সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার করুণ পরিণতি

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার করুণ পরিণতি

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার।”(সুরা ফুরকান:৪৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“তুমি কি কখনো সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো যে তার প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে খোদা বানিয়ে নিয়েছে আর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন, তার দিলে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং চোখে আবরণ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাকে হিদায়াত দান করতে পারে? তোমরা কি কোন শিক্ষা গ্রহণ করো না?”(সুরা জাসিয়া:২৩) প্রবৃত্তির কামনাকে মাবুদে পরিণত করার মানে হচ্ছে, তার পূজা করা।

আসলে এটাও ঠিক মূর্তি পূজা করা বা কোন সৃষ্টিকে উপাস্য পরিণত করার মতই শিরক। আবু উমামাহ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন: “এ আকাশের নীচে যতগুলো উপাস্যের উপাসনা করা হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপাস্য হচ্ছে এমন প্রবৃত্তির কামনা করা যার অনুসরণ করা হয়।”(তাবরানী) এ জন্য আল্লাহর রাসুল সা: সব সময় প্রবৃত্তির কামনা বাসনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। যিয়াদ ইবনে ইলাকাহ রহ: হতে চাচার সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সা: বলতেন: “হে আল্লাহ! আমি গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কর্ম ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই”।(তিরমিযি:৩৫৯১, কিতাবুদ দাওয়াত আন রাসুলিল্লাহ, বাবু দু’আয়ে উম্মি সালামাহ, মিশকাত:২৪৭১ আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটি হাসান গরীব) যিয়াদ ইবনে ইলাকাহর চাচার নাম ইবনে মালিক আত তাগলিবী রা:, তিনি রাসুলুল্লাহ সা: এর সাহাবী)

যারা নিজেদের কামনাকে বুদ্ধির অধীনে রাখে এবং বুদ্ধি ব্যবহার করে নিজের জন্য ন্যায় ও অন্যায় পথের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়, সে যদি কোন ধরনের শিরকী বা কুফরী কর্মে লিপ্ত হয়েও পড়ে তাহলে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনা যেতে পারে।

কিন্তু প্রবৃত্তির দাস হচ্ছে একটি লাগামহীন উট। তার কামনা তাকে যেদিকে নিয়ে যাবে সে পথহারা হয়ে সেদিকেই দৌঁড়াতে থাকবে। তার মনে ন্যায় ও অন্যায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে ফারাক করার এবং একটিকে ত্যাগ করে অন্যটিকে গ্রহণ করার কোন চিন্তা আদৌ সক্রিয় থাকে না। তাহলে কে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনতে পারে। আর ধরে নেয়া যাক, যদি সে মেনেও নেয় তাহলে তাকে কোন নৈতিক বিধানের অধীন করে দেয়া কোন মানুষের সাধ্যয়ত্ত নয়। এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে বুঝিয়ে সাময়িকভাবে সত্য পথে আনা হলেও আবার সে আগের পথেই চলে যায়। অনেকটা কম্পাসের কাটার মতো, কম্পাসের কাঁটা জোর করে ধরে রাখার পর ছেড়ে দিলে সেটি তার নির্ধারিত স্থানে চলে যায়। প্রবৃত্তির পূজারীরাও অনেকটা সে রকমই। দুনিয়ার লালসা একবার পেয়ে বসলে, তৎক্ষণাৎ সে দিকে ছুটে চলে।

যারা কামনা-বাসনার দাস হয়েছে অর্থাৎ প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে খোদা বানিয়েছে, নিজের ইচ্ছা আকাংখার দাস বনে যায়। তার মন যা চায় তাই সে করে বসে যদিও আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তার মন যা চায় না তা সে করে না যদিও আল্লাহ তা ফরয করে দিয়েছেন। ব্যক্তি যখন এভাবে কারো আনুগত্য করতে থাকে তখন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তার উপাস্য আল্লাহ নয় বরং সে এভাবে যার আনুগত্য করছে সে-ই তার উপাস্য। সে মুখে তাকে ইলাহ এবং উপাস্য বলুক বা না বলুক কিংবা মূর্তি তৈরী করে তার পূজা করুক বা না করুক তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ দ্বিধাহীন আনুগত্যই তার উপাস্য হওয়ার জন্য যতেষ্ট।

এভাবে কার্যত শিরক করার পর কোন ব্যক্তি শুধু এই কারণে শিরকের অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারে না যে, সে যার আনুগত্য করছে মুখে তাকে উপাস্য বলেনি এবং সিজদাও করেনি। সমস্ত মুফাসসিরিন এই ব্যাখ্যাই করেছেন। ইবনে জারীর এর অর্থ বর্ণনা করেছেন এইভাবে যে, সে তার কামনা-বাসনাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। প্রবৃত্তি যা কামনা করেছে সে তাই করে বসেছে। না সে আল্লাহর হারামকৃত বস্তুকে হারাম বলে মনে করেছে, না তার হালালকৃত বস্তÍকে হালাল বলে গণ্য করেছে। আবু বকর জাসসাস এর অর্থ বণনা করেছেন,“কেউ যদি যেমনভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে সে ঠিক তেমনিভাবে প্রবৃত্তির আকাংখার আনুগত্য করে।” যামখশারী এর ব্যখ্যা করেছেন এভাবে “সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার প্রতি অত্যন্ত অনুগত। তার প্রবৃত্তি তাকে যেদিকে আহবান জানায় সে দিকেই চলে যায়। সে এমনভাবে তার দাসত্ব করে যেমন কেউ আল্লাহর দাসত্ব করে।”

প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা এক ধরনের তাগুতও বটে। ইসলাম কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় তারা ইসলামের অনুসরণ বাদ দিয়ে তাগুতের অনুসরণ করে। তাই প্রবৃত্তিও তাগুত। তাগুত মানুষকে আল্লাহর বিধান ও তাঁর নির্দেশাবলী অমান্য করে অন্য কারো বিধান ও নেতৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য করে। সে মুখে আল্লাহর শরীক বলে ঘোষনা না দিলেও আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে তাকে শরীক করারই শামিল। ঐ ভিন্ন সত্তাদের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করেও যদি আল্লাহর হুকুমের মোকাবিলায় তাদের হুকুম মেনে চলা হয় তাহলেও মানুষ শিরকের অপরাধে অভিযুক্ত হবে। কাজেই এখানে শয়তানদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে, দুনিয়ায় সবাই তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করছে কিন্তু এ অভিশাপের পরও যারা তাদের অনুসরণ করে কুরআন তাদের সবার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনছে যে, তোমরা শয়তানদেরকে আল্লাহর শরীক করে রেখেছো। এটা বিশ্বাসগত শিরক নয় বরং কর্মগত শিরক এবং কুরআন একেও শিরক বলে।

বলা হয়েছিল যে, প্রবৃত্তি মানুষের এক প্রকার তাগুত। তাগুত মানে সীমা লংঘনকারী। সে আল্লাহর দেয়া সীমারেখাকে তছনছ করে নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে। শয়তান হলো, সবচেয়ে বড় তাগুত। মানুষ শয়তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজা অর্চনা করে না বা তাকে সরাসরি আল্লাহর মর্যাদায় অভিসিক্তও করে না। এ অর্থে কেউ শয়তানকে মাবুদ বানায় না, এ কথা ঠিক। তবে নিজের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা আশা-আকাংখা ও চিন্তা-ভাবনার লাগাম শয়তানের হাতে তুলে দিয়ে যেদিকে সে চালায় সেদিকে চলে এবং এমনভাবে চলা যেন সে শয়তান তার প্রভু-এটাই তো শয়তানকে মাবুদ বানাবার একটি পদ্ধতি। এ জন্য দেখবেন ব্যক্তি সালাত ও সাওম পালন করছে আবার ওজনে কম দিচ্ছে বা ওজনে বেশী নিচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল মিশাচ্ছে ও মিথ্যা বা বাক পটুতার মাধ্যম কাজ নিজের দিকে নিয়ে নিচ্ছে, মানুষের ক্ষেতের সীমানা ঠেলছে, গায়ের জোরে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করছে, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পদ অবৈধভাবে লুটে নিচ্ছে এবং বিদেশে পাচার করছে। সবচেয়ে মারাত্মক হলো, সালাত, সাওমসহ যিকির আসকারে মগ্ন, দেশের মানুষ যাদেরকে ইসলামের সৌল এজেন্ট মনে করে, মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম ও মুহতামিম কিন্তু প্রবৃত্তি তাকে এমন সব দলের লেহন করতে বাধ্য করে, যাদের মৌলিক দর্শন ও মতবাদ হচ্ছে কুফরী ও শিরক। এ গুলো শয়তান তার প্রবৃত্তির কাছে মামুলী ব্যাপার হিসাবে উপস্থাপন করে। ফলে সে তার প্রবৃত্তিরই উপাসনা করে। প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা তার গভীর চিন্তা করার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। অথচ নিয়মিত কুরআন-হাদীস পড়ছে কিন্তু এ দুয়ের আবেদন তাদের অন্তরকে নাড়া দিতে পারে না। কারণ প্রবৃত্তির কামনা বাসনায় তার অন্তর বন্ধ হয়ে গেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে আদম সন্তানেরা! আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু এবং আমারই বন্দেগী করো এটিই সরল-সঠিক পথ। কিন্তু এ সত্ত্বেও সে তোমাদের মধ্য থেকে বিপুল সংখ্যককে গোমরাহ করে দিয়েছে, তোমাদের কি বুদ্ধি জ্ঞান নেই?” (সুরা ইয়াসীন: ৬০-৬২)

ইমাম রাযী তার তাফসীরে কবীরে এ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেছেন, “তোমার সামনে যদি কোন লোক আসে এবং তোমাকে কোন জিনিসের হুকুম দেয় তাহলে দেখো তার এ হুকুম আল্লাহর হুকুমের অনুসারী কি না। অনুসারী না হলে শয়তান সে লোকদের সহযোগী হয়েছে। যদি এ অবস্থায় তুমি তার আনুগত্য করো তাহলে তুমি তার ও তার শয়তানের ইবাদাত করলে। অনুরূপভাবে তোমার নিজের প্রবৃত্তি যদি তোমাকে কোন কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করে তাহলে এ ক্ষেত্রে শরীয়াতের দৃষ্টিতে সে কাজটি করার অনুমতি আছে কি না দেখো। অনুমতি না থাকেলে তোমার প্রবৃত্তি নিজেই শয়তান হয়ে গেছে অথবা শয়তান তার সহযোগী হয়েছে এ অবস্থায় যদি তুমি তার আনুগত্য করো তাহলে তুমি তার ইবাদাত করলে।” সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে তিনি আবার বলেছেন, কিন্তু শয়তানের ইবাদত করার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। কখনো এমন হয়, মানুষ একটি কাজ করে এবং তার অংগ-প্রতংগের সাথে সাথে তার কন্ঠও তার সহযোগী হয় এবং মনও তার সাথে অংশ গ্রহণ করে। আবার কখনো এমনও হয়, অংগ প্রতংগের সাহায্যে মানুষ একটি কাজ করে কিন্তু অন্তর ও কন্ঠ সে কাজে তার সহযোগী হয় না। কেউ কেউ এমন অবস্থায় একটি গোনাহ করে, যখন তার অন্তর তাতে সায় দেয় না এবং তার কন্ঠ সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, এ অবস্থায় সে ম্বীকার করে আমি এ খারাপ কাজ করেছি।

এ হচ্ছে নিছক বাইরের অংগ-প্রতংগের সাহায্যে শয়তানের ইবাদাত। আবার এমন কিছু লোকও আছে যারা ঠাণ্ডা মাথায় অপরাধ করে এবং মুখেও নিজেদের এ কাজে আনন্দ ও সন্তোষ প্রকাশ করে। এরা ভেতরে বাইরে শয়তানের ইবাদাতকারী।”(তাফসীরে কবীর,৭ খণ্ড, পৃষ্ঠা:১০৩-১০৪)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এসব লোক কি আল্লাহর এমন কোন শরীকে বিশ্বাস করে যে এদের জন্য দীনের মতো এমন পদ্ধতি নির্ধারিত করে দিয়েছে আল্লাহ যার অনুমোদন দেননি?”(সুরা শূরা:২১) এখানে সেই সব শরীকদের কথা বলা হয়নি, যাদেরকে মানুষ নযর-নিয়াজ দেয় বা পূজা অর্চনা করে, বরং এখানে সেই সব মানুষকে বুঝানো হয়েছে মানুষ যাদেরকে আদেশ দানের ক্ষেত্রে অংশীদার বানিয়ে নিয়েছে, যাদের শেখানো ধ্যান-ধারণা, আকীদা-বিশ্বাস, মতবাদ এবং দর্শনের প্রতি মানুষ বিশ্বাস পোষণ করে।

যাদের দেয়া মূল্যবোধ মেনে চলে যাদের পেশকৃত নৈতিক নীতিমালা এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদন্ডসমূহ গ্রহণ করে, যাদের রচিত আইন কানুন, পন্থা ও বিধি বিধানকে নিজেদের রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থা এমনভাবে গ্রহণ করে যেন এটাই সেই শরীয়াত যার অনুসরণ তাদের করা উচিত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা এবং অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যেমন শিরক এটাও ঠিক তেমনি শিরক।

Posted ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(842 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.