বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

পরিবর্তন হচ্ছে কি বাংলাদেশের প্রতিবেশী নীতির?

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫

পরিবর্তন হচ্ছে কি বাংলাদেশের প্রতিবেশী নীতির?

বাংলাদেশসহ এশিয়ার প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের মানচিত্র

প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অগ্রাধিকার ও উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল ‘প্রতিবেশী নীতি (নেইবারহুড পলিসি)’ বজায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি সিদ্ধান্তে এটির পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানিদের স্বাগত জানানো এবং মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বাংলাদেশের দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় প্রতিবেশীদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি যত্নশীল। প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব রেখে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করার মৌলিক কর্মপন্থা অনেক পুরোনো।’

তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণ এবং মোংলা বন্দর আধুনিকায়নে চীনের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উভয় ক্ষেত্রে ভারতের আপত্তি আছে এবং তারা বিষয়টি বাংলাদেশকে একাধিকবার জানিয়েছে।’

ভারতের উদ্বেগ উপেক্ষা করে চীনের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় বাংলাদেশ বিবেচনা করতে পারে। তবে, দিল্লির বিষয়টি ভালো মতো নেবে না বলে তিনি জানান।

নেইবারহুড পলিসি

যেকোনও রাষ্ট্র অংশীদার বেছে নিতে পারে, কিন্তু প্রতিবেশী বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। কূটনীতিতে বলা হয়, ভৌগোলিকভাবে প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না। সেজন্য প্রতিটি দেশের কাছে প্রতিবেশী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের যে নেইবারহুড বা প্রতিবেশী পলিসি রয়েছে, সেখানে প্রতিবেশীদের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা বেগবান করার প্রয়াস নেওয়ার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। প্রতিবেশীদের সবসময় অন্য দেশের থেকে ভিন্ন চোখে দেখে থাকে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশীদের সমীকরণ কি, সেটিকেও বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে বাংলাদেশ। সে কারণে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের ওঠানামা প্রভাব ফেলে বাংলাদেশ ও ভারত অথবা বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্কে।

অন্যদিকে ভারতের নেইবারহুড পলিসি ‘গুজরাল ডকট্রিনের’ ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। সেখানে বলা আছে, প্রতিবেশীদের কাছে কিছু না পাওয়া গেলেও (রেসিপ্রসিটি) ভারত তাদের সহায়তা করবে, অর্থাৎ দেশটি ছাড় দিতে রাজি আছে। ভারতের কাছে প্রতিবেশীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশটির প্রতিটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে তাদের সবচেয়ে চৌকস কূটনীতিকদের রাষ্ট্রদূত হিসাবে পদায়ন করা হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন বা অন্য প্রতিবেশী দেশে কাজ করেনি, এমন কোনও কূটনীতিক ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হয়েছে, এমন ঘটনা বিরল।

সাম্প্রতিক পরিবর্তন

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সম্প্রতি চীন সফরের সময়ে দুটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছায় ঢাকা ও বেইজিং। এর মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা প্রকল্পে কাজ করার জন্য চীনা কোম্পানিকে স্বাগত জানানো এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মোংলা আধুনিকীকরণের জন্য চীনের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি। এই দুটি বিষয়েই ভারতের উদ্বেগ ও আপত্তি আছে।

বিষয়টির সঙ্গে ওয়াকিবহাল এমন একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের কাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে তাদের নিরাপত্তা এবং সে কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যেকোনও প্রকল্পে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে দিল্লি।’

উল্লেখ্য, তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের বিষয়টি ২০১১ থেকে ভারত নিষ্পত্তি করছে না এবং এটি নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ আছে। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে এ প্রকল্পে ভারত আগ্রহ দেখানোর ফলে চীনের সহযোগিতা থেকে সরে আসে বাংলাদেশ।

ওই কূটনীতিক বলেন, ‘তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত-চীন যৌথ উদ্যোগ। এরপরের অপশন হচ্ছে বাংলাদেশ-জাপান-নেদারল্যান্ড যৌথ উদ্যোগ। এরপরের অপশনটি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাস্তবায়ন।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের বিরোধিতার মুখে তিস্তা প্রকল্প চীনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে প্রতিবেশী নীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে এবং সেটির জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

অন্য আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে মোংলা বন্দরকে ফিজিবল করতে হলে নেপাল ও ভুটানের পণ্য ওই বন্দর দিয়ে আদান-প্রদান করতে হবে। চীন যদি মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, সেক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটানের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ভারত ট্রানজিট সুবিধা দেবে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন।’

কূটনীতির অন্যতম সফলতা

বাংলাদেশের কূটনীতির অন্যতম বড় সফলতা হচ্ছে, ‘এ দেশের মাটি অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না দেওয়ার নীতি’। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশ সবসময় এটি বজায় রেখেছে।

এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের জন্য নিরাপত্তা হচ্ছে রেডলাইন এবং এটি বাংলাদেশ সম্মান করে। এই নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে, এমন ধারণাও (পারসেপশন) তৈরি হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।’

অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান, এমন পারসেপশনও ভারতের জন্য ভালো নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সরকারসহ বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কিছু বিচ্ছিন্ন মহল থেকে ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র হিসাবে প্রচার করার যে চেষ্টা চলছে, সেটিও ভুল বার্তা দিচ্ছে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, এমন কোনও কাজ ঢাকা করছে না এবং সেটি দিল্লিকে মনে করিয়ে দেওয়া। অন্যদিকে, ভারতের মনে রাখা দরকার বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে, সেটি প্রতিবেশীদের জন্য সুখকর হবে না বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ও ভারত ২০১৪ সালে বন্ধুত্বপূর্ণ ও আপসে সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ কোর্টের মাধ্যমে মীমাংসা করেছিল। ওই সময়ে মোট ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চল। অন্যদিকে, ভারত পেয়েছিল ৫.৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল। ভারত এই রায় মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ওই রায় যদি ভারত না মানতো, তবে বাংলাদেশের পক্ষে কিছু করার ছিল না।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ থাকলে সব প্রতিবেশীর জন্য ভালো। বড় প্রতিবেশী হিসাবে ভারতের দায়িত্বও বেশি। তবে, একই সঙ্গে বাংলাদেশেরও মনে রাখতে হবে, যেকোনও কারণেই হোক, ভারতের উদ্বেগের জায়গায় হাত না দেওয়া।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Posted ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1756 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.