্নর ক্যুমো গত ৭ ডিসেম্বর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজনে পুনরায় রেস্টুরেন্টের ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধের কথা জানান। হাসপাতালে রোগী ভর্তির চলমান হার অব্যাহত থাকলে আগামী সোমবার থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে আউটডোর ডাইনিং সার্ভিস চলবে আগের মতোই। কিন্তু শীতের এই সময়ে বাইরে বসে খাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। ফলে বড় ধরণের হুমকির মুখোমুখী হয়েছে রেস্টুরেন্টগুলো। হাসপাতালে কত সংখ্যক রোগী ভর্তি হলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি গভর্নর।
অপরদিকে কোন এলাকায় আগামী ৩ সপ্তাহে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী ভর্তি হলে সেসব এলাকার রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ক্যুমো বলেন, ফেডারেল সরকারের নির্দেশনা বর্ণিত আছে রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরে বসে খাবার গ্রহণের মধ্যে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি অত্যন্ত প্রবল। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এধরণের নির্দেশনাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরণের হুমকি বলে মনে করছেন। এমতাবস্থায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া না হলে রেস্টুরেন্ট মালিক ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জীবন ভয়াবহ সংকটে পড়বে। এদিকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান বেছে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। গত ৬ ডিসেম্বর রোববার একদিনেই সিটির হাসপাতালগুলোতে ১হাজার ৪১৬জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সামনে ক্রীসমাসের উৎসবকে সামনে রেখে করোনার সংক্রমন ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংক্রমনব্যাধি বিশেষজ্ঞগণ। গভর্নর বলেন, শুধু নিউইয়র্কই নয় অন্যান্য স্টেটেও করোনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে এ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কর্তৃপক্ষ। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বাঁচিয়ে রাখতে ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন গভর্নর। মানুষের জীবনকে নিরাপদ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরণের মহামারি থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব নয়।
এদিকে বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। তাদের মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজ করছেন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী মানুষ। করোনার শুরু থেকেই তারা অন্যান্যদের মতো নানা ধরণের সমস্যা মোকাবিলা করে চলেছেন। নূতন করে আবার ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হলে তারা আরো আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন বলে জানান জ্যামাইকা হিলসাইড এভিন্যুর রেস্টুরেন্ট মালিকগণ।
এদিকে ইনডোর ডাইনিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার গভর্নরের ঘোষণায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রেস্টুরেন্ট মালিকদের মাঝে। নিউইয়র্ক স্টেট রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন এবং নিউইয়র্ক সিটি হসপিটালিটি এ্যালায়েন্স পৃথক প্রতিক্রিয়ায় গভর্নর ক্যুমোর সমালোচনা করেছে। তারা এধরণের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, করোনা মহামারিতে বিগত অভিজ্ঞতা বলে ইনডোর ডাইনিং নয় বড় “প্রাইভেট লিভিং রুম” থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমনের প্রসার ঘটে। করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে রেস্টুরেন্ট সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেয়ায় গভর্নরের পরিকল্পনারও সমালোচনা করে সংগঠন দু’টো। তারা বলেন, ম্যানহাটান বা সিটির অন্যান্য কাউন্টিতে মহামারির এমন কোন বিস্তার ঘটেনি যে এখনই ইনডোর ডাইনিং বন্ধ করতে হবে।
অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক এডভোকেট জুমানি উইলিয়ামস ইনডোর ডাইনিং বন্ধে গভর্নরের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করেছেন। গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোকে লিখিত এক চিঠিতে জুমানি উইলিয়ামস বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে হলে গভর্নরকে তাৎক্ষণিকভাবে ইনডোর ডাইনিং বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। তিনি বলেন, মহামারির শুরুতে গত মার্চে সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই এতো মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। করোনায় প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh