| বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
সম্প্রতি ঢাকায় আবার বিএনপির মিছিল-সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির পর বিএনপি প্রায় নিয়মিত ভিত্তিতে মিছিল-সমাবেশ করে যাচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাপ তত বাড়ছে। সাংগঠনিক শক্তির জানান দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছাড়া ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ মোটামুটি ধরেই নিয়েছে যে, আগের দুই নির্বাচনের মতোই সামনের যে কোনো নির্বাচনে তারাই হবে একমাত্র প্রার্থী এবং নির্বাচিতও হবে তারাই।
কিন্তু বাদ সেধেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশ, যারা সরকারকে বলেছে, আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে। অনেকটা ধমকের সাথেই বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে সরকার প্রধান এবং সরকারের মন্ত্রীরা ক্ষুব্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নয়ন সহযোগীকে নানা উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলতে ছাড়েনি। এখনো তারা বলে চলেছেন এবং এজন্য তারা বিএনপিকেও দোষারূপ করছেন যে, তারা লবি করে বিদেশিদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে।
সরকার ও সরকারি দল যাই বলুক না কেন, তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র যদি চায় যে আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ব্যবস্থা নিতে হবে, তাহলে সরকার তা করতে বাধ্য। সরকার দৃশ্যত সামান্য নমনীয় হয়েছে। বিরোধী দলকে কিছুটা ছাড়ও দিচ্ছে বলা যায়, বিএনপি মিছিল সমাবেশ করছে, গত ১৪ বছর জামায়াতকে রাস্তায় বের হতে দেওয়া হয়নি, জামায়াতও সমাবেশ করার জন্য অনুমতি পাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, তাদের নেতারা যা বলেন, তা তারা কখনো বিশ্বাস করেন না। তারা যা বিশ্বাস করেন তা কখনো বলেন না। অতএব আমেরিকান ধমকে তারা একটু হলেও ছাড় দিয়েছে মনে হলেও, ঢাকা ১৭ আসনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারধোর করার মধ্য দিয়ে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু করার নামে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকা সত্বেও হিরো আলমকে আক্রমণের হাত থেকে তারা এগিয়ে না আসাই প্রমাণ করে যে, সামনে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাই করবে, ১৯৭০ থেকে শুরু করে এযাবত অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যা করে এসেছে। বিএনপি ও জামায়াত মাঠে নামতে না নামতেই আওয়ামী লীগ তাদের আজন্ম লালিত চরিত্র নিয়ে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বিএনপির এর আগের কর্মসূচিতে এক বিএনপি সদস্যকে হত্যা করেছে তারা। পুলিশ বিএনপির সমাবেশ, শোভাযাত্রার ওপর হামলা চালিয়ে বহুসংখ্যককে আহত করেছে। এই হলো আওয়ামী লীগ! গণতন্ত্রের নামে সাবেক একদলীয় বাকশালের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে গণতন্ত্রের নামে কার্যত একদলীয় শাসন পরিচালনা করার দল।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে পড়তে থাকবে, গণতন্ত্রের জপমালা দিয়ে জনগণের গলা চেপে ধরবে এবং তাদের হাতে নিহতদের কাফন হিসেবে গণতন্ত্রের নামাবলী ব্যবহার করে কার্যত গণতন্ত্রকেই দাফন করতে আওয়ামী লীগ, যা তারা আরেকবার করেছিল ১৯৭৫ সালে।
নির্বাচনের এখনো ছয়-সাত সময় বাকি আছে। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে সরকার ও সরকারি দল বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপিকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। এখনই রীতিমতো যুদ্ধের দামামা বাজছে। বিরোধী দলের প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের কর্তাদের কথাবার্তা ও আচরণে বোঝা যাচ্ছে, সামনে সংঘাত অরিহার্য। তবে এসব উত্তাপ-উত্তেজনা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করতে পারে। জনগণের স্বার্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসবের সমাধান করা উচিত। তা না হলে পরিস্থিতি যেভাবে-যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।
Posted ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh