রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

পবিত্র কথা ও অপবিত্র কথা

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

পবিত্র কথা ও অপবিত্র কথা

মানুষের কথা দুই প্রকার যথা: সৎ কথা ও অসৎ কথা বা পবিত্র কথা ও অপবিত্র কথা বা সুন্দর কথা ও অসুন্দর কথা, বরকতময় কথা ও ধ্বংসের কথা। পবিত্র কথা: ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের জন্য পবিত্র, সৎ ও সুন্দর কথা বলা বাঞ্চনীয়। বিশেষত: মু’মিনদের জন্য পবিত্র, সৎ ও সুন্দর কথা বলা তাঁর ঈমান ও বিশ^সের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ যেই মু’মিন সৎ, সত্য,পবিত্র ও সুন্দর কথা বলতে পারবেন না, বুঝতে হবে তার ঈমানে ত্রুটি আছে।

কারণ মু’মিন যেই কালিমার মাধ্যমে ঈমান নামক সবুজ অরণ্যে প্রবেশ করেন, সেই কালিমাকে আল কুরআন “কালিমাতুত তাইয়্যেবা” বা “পবিত্র কথা” বলে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ তুমি কি দেখছো না আল্লাহ কালেমা তাউয়্যেবার উপমা দিয়েছেন কোন জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে।”(সুরা ইবরাহিম:২৪)

“কালেমা তাইয়্যেবা” এর শাব্দিক অর্থ “পবিত্র কথা”। এর মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ^াস যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। এই উক্তি ও আকীদা কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ^াস হতে যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, পূত-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনের স্বীকৃতি। নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখিরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক সত্য হিসাবে পেশ করে। অন্য কথায় এর অর্থ হলো, পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ^ ব্যবস্থা যেহেতু এমন একটি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত যার স্বীকৃতি একজন মু’মিন তার কালেমা তাইয়্যেবার মধ্যে দিয়ে থাকে, তাই কোন স্থানের প্রাকৃতিক আইন এর সাথে সংঘর্ষ বাধায় না, কোন বস্তুর আসল, স্বভাব ও প্রাকৃতিকগঠন একে অস্বীকার করে না এবং কোথাও কোন প্রকৃত সত্য ও সততা এর সাথে বিরোধ করে না। তাই পৃথিবী ও তার সমগ্র ব্যবস্থা তার সাথে সহযোগীতা করে এবং আকাশ তথা সমগ্র মহাশূণ্য জগত তাকে স্বাগত জানায়।

কোন ব্যক্তি বা জাতি এই কালেমার ভিত্তিতে জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহুর্তে সে সফল লাভ করতে থাকে। সেটি তার চিন্তার পরিপক্কতা ও পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, এ জীবন ধারায় মজবুতি, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা ও স্নিগ্ধতা, শরীরে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা, আচরণে মাধুর্য, ব্যবহার ও লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় মুগ্ধতা ও সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অংগীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন যাপনে সদাচার, কৃষ্টিতে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, পবিত্র কথা ও অপবিত্র কথা অর্থনীতিতে আদল ও ইনসাফ, রাজণীতিতে বিশ^স্ততা, যুদ্ধে সৌজন্যতা, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তি ও অংগীকারে বিশ^স্ততা সৃষ্টি করে। সেটি এমন একটি পরশ পাথর যার প্রভাব সেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়।

সুতরাং মু’মিন কখনো অশ্লীলভাষী, কদাচার,কর্কশ ও বদমেজাজী হতে পারে না। আব্দুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন: মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না।(তিরমিযি:১৯৭৭, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ আন রাসুলিল্লাহ স: বাবু মা জা’আ ফি লা’নাতি, হাদীসটি সহীহ) আল্লাহ তা’আলা বলেন,“মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে।”(সুরা হুজরাত:১০) “মানুষ খারাপ কথা বলে বেড়াক, তা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম করা হলে তার কথা ভিন্ন। আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।”(সুরা নিসা:১৪৮)

অপবিত্র কথা: আল কুরআনে অপবিত্র বাক্যকে “কালিমাতুল খাবীসা” বা অসৎ বাক্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“অন্যদিকে অসৎ বাক্যের উপমা হচ্ছে, একটি মন্দ গাছ, যাকে ভুপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।”(সুরা ইবরাহিম:২৬) ‘কালিমাতুল খাবীসা হলো কালেমা তাইয়্যেবার বিপরীত শব্দ। যদিও প্রতিটি সত্য বিরোধী ও মিথ্যা কথার ওপর এটি প্রযুক্ত হতে পারে তবুও এখানে এ থেকে এমন প্রতিটি বাতিল আকীদা বুঝায়, যার ভিত্তিতে মানুষ নিজের জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

এ বাতিল আকীদা নাস্তিক্যবাদ, ধর্মদ্রোহিতা, অবিশ্বাস শিরক, পৌত্তলিকতা অথবা এমন কোন চিন্তাধারাও হতে পাওে যা নবীদের মাধ্যমে আসেনি। অন্য কথায় এর অর্থ হলো, বাতিল আকীদা যেহেতু সত্য বিরোধী তাই প্রাকৃতিক আইন কোথাও তার সাথে সহযোগীতা করে না। তাই আগাছা বলে প্রকৃতির চাহিদার কারণে গাছের মালিক তাকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়। বিশ^ জগতের প্রতিটি অণুকণিকা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। পৃথিবী ও আকাশের প্রতিটি বস্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। জমিতে তার বীজ বপন করার চেষ্টা করলে জমি সবসময় তাকে উদগীরণ করার জন্য তৈরী থাকে। আকাশের দিকে তার শাখা-প্রশাখা বেড়ে উঠতে থাকলে আকাশ তাদেরকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। পরীক্ষার খাতিরে মানুষকে যদি নির্বাচন করার স্বাধীনতা ও কর্মের অবকাশ না দেয়া হতো তাহলে এ অসৎজাতের তাছটি কোথাও গজিয়ে উঠতে পারতো না। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে নিজের স্বাধীন ইচ্ছা ও প্রবণতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান করেছেন, তাই যেসব নির্বোধ লোক প্রাকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে লড়ে এ গাছ লাগাবার চেষ্টা করে তাদের শক্তি প্রয়োগের ফলে জমি একে সামান্য কিছু জায়গা দিয়েও দেয়, বাতাস ও পানি থেকে সে কিছু না কিছু খাদ্য পেয়েই যায় এবং এবং শূন্যও তার ডালপালা ছড়াবার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু জায়গা তাকে দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু যতদিন এ গাছ বেঁচে থাকে ততদিন তিতা, বিস্বাদ ও বিষাক্ত ফল দিতে থাকে এবং অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথেই আকস্মিক ঘটনাবলীর এক ধাক্কাই তাকে সমূলে উৎপাটিত করে। কৃষক ফলজ গাছের বীজ রোপণ করে কিন্তু আগাছার বীজ রোপণ না করার পরও সে অবৈধভাবে ফলজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে জায়গা করে সেও জেগে উঠে।

ফলজ গাছকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য সে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। ভালো ফল দানে সে শুধু বাঁধা গ্রস্থই করতে পারে। বুদ্ধিমান কৃষক যথা সময়ে নিরানীর মাধ্যমে তাকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলে। ফলে ফলজ গাছগুলো স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠে এবং ভালো ফলদান করে।
পৃথিবীর ধর্মীয়, নৈতিক, চিন্তাগত ও তামাদ্দুনিক ইতিহাস অধ্যয়নকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই কালেমায়ে তাউয়্যেবা তথা ভালো কথা এবং মন্দ কথার এ পার্থক্য সহজে অনুভব করতে পারে। সে দেখবে ইতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ভালো কথা একই থেকেছে। কিন্তি মন্দ কথা সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য। ভালো কথাকে কখনো শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলা যায়নি। কিন্তু মন্দ কথার তালিকা হাজারো মৃত কথার নামে ভরে আছে। এমনকি তাদের অনেকের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আজ ইতিহাসের পাতা ছাড়া আর কোথাও তাদের নাম নিশানাও পাওয়া যায় না। স্ব স্ব যুগে যেসব কথার প্রচণ্ড দাপট আজ সে সব কথা উচ্চারিত হলে মানুষ এই ভেবে অবাক হয়ে যায় যে, এমন পর্যায়ের নির্বুদ্ধিতাও মানুষ করেছিল।

তারপর ভারো কথাকে যখনই যে জাতি বা ব্যক্তি যেখানেই গ্রহণ করে সঠিক অর্থে প্রয়োগ করেছে সেখানেই তার সমগ্র পরিবেশ তার সুবাসে আমোদিত হয়েছে। তার বরকতে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি বা জাতিই সমৃদ্ধ হয়নি বরং তার আশপাশের জগতও সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু কোন মন্দ কথা যেখানেই ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে শিকড় গেড়েছে সেখানেই তার দুর্গন্ধে সমগ্র পরিবেশ পূতিগন্ধময় হয়ে উঠেছে এবং তার কাঁটার আঘাত থেকে তার মান্যকারীরা নিরাপদ থাকেনি এবং এমন কোন ব্যক্তিও নিরাপদ থাকতে পারেনি যে তার মুখোমুখি হয়েছে।

যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, অবিশ্বস্ততা, অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ, নাফরমানী ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করলো এবং নবীগণ যে আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ড এবং সারা জীবনের সমস্ত আমল শেষ পর্যন্ত এমনি অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি মূল্যহীন আগাছা বা এটি একটি ছাইয়ের স্তুপ, দীর্ঘদিন এক জায়গায় জমা হতে হতে তা পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘূর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেলো যে তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর তেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো তাদের কার্যক্রমের উপমা হচ্ছে এমন ছাই-এর মতো যাকে একটি ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের কোনই ফল লাভ করতে পারবে না।”(সুরা ইবরাহিম:১৮)

তাদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প-কল-কারখানা, মহা প্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ^বিদ্যালয়সমূহ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চাররুকলা-ভাস্কর্য-স্থাপত্যেও বিশাল ভাণ্ডার, এমনি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যবলী এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমন সব কাজ-কর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাই-এর স্তুপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘুর্ণিঝড় এ ছাই-এর স্তুপকে সম্পুর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং আখিরাতের জীবনে আল্লাহর মীযানে রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার জন্য তার একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।

Posted ১২:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(757 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.