| বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
ভারতের তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে এবং সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ তার অনেক মন্ত্রী ও দলের নেতারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করার পর থেকে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধী বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ বেড়ে গেছে। এর সর্বশেষ ধাপ বিভিন্ন এলাকায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে কথিত বাংলাদেশিদের পুশ ইন।
কোনো যাচাই বাছাই ও আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ চুপিসারে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। বিএসএফের এই অপতৎপরতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলেও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে বিএসএফের একতরফা আধিপত্য ছিল। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়নের পর সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। তবে মোদির বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসী মনোভাব অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা, তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিজিবি ও সীমান্তের মানুষও তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
তারা পাল্টা জবাব দিচ্ছে। বিএসএফের যেকোনো অন্যায় আচরণের তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পিছপা হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারও ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ও উত্তেজনার মধ্যেও ভারতের বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চলমান। ভারতে বসবাসরত বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি পাবর্ত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি দুর্গম সীমান্ত দিয়ে গুজরাট থেকে আনা অর্ধশতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আইনি প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত প্রমাণ পেলে তাদের গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে পুশইন করাদের মধ্যে ভারতে রেজিস্টার্ডকৃত কয়েকজন রোহিঙ্গাও পাওয়া গেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারত বাংলাদেশের সাথে পুশইন করে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে। এক সপ্তাহের কম ব্যবধানে আবারো ৭৮ জন বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলমানকে লঞ্চে করে রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়িয় এলাকায় নামিয়ে দিয়ে গেছে বিএসএফ। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তাদেরকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে। এসব মানুষ গুজরাটের বস্তি থেকে বিমান যোগে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় এনে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্দি রাখা হয়েছিল বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়।
এমন আরো কয়েকশ’ মানুষ বিএসএফ’র হাতে আটক আছে, যাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মান্দার বাড়িয়ায় ফেলে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকের স্ত্রীÑসন্তান ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক কিংবা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশে পুশইনের শিকার সবাই বাংলাদেশের নাগরিক নন। রোহিঙ্গা এবং আসাম থেকেও বাংলাভাষী মুসলমানদের ধরে এনে বাংলাদেশে পুশইন করছে বিএসএফ।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বিএসএফ’র এসব তৎপরতাকে ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। জনবসতিহীন দুর্গম সীমান্তগুলোকে টার্গেট করে গত কিছুদিনে এ ধরণের পুশইনের শিকার ২০২ জনকে বিজিবি হেফাজতে নেয়ার তথ্য দিয়েছেন বিজিবি ডিজি। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন রোহিঙ্গা বা রাখাইনের নাগরিক বলে জানা যায়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিজেপি সরকারের মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা নতুন কিছু নয়। এ ধারাবাহিকতায় কাশ্মিরের পেহেলগাঁওয়ে বন্দুক হামলার দায় চাপিয়ে পাকিস্তানে সে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। পাকিস্তানের পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়ায় সেই সংঘাত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে রূপ নেয়। এতে ভারতের বিমান বাহিনীসহ সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের সাথে আপস করে যুদ্ধ বিরতী করতে বাধ্য হয়। বলা যায়, এ যুদ্ধে মোদি চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন।
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি যুদ্ধ বাঁধাতে চেয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন। এই অপমান ও হতাশা ঢাকতেই এখন তিনি বাংলাদেশকে সফট টার্গেটে পরিণত করেছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাসহ সন্দেহজনক অভিবাসিদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বার্তা পাঠানো হলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না। পাকিস্তানের সাথে দ্রুত যুদ্ধবিরতীর বিষয়টি বিজেপির নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না।
তারা একে পাকিস্তানের সাথে পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মোদির সমালোচনায়ও মুখর হয়েছে। ফলে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে মোদির অবস্থান নাজুক হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য পুশইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে ঝামেলা পাকিয়ে জনদৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার নতুন খেলা শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি, সীমান্তের জনগণ ও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। সীমান্তে বিজিবির ব্যর্থতা আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। মোদির এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা রোধে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh