| বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হয়ে গেল গত ৭ জানুয়ারি। একতরফা নির্বাচনটি ছিল ২০১৪ সালেও। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের কারসাজিতে প্রহসনে পরিণত হয় নির্বাচনটি। ফলে সংসদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন ক্ষমতাসীন জোটের দখলে চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর ৯৬ শতাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ক্ষমতাসীনেরা এই অভূতপূর্ব কারচুপির মাধ্যমে প্রমাণ করে ক্ষমতাসীন দলকে সরকারে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এ দেশে। সাংবিধানিক বৈধতা থাকবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও ।দেশে ১৯৭৩ সাল থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন। এবারের নির্বাচনটা আবারও ক্ষমতাসীন সরকারের অধীন হওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়েছে ২৯৮টি আসনের মধ্যে । কিন্তু ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যাঁরা জয়ী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬ জন ছাড়া ৫৬ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হওয়ায় ২৭৮টি আসনে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হয়েছে বলা চলে। এবারের একতরফা নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে এ কৌশল ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেখা গেল, অনেক অঞ্চলে প্রায় সারা দিন ভোটের কেন্দ্রগুলো জনবিরল ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে দীর্ঘ ভোটার লাইন দেখা গিয়েছিল, এবার তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। প্রকাশিত ফলাফল থেকেও দেখা যাচ্ছে, যেসব আসনে কারসাজি হয়নি, সেখানে ভোটের অনুপাত ২০ শতাংশের আশপাশে ছিল। বিশেষত, ঢাকা নগরী ও আশপাশের জেলাগুলোয় এ রকম ভোটার অনুপাত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দেড় থেকে আড়াই লাখ বা তারও বেশি ভোট যেসব প্রার্থী পেয়েছেন, সেখানে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে কি না, সেটি দেখার বিষয়।
নির্বাচনী অনিয়ম ও কারচুপির এই সংস্কৃতি থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যেই ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস হওয়ার পর তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী বিপর্যয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে চরিত্রগতভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ক্ষমতাসীন দলবিরোধী হয়ে গেছে। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করলেন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক, কিন্তু আরও দুটি নির্বাচন ওই ব্যবস্থায় হতে পারে। সুযোগ বুঝে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাই বাতিল করে দিল ক্ষমতাসীন দল।
তখন থেকেই বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহালকে আন্দোলন-সংগ্রামের মূল দাবিতে পরিণত করে আসছে। তাদের সেই আন্দোলন–সংগ্রাম এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচন করে ফেলল। বোঝা প্রয়োজন, গণ-অভ্যুত্থানে বাধ্য না হলে কোনো সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করবে না। জেনেশুনে পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় কি কোনো সরকার চাইতে পারে?
অথচ দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন কখনোই ‘নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা’ পাবে না এ দেশে। এ ধরনের নির্বাচন আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে পারছে বারবার, কিন্তু জনগণের কাছে সরকার পরিবর্তনের কোনো বৈধ সুযোগ বা সাংবিধানিক অধিকার থাকছে না। দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব যেন কোনো এক অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে গেছে। অর্থনীতিতে মহাদুর্যোগ চলছে। রিজার্ভ কমছে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে রাষ্ট্রীয় লেনদেন। গত ৫০ বছরে এত বড় চ্যালেঞ্জ দেশের অর্থনীতির সামনে আসেনি। কিন্তু মন্ত্রী-আমলাদের কথায়-আচরণে তার কোনো প্রতিফলন নেই। অপব্যয়, দুর্নীতি কমানোর কোনো কঠোর অঙ্গীকার কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh