ফিলাডেলফিয়া : | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
ছবি : সংগৃহীত
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১২ এপ্রিল সোমবার পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ফিলাডেলফিয়া সিটিতে ব্যতিক্রমধর্মী এক সমাবেশে মার্কিন কংগ্রেসের ৩ প্রভাবশালী সদস্য বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মানের উন্নয়নে সহকর্মীদের নিয়ে একযোগে কাজের অঙ্গিকার করলেন। একইসাথে কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবি বাংলাদেশি-আমেরিকানদের প্রশংসার পাশাপাশি অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও স্যালুট জানানো হলো। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশকে কীভাবে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিণত করা হয়েছে, দীর্ঘ ৫০ বছরের পথ চলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তারও প্রসঙ্গও উঠেছে এই অনুষ্ঠানে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ফিলাডেলফিয়া সিটির সাবেক ডেপুটি মেয়র ড. নীনা আহমেদের উদ্যোগে ক্র্যান কমিউনিটি সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অনুষ্ঠান শুরু হয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে। এরপর বাংলাদেশের এগিয়ে চলা আলোকে ভিডিও প্রদর্শনের সময় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের প্রসঙ্গও উপস্থাপিত হয়। ১৮ কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশ শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে কীভাবে এগুচ্ছে, সমগ্র জনগোষ্ঠি উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন-সে প্রসঙ্গও বাদ যায়নি।
কংগ্রেসে ওয়েজ এ্যান্ড মীন্স কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসম্যান ডুইট ইভান্স শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ২০১৯ সালে আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। সে সময় প্রত্যক্ষ করেছি বাংলাদেশ কীভাবে উন্নতি করছে। বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছেন। উন্নয়নে আমরাও অংশিদার এবং পারস্পরিক সহযোগিতার দিগন্ত প্রসার করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনও অঙ্গিকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ সফরকালে আরো দেখেছি, সমগ্র জনগোষ্ঠি উন্নয়ন-অভিযাত্রায় সামিল হয়েছেন। সকলকে নিয়েই উন্নয়ন ঘটাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রেও সেটি করতে চাচ্ছেন বাইডেন প্রশাসন। কংগ্রেসম্যান ইভান্স উল্লেখ করেন, সকলকে যদি ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তাহলে কোনকিছুই অসাধ্য থাকে না।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সে পথেই হাঁটছে। তিনি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে ফিলাডেলফিয়ায় স্বাগত জানান। কংগ্রেসে জুডিশিয়ারি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসওম্যান ম্যারি গ্যা শ্যানিয়ন উপস্থিত সকলকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘নিজেকে সবসময় বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে মনে করি। আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি বাংলাদেশিই আমাকে সর্বক্ষণ অভিভূত করে রাখায় বাংলাদেশ সম্পর্কে চমৎকার একটি ধারণা তৈরী হয়েছে হৃদয়পটে।’ শ্যানিয়ন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। সেটিকে আরো ফলপ্রসূ করতে আমরা বাংলাদেশি আমেরিকানদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।’ করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে এই কংগ্রেসওম্যান বলেন, আমরা নিরাপদ জীবনে ফিরতে চাই। এজন্যে সকলকে টিকা নিতে হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় আমাদেরকে আরো বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও নিজের চীফ অব স্টাফের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠির প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদে ওয়েজ এ্যান্ড মীন্স কমিটির অপর সদস্য কংগ্রেসম্যান ব্রেন্ডেন এফ বয়েল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি নতুন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকেও সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন ফিলাডেলফিয়াবাসী। এ সময় রাষ্ট্রদূত শহীদুল বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক সহায়তার প্রশংসা করে সামনের দিনগুলোতে আরো কার্যকর সহায়তা কামনা করেন কংগ্রেসের মাধ্যমে। এ জন্য তিনি কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে অনুরোধ জানান অনুষ্ঠানে থাকা কংগ্রেসম্যানদের প্রতি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি-আমেরিকানদেরও সোচ্চার থাকার আহবান জানান রাষ্ট্রদূত শহীদুল। নিজ নিজ কংগ্রেসম্যানের সাথে দেন-দরবারের মধ্য দিয়ে এই কাজটি তারা করতে পারেন বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূত শহীদুল ফিলাডেলফিয়াস্থ প্রবাসীদের প্রশংসা করে বলেন, মূলধারার রাজনীতিতে তাদের জোরালো সম্পর্ক প্রকারান্তরে বাংলাদেশকেই সমৃদ্ধ করছে মার্কিন প্রশাসনে।
এ সময় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন দেলওয়ারে ভ্যালির প্রেসিডেন্ট ড. ইবরুল হাসান চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, মিলবোর্ন সিটির কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, আপার ডারবি সিটির কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক, মো. হারেস, স্টেট গভর্ণরের এশিয়ান প্যাসিফিক আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা মো. আনাম চৌধুরী, ডা. ফাতেমা আহমেদ, ট্যাক্সি ড্রাইভার্স এসোসিয়েশনের নেতা তোজাম্মল হক, নীরব সমাজ-সংগঠক আহসান নসরতউল্লাহ, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কন্সাল) হাবিবুর রহমান প্রমুখ। নেপথ্য সংগঠক ছিলেন প্রিয়া আহমেদ এবং তামির হারপার। সকলেই কাঁধে কাধ মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে কাজের অঙ্গিকার করেন এবং মার্কিন প্রশাসনেও বাংলাদেশের ইস্যুতে সোচ্চার থাকার কথা বলেন। অনুষ্ঠানের হোস্ট ও সঞ্চালক ড. নীনা আহমেদ বলেন, যেখানে যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, কখনো ভুলতে পারিনা প্রিয় মাতৃভূমি, বাঙালিত্বকে। সে তাগিদেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চাই।
Posted ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh