বাংলাদেশ ডেস্ক : | শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
কক্স এন্টারপ্রাইসের দ্য আটলান্টা জার্নাল-কনস্টিটিউশনের বর্তমান চেয়ারম্যান জিম কেনেডিফাইল। ছবি : রয়টার্স
সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর গণমাধ্যমের একটি জোরালো ভূমিকা রয়েছে সারা বিশ্বেই। যুক্তরাষ্ট্রও তার ব্যতিক্রম নয়। রুপার্ট মারডক ও মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো মার্কিন ধনকুবেররা সংবাদমাধ্যম ব্যবসা থেকেই নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আবার অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মতো অন্য খাতে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা পার্শ্ব বিনিয়োগ হিসেবে সংবাদ প্রকাশনা কিনেছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকগুলোর একাংশ বা পুরোটার মালিক এই ধনকুবের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অনেক সাময়িকী, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইনভিত্তিক সংবাদ সংস্থারও মালিক তাঁরা। কখনো কখনো ধনকুবের ব্যবসায়ীরা নিজেদের মালিকানাধীন সংবাদ প্রতিষ্ঠানের খবর প্রকাশকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম খাতে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে এ আয়োজন।
মাইকেল ব্লুমবার্গ : যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদমাধ্যম খাতে সবচেয়ে ধনী ও বেশি বিনিয়োগকারী ব্যক্তি হলেন মাইকেল ব্লুমবার্গ। তিনি ব্লুমবার্গ এলপি ও ব্লুমবার্গ মিডিয়ার মালিক। তিনি ১৯৮১ সালে চার্লস জেগার ও টমাস সেকুন্ডার সঙ্গে যৌথভাবে ব্লুমবার্গ এলপি প্রতিষ্ঠা করেন। আর ব্লুমবার্গ এলপি ২০০৯ সালে বিজনেস উইক ম্যাগাজিন কিনে নেয়। নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আট মাস পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাইকেল ব্লুমবার্গ নিজের কোম্পানিতে ফিরে আসেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্লুমবার্গের দুই হাজারের বেশি সাংবাদিক রয়েছেন। ২০২৪ সালে ব্লুমবার্গ ‘প্রেসিডেন্ট মেডেল অব ফ্রিডম’ পুরস্কার পান। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত মাইকেল ব্লুমবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ হলো প্রায় ১০ হাজার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
রুপার্ট মারডক : রুপার্ট মারডক। প্রভাবশালী কেব্ল টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজের মূল প্রতিষ্ঠান ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স’–এর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর গণমাধ্যমমালিকদের অন্যতম একজন। মারডক তাঁর ছেলে লাকলান মারডকের সঙ্গে টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্সের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি নিউজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে নিউজ করপোরেশনের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান মারডক অবসরজীবন কাটাচ্ছেন। আর তাঁর মিডিয়া সাম্রাজ্য সামলাচ্ছেন তাঁর সন্তানেরা। যদিও তিনি এখনো তাঁর মিডিয়া সাম্রাজ্যের প্রধান অংশীদারদের মধ্যে একজন। বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মালিকানায় রয়েছে নিউজ করপোরেশন। এ ছাড়া এই পরিবার পাঁচটি দেশে ১২০টি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে।
ডোনাল্ড নিউহাউস : বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অ্যাডভান্স পাবলিকেশনসের মালিকানা পান ডোনাল্ড নিউহাউস ও তাঁর ভাই স্যামুয়েল ‘সি’ নিউহাউস। এটি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, কেব্ল টিভি ও বিনোদনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২৫টি শহরে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের মালিক অ্যাডভান্স পাবলিকেশনস। এটি দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন সংবাদপত্র নেটওয়ার্ক। অ্যাডভান্স পাবলিকেশনসের মালিকানাধীন মিডিয়া কোম্পানি ‘কনডে নাস্ট’। এর অধীন প্রকাশিত হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ওয়্যার্ড, ভ্যানিটি ফেয়ার, দ্য নিউইয়র্কার ও ভোগ। ‘সি’ নিউহাউস ২০১৫ সালে কনডে নাস্টের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর দুই বছর পর নিউইয়র্কে তিনি মারা যান।
কক্স পরিবার : যুক্তরাষ্ট্রের ধনী ও প্রভাবশালী কক্স পরিবারের মালিকানাধীন কক্স এন্টারপ্রাইজ দ্য আটলান্টা জার্নাল–কনস্টিটিউশনসহ বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও গণমাধ্যম সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জেমস কক্স ১৮৯৮ সালে নিজের প্রথম সংবাদপত্র ডেটন ওহাইও ইভনিং নিউজ কিনেছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান জিম কেনেডির দাদা। কক্স মিডিয়া গ্রুপের পরিচালনায় রয়েছে দ্য জার্নাল–কনস্টিটিউশন এবং আরও ৬টি দৈনিক পত্রিকা, ডজনখানেক দৈনিক নয় এমন প্রকাশনা, ১৪টি টেলিভিশন স্টেশন, ১টি স্থানীয় কেব্ল চ্যানেল ও ৫৯টি রেডিও স্টেশন।
জেফ বেজোস : অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ২০১৩ সালে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কিনেছিলেন ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করার পর থেকে বেজোসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তিনি অ্যামাজনের জন্য করছাড়ের সুবিধা নিতে এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাজে লাগাতে ওয়াশিংটন পোস্ট ব্যবহার করছেন। সে সময় বেজোস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। পত্রিকাটির সাংবাদিকেরাও আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন, ওয়াশিংটন পোস্ট অ্যামাজনের করসংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়েও নিয়মিতভাবে খবর প্রকাশ করে।
জন হেনরি : খেলাধুলাবিষয়ক উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ব্যবসায়ী জন হেনরি ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে সাত কোটি মার্কিন ডলারে দ্য বোস্টন গ্লোব কিনে নেন। আরেক মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোস দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কেনার কয়েক দিন পর হেনরি এই পত্রিকা কেনার সিদ্ধান্ত নেন। দ্য গ্লোব এর আগে ২০ বছর ধরে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মালিকানাধীন ছিল। হেনরি দ্য গ্লোব কেনার সময় বলেছিলেন, পত্রিকার ‘স্পোর্টস কভারেজে’ প্রভাব ফেলার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই।
মর্টিমার জাকারম্যান : ধনকুবের আবাসন ব্যবসায়ী মর্টিমার জাকারম্যান যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া কোম্পানি ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের মালিক। তিনি ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের চেয়ারম্যান এবং একই নামে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। ১৯৮৪ সালে তিনি এটি কেনেন। বর্তমানে অনলাইন ম্যাগাজিন হিসেবে কাজ করা ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট সেরা কলেজ, সেরা হাসপাতাল, সেরা স্কুলের মতো র্যাঙ্কিংভিত্তিক খবর প্রকাশ করে পরিচিতি অর্জন করেছে।
প্যাট্রিক সুন শিয়ং : প্যাট্রিক সুন শিয়ং দক্ষিণ আফ্রিকান ও মার্কিন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, চিকিৎসা–গবেষক এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন–বিষয়ক শল্য চিকিৎসক। ২০১৮ সালের জুনে তিনি দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস কিনে নেন। তিনি পত্রিকাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স ও ফোর্বসের তথ্যানুসারে, বর্তমানে সুন শিয়ংয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। তাঁকে লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী চিকিৎসকদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরাহ্ উইনফ্রে : টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, টক শো উপস্থাপক ও অভিনেত্রী অপরাহ উইনফ্রে। তাঁর মালিকানাধীন অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক (ওডব্লিউএন) একটি মার্কিন বহুজাতিক বেসিক কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, যা ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি চালু হয়েছে। এটি কার্যত ডিসকভারি হেলথ চ্যানেলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। এর এক মাস পর ফিটটিভির সঙ্গে মিলে ডিসকভারি ফিট অ্যান্ড হেলথ (বর্তমানে ডিসকভারি লাইফ নামে পরিচিত) হিসেবে পুনর্গঠিত হয়। ওডব্লিউএন পরিচালিত হয় ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারির নেটওয়ার্ক ডিভিশন ও হারপো প্রোডাকশনসের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে।
শারি এলিন রেডস্টোন : শারি এলিন রেডস্টোন একজন প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম নির্বাহী ও ব্যবসায়ী। তিনি ন্যাশনাল অ্যামিউজমেন্টসের চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পরিবার প্যারামাউন্ট গ্লোবাল ও এর সহযোগী সংস্থাগুলোর ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাধিকার রাখে, যার মধ্যে রয়েছে সিবিএস, কমেডি সেন্ট্রাল, বিইটি, নিকেলোডিয়ন, এমটিভি ও প্যারামাউন্ট পিকচার্স। সিবিএস করপোরেশন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক মিডিয়া কোম্পানি। তাদের মূল আগ্রহ ছিল বাণিজ্যিক সম্প্রচার, প্রকাশনা ও টেলিভিশন প্রোডাকশন। সিবিএস করপোরেশন ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ভায়াকমের সঙ্গে একীভূত হয়ে ভায়াকমসিবিএস (বর্তমানে প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স নামে পরিচিত) গঠন করে।
Posted ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh