শরমিলি সারমিন লাভলী : | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
আমাদের সমাজে পরিবারগুলো সাধারণত তিন শ্রেণিতে বিভক্ত—উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গল্প, সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম আর সবচেয়ে বেশি আবেগ লুকিয়ে আছে মধ্যবিত্ত পরিবারে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ একবার লিখেছিলেন-“মধ্যবিত্তদের প্রতিনিয়ত সুখের অভিনয় করতে হয়।” আর এই মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান হয়ে জন্ম নেওয়া মানেই যেন এক ভিন্ন রকম জীবনের গল্প।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে কিংবা বড় মেয়ে জন্মেই যেন এক অদৃশ্য দায়িত্ব হাতে পায়। ছোটরা যেখানে নিজের শখের কথা খুলে বলতে পারে, বড় সন্তানের মুখে যেন সবসময় “আমার লাগবে না” কথাটাই আটকে থাকে। তাদের জীবন মানেই ব্যতিক্রম কিছু একটা।সবকিছু মানিয়ে চলতে হয় , আর এই মানিয়ে চলার অসাধারণ ক্ষমতা আর মমতা নিয়েই হয়তোবা জন্ম হয় তাদের।
বড় মেয়ে হয়তো পড়াশোনায় ভালো, কিন্তু বাবার দুশ্চিন্তার পাহাড় দেখে লেখাপড়ার মাঝপথেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। পিতামাতার দুশ্চিন্তা একটুখানি হালকা হয়, কিন্তু মেয়েটির জীবনে অনেক অপ্রকাশিত স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। আবার অনেকেই নিজের সুখ-স্বপ্নের সোনালি দিনগুলোকে সরিয়ে স্বামীর দেওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে ছোট ভাইবোনের পড়াশোনা বা বাবা-মায়ের চিকিৎসায় সাহায্য করে।
কখনও কখনও বড় মেয়েরা টিউশনি করে সংসারের হাল ধরে,নানাভাবে সহযোগীতা করে পরিবারকে। নিজের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েও পরিবারকে এগিয়ে রাখে সে।নিজের শখের কানে দুল, কিংবা নতুন শাড়ির ইচ্ছেগুলো চাপা পড়ে যায় দায়িত্বের ভাঁজে।
আনুষ্ঠানিকতা বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে বড় বোন হয়তো নিজে সাজার সময় সুযোগটুকু পায় না। ছোটদের সাজিয়ে, তাদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার মধ্যেই তার আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।
মায়ের যে কোন অসুস্থতায় সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে বড় মেয়ের কাছে । বড় মেয়েরা আসলে মা-এর ছায়া, বাবার ভরসা, সংসারের নিঃশব্দ শক্তি।
বড় ছেলেদের গল্পও আলাদা নয়।বড় ছেলে মানেই যেন সংসারের অদৃশ্য ছাতা।বৃষ্টির ফোঁটা নামার আগেই সেই ছাতা মাথার ওপরে মেলে ধরা হয়, কিন্তু খুব কম মানুষই খেয়াল করে কে ছাতাটা ধরে রেখেছে।
যে ছেলেটি টিউশনি অথবা চাকুরি করে মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছে,কেনা হয়না তার নতুন শার্ট বা জুতা।বন্ধুদের হাতে দামি আইফোন দেখে কেনার শখ বা সমুদ্রের ঢেউ দেখার ইচ্ছে কি তার হয় না?কিন্তু ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ,বোনের জামা,ভাইয়ের মোবাইল,মায়ের ঔষধ,বাবার ঋণ এসব কিছুর কাছেই তার ইচ্ছেগুলো ম্লান।
বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও ছোট বোনের বিয়ে না দিয়ে কিভাবে করবে বিয়ে?অথবা নিজে যখন ভাবে,বাবা একা কি করে সব সামলাবে?বাবা মায়ের আশা ভরসার সন্তান বড় সন্তানকে… তখন নিজের জীবনের সোনালি দিনের চিন্তা বাদ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে হয় জীবন যুদ্ধে। তাদের জীবন তাই সংগ্রাম আর দায়িত্বের অন্য নাম। তারা জানে না বিদেশ ভ্রমণের রোমাঞ্চ, দামি পোশাকের গর্ব, কিংবা নিজের মতো করে জীবন সাজানোর আনন্দ। তবু তারা হাসিমুখে বয়ে বেড়ায় দায়িত্বের ভার।।জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সংসারের দায়ভার এড়ানো যায় না……আবার জড়িয়েও সবার মন পাওয়া যায় না।তবুও দিন শেষে প্রাপ্তির খাতা শূন্য নয়।
ত্যাগেই আসল সুখ।অনেক অনেক সুখ।ত্যাগেরও একটা নিঃশব্দ সৌন্দর্য আছে, যা শুধু বড় সন্তানরাই বোঝে।
Posted ১:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh