বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ০৪ আগস্ট ২০২৩
বিএমএএনএ’র নব নির্বাচিত কর্মকর্তাবৃন্দ।
উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিসেয়শন নর্থ আমেরিকা-(বিএমএএনএ)। অলাভজনক, অরাজনৈতিক, শিক্ষা ও সেবামূলক এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে মিশিগানে। প্রতি দু’বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির নির্বাচন। গত ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত ২০২৩-২০২৫ সালের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) নির্বাচিত হয়েছেন ডাঃ আয়েশা সিকদার এবং সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছেন ডাঃ ইউসুফ আল মামুন।
এবারের নির্বাচনে ডাঃ আয়েশা-ডাঃ মামুন প্যানেলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল ডাঃ মুজিব-ডাঃ আতাউল প্যানেল। একজন সদস্য ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যায় ডাঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার ও ডাঃ আতাউল চৌধুরী তুষারের প্যানেল। বিএমএএনএ’র ৪২ বছরের ইতিহাসে ডাঃ আয়েশা সিকদার প্রথম নারী যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ।
তার প্যানেলের অন্যান্য নির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন ট্রেজারার ডাঃ আহমদ মুর্শেদ, সায়েন্টিক সেক্রেটারি তানভীর বি হোসেন, সর্বোচ্চ ভোটে সোস্যাল এন্ড কালচারাল সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছেন ডাঃ ফেরদৌসী শিল্পী। ইয়াং ফিজিশিয়ান সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছেন ডাঃ সাকিফ হাসান। একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত দুই সদস্য হচ্ছেন ডাঃ আদিবা আনজুম গীতি ও ডাঃ মাহমুদা আলম কলি। অপর প্যানেল থেকে নির্বাচিত একমাত্র সদস্য ডাঃ মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডাঃ আয়েশা সিকদার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন ২০২৫ সালে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান সময়কালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডাঃ বশীর আহমেদ। ডাঃ মুজিব-ডাঃ আতাউল প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন ডাঃ ফজলুল ইউসুফ, ডাঃ কাজী রহমান সজল, ডাঃ কানিজ বানু হিমি, ডাঃ আবুল কালাম আজাদ ও ডাঃ আমিনুল ইসলাম।
লসএঞ্জেলেসে গত ২৭ থেকে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত বিএমএএনএ’র ৪২তম সম্মেলনে নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৯ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অনলাইনে ভোট গ্রহণ শুরু হয় দু’সপ্তাহ আগেই। ফলাফল ঘোষণায় অংশ নেন-নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান ডাঃ কবির চৌধুরী এবং অপর চার সদস্য ডাঃ মোঃ কালাম খান, ডাঃ রুমানা সবুর, ডাঃ রুবিনা নাজিব ও ডাঃ মাহফুজুর রহমান। নির্বাচনকে ঘিরে উভয় প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করে ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনা। প্রচার-প্রচারনাও ছিলো নজিরবিহিন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আপাতত: স্বস্থিবোধ করছেন সাধারণ চিকিৎসকগণ। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ৭২০জন ভোটারের মধ্যে মোট ভোট পড়েছে ৬৩১টি।
এদিকে লসএঞ্জেলেসে তিনদিনব্যাপী অনুর্ষ্ঠিত সম্মেলনে চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের প্রায় ৫শত সদস্য অংশ নেন। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ছাড়াও ছিলো শিক্ষা সেমিনার। বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরীকে মরনোত্তর ‘ন্যাশনাল হিরো’ এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বেশ কয়েকটি এওয়ার্ড দেয়া হয় কয়েকজনকে। সম্মেলনে অতিথি বর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডাঃ মোহাম্মদ ইমরান, লস এঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল, স্থানীয় কংগ্রেস ওম্যান কেটি পর্টার।
গতবছর ৪১তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কার্যত দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএমএএনএ । বিভেদ-বিদ্বেষ এতোটা প্রকট হয়ে উঠে যে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, ব্যক্তি ইগু ও নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিলো বিএমএএনএ। নানাবিধ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় বিএমএএনএ স্পষ্ট দু’টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিভেদ-বিভ্রান্তি ও কাঁদা ছুড়াছুড়ি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে সংগঠনের তহবিল ও নির্বাচন নিয়ে তারা বার কয়েক জড়িয়ে পড়েন মামলা মোকদ্দমায়। মাত্রাহীন পর্যায়ে পৌছায় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ।
৪০তম সম্মেলনকে ঘিরে বিভক্তি অনেকটাই চূড়ান্ত হয়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিএমএএনএ’র ১৮টি শাখা গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় বিএমএএনএ প্রতি বছর আয়োজন করে থাকে একটি জাতীয় কনভেনশন। প্রতিষ্ঠার চার দশক পর ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪০টি সম্মেলন অনুর্ষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭টি শহরে। এসব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ঝালাইয়ের সুযোগ অবারিত হতো। পাশাপাশি পরিচালিত হতো শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও মানবিক দিক দিয়ে বিষয়ে কর্মকান্ড। দেশ ও প্রবাসে দুযোগ ও দুর্বিপাকে আর্থিক সহায়তার জন্য একটি তহবিলও রয়েছে সংগঠনটির।
এছাড়া সীমিত পরিসরে হলেও বাংলাদেশী আমেরিকান চিকিৎসকদের মাঝে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বদেশ থেকে চিকিৎসা পেশার সন্ধানে আসা তরুণদেরকে সহায়তা করে আসছে বিএমএএনএ। সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ সংগঠনটিতে মহল বিশেষের নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রবণতা, আত্মকেন্দ্রীকতা ও প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক অভিলাষ বিএমএএনএকে ক্রমান্বয়ে বিবাদমান ও কোন্দলমুখী করে তুলে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। সংবিধানের সদস্যকরণ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মূল বিএমএএনএ’র বাইরে আরো একটি সমান্তরাল সংগঠন সৃষ্টিতে খোরাক যোগায়।
Posted ৭:০১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh