বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
গতকাল বুধবার উইজকনসিনের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির ৮জন প্রভাবশালী নেতা এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রাইমারির জন্য এটি প্রথম বিতর্ক। গত সোমবার রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি এই বিতর্কের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আট সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন না, যদিও তিনি দৃশ্যত ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমেছেন বলে মনে হচ্ছিল।
আট সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে তিনি না থাকায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে যে, রিপাবলিকান পার্টির নীতি নির্ধারকগণ আগামী বছরের নির্বাচনে তাকে আর প্রার্থী হিসেবে রাখছেন না।
মিলওয়াকির বিতর্কে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা হচ্ছেন; ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, যিনি প্রায় সকল নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, ট্রাম্পের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি, আরকানসাসের সাবেক গভর্নর অ্যাস হাচিনসন, সাউথ ক্যারোলিনার দুই বিশিষ্ট রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট ও নিকি হ্যালে, বিবেক রামস্বামী ও নর্থ ডাকোটার সাকেব গভর্নর ডাউ বারগাম।
সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বারা দেশ ও দেশবাসীর কি ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি কি কি ভুল করেছেন, এ সম্পর্কে কঠোর সমালোচনা করেছেন ছয়জন সাবেক বা বর্তমান গভর্নর, একজন কৃষ্ণাঙ্গ। দু’জন প্রার্থীর জন্ম ভারতীয় ইমিগ্রান্ট পরিবারে। আটজনের মধ্যে মহিলা প্রার্থী একজন এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আছেন একজন। রিপালিকানদের মধ্যে আরো কিছু সংখ্যক নেতা ছিলেন, যারা প্রাইমারিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছিলেন।
কিন্তু রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল যে, সোমবার রাত নয়টার মধ্যে প্রার্থীদের কমপক্ষে ৪০,০০০ চাঁদা দানকারীর তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। যারা তা করতে পেরেছেন, সেই আটজনের তালিকায় রাখা হয়েছে। তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির শর্ত পূরণ করতে পারেননি, তারা হচ্ছে মিশিগানের পেরি জনসন. মায়ামির সাবেক মেয়র ফ্রান্সিস এক্স সুয়ারেজ এবং টেলিভিশন টকশো হোস্ট ল্যারি এল্ডার।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছেন। পুন:নির্বাচিত হতে ব্যর্থতার পর থেকে তার নানা বক্তব্য ও পদক্ষেপ এবং তিনি নারী কেলেঙ্কারিসহ অর্থনৈতিক হেরফের করার বহুসংখ্যক মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে রিপাবলিকান পার্টিতে তার প্রভাব অনেকটা হ্রাস পাওয়া সত্বেও তিনি বড় ধরনের সমর্থক-ভিত্তিক জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে তার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু দলীয় প্রাইমারিতে তাকে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হবে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হয় যে, দল যাকেই মনোনয়ন প্রদান করবে, প্রাইমারিতে পরাজিত সকলকে তাকেই সমর্থন করতে হবে। কমপক্ষে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী টেক্সাসের সাবেক কংগ্রেসম্যান উইলিয়াম হার্ড এই প্রতিশ্রুতিপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন যে, রিপাবলিকান নীতি নির্ধারকগণ যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দলের মনোনয়ন প্রদান করে তাহলে তিনি ট্রাম্পের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হবেন। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি মিলওয়াকির বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে চাননি, কারণ তিনি জানেন যে, তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভোটে এগিয়ে আছেন। মিলওয়াকিতে যে আটজনের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে তার ফক্স নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। মডারেটর হিসেবে ছিলেন ব্রেট বেয়ার ও মার্থা ম্যাককুলান।
যে কারণে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থীদের বিতর্ক এড়াতে চান
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নির্ধারিত বিতর্কে তিনি অংশ নেননি। তাঁর দাবি, নাগরিকেরা তাঁকে খুব ভালো করে চেনেন। এ কারণে বিতর্কে অংশ নিয়ে জনগণের কাছে তাঁর নিজেকে নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নামা নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইপর্বের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে প্রথম বিতর্কটির আয়োজন করা হবে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই বিতর্কে অংশ নেবেন না। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, তিনি সফল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মার্কিন জনগণের কাছে তিনি খুব জনপ্রিয়। ট্রাম্প মনে করেন, জনগণ যখন তাঁকে ভালোভাবে চেনে, তখন তাঁর আর মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বিতর্কে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি বিতর্কে অংশ নেব না।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘মানুষ জানে আমি কে, আমি কতটা সফল প্রেসিডেন্ট ছিলাম।’ ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প সম্প্রতি পরিচালিত বিভিন্ন জনমত জরিপের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। বলেন, গত ২০ আগস্ট সিবিএস নিউজের জরিপটিসহ বিভিন্ন জরিপে রিপাবলিকান অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর চেয়ে তিনি অনেক বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
সিবিএসের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ট্রাম্পকে ভোট দিতে চান। ট্রাম্পের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে ভোট দিতে চান ১৬ শতাংশ মানুষ। জরিপে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্ভাব্য ভোট পাওয়ার হার এক অঙ্কের ঘর পেরোতে পারেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ডিস্যান্টিস দুর্বল পাখির মতো নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছেন। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হয়ে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প।
তাঁর এই জয় বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। ২০২০ সালের নির্বাচনেও ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। এ নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। কিন্তু পরাজয় স্বীকার না করে ট্রাম্প নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলেন। তিনি এখন পর্যন্ত তাঁর পরাজয় স্বীকার করেননি।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh